মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক রাজ্য সরকারগুলির উদ্দেশে একটি অ্যাডভাইজরি জারি করেছে। সেখানে লকডাউনের বর্ধিত সময়কাল ৩ মে পর্যন্ত নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ ও তদারকি সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রক বলেছে, “ভাইরাস ছড়ানো আটকাতে বারবার সাবানের ফেনা দিয়ে হাত ধোয়া সবচেয়ে সফল ও কার্যকর পদ্ধতি বলে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে সংগ্রহযোগ্য জল নিরাপদ সমস্ত নাগরিকদের কাছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে মেডিক্যাল স্যানিটাইজার না পাবার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে বিশেষ করে পৌঁছনো সুনিশ্চিত করতে হবে।”
জলের ব্যবস্থাই নেই, হাত ধোবেন কী করে ওঁরা?
অ্যাডভাইজরিতে কী বলা হয়েছে?
মন্ত্রক রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, বোর্ড ও কর্পোরেশনগুলিকে যেখানে জলের ঘাটতির ম্ভাবনা রয়েছে সেখানে ব্যবস্থা নেবার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে। বিশেষ নজর দেবার কথা বলা হয়েছে ত্রাণ শিবির, কোয়ারান্টিন এলাকা, হাসপাতাল, বৃদ্ধাবাস ও বস্তিতে।
রাজ্য সরকারের বলা হয়েছে ক্লোরিন ট্যাবলেট, ব্লিচিং পাউডার, সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশন ও ফটকিরির মত শোধনকারী রাসায়নিক কত পরিমাণে লাগতে পারে তা খতিয়ে দেখতে। এসব দ্রব্য জরুরি পণ্যের তালিকায় রাখা হয়েছে।
মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক, থুথু ফেলা নিষিদ্ধ- ভারতের নয়া বিধিসমূহ
রাজ্য সরকারগুলিকে জলের উৎস নির্দিষ্ট সময়ান্তরে পরীক্ষা করবার জন্য গ্রামে ফিল্ড টেস্ট কিট পাঠাতে বলা হয়েছে এবং সারাক্ষণ জল সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
মানুষ এ সময়ে জল সংগ্রহ করবার জন্য যদি অনেকে মিলে এক জায়গায় আসেন, সেখানে সামাজিক দূরত্ব বিধি মানবার সুবিধার জন্য জল সরবরাহের সময়সীমা বাড়াতে বলা হয়েছে। এ সম্পর্কিত অভিযোগ প্রতিবিধানের ব্যবস্থাপনাতেও জোর দিতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যালান্স শিট- কোথা থেকে অর্থ আসে, কোথায় খরচ হয়
ভারতের জল সমস্যা
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হাত ধোয়ার বিষয়টি সবচেয়ে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হলেও দেশে দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার জল বহু মানুষের কাছে পৌঁছয় না। এ দেশে তাই হাত ধোয়ার মাধ্যমে করোনার সঙ্গে লড়াই চ্যালেঞ্জের মুখে।
২০১৭ সালে লোকসভায় জল সম্পদ মন্ত্রক (২০১৯ সালে এই মন্ত্রক জলশক্তি মন্ত্রকের সঙ্গে মিশে যায়) এক লিখিত উত্তরে জানিয়েছিল, “মাথা পিছু জলের লভ্যতা ২০০১ সালে ১৮২০ কিউবিক মিটার থেকে ২০১৭ সালে ১৫৪৫ কিউবিক মিটারে নেমে এসেছে এবং ২০২৫ সালে তা কমে ১৩৪১ ও ২০৫০ সালে আরও কমে ১১৪০ কিউবিক মিটারে পর্যবসিত হতে পারে।”
মন্ত্রক জানিয়েছিল, “বার্ষিক মাথাপিছু জলের লভ্যতা যদি ১৭০০ কিউবিক মিটারের নিচে হয়, তাহলে তাকে জল সংকট পরিস্থিতি বলে গণ্য করা হয় তা ১০০০ কিউবিক মিটারের নিচে চলে গেলে জলের আকাল বলে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন স্থান ও অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতের ভিন্নতার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলের লভ্যতা জাতীয় গড়ের অনেক নিচে এবং তাকে জল সংকট বা জলের আকাল বলে গণ্য করা যায়।”
২০১৮ সালের রিপোর্টে জল বিষয়ক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ওয়াটারএইডের হিসেবে ভারত ছিল বাড়ির কাছে পরিষ্কার জলের অভাবের তালিকার প্রথম দশে, ১৬.৩ কোটি মানুষের কাছে সেই লভ্যতা ছিল না।
তবে ওই রিপোর্টেই সরকারি প্রচেষ্টার উল্লেখ করে বলা হয়েছে “(ভারত) অধিকাংশ মানুষের কাছে পরিষ্কার জল পৌঁছবার ব্যাপারে বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী দেশ, কিন্তু তাদের জলস্তর নেমে যাওয়া, খরা, কৃষি ও শিল্পের চাহিদা, দূষণ এবং জলসম্পদ পরিচালনায় দুর্বলতার মত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়।”
সংবিধানে জল
জলশক্তি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দেশের সব নদীই যেহেতু বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে, সে কারণে নদীজলের বিধি ও উন্নয়ন মাঝে মাঝেই রাজ্যের মধ্যে পারাক ও বিরোধের কারণ হয়ে ওঠে। সংবিধানে জল রাজ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।
ভারতীয় সংবিধানের ২৪৬ নং অনুচ্ছেদে বিভিন্ন বিষয় রাজ্য ও কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছে তিনটি তালিকা অনুসারে, কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা এবং যৌথ তালিকা।
রাজ্য তালিকার ১৭ নম্বরে রয়েছে জল। বলা হয়েছে, “জল, অর্থাৎ, জল সরবরাহ, সেচ, ক্যানাল, নালা ও বাঁধ, জল সংরক্ষণ ও জলশক্তি প্রথম তালিকার ৫৬ নম্বরে রয়েছে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন