Advertisment

Explained: দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর, জেনে নিন বিস্তারিত

সংস্কৃতি মন্ত্রক তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, মূর্তিটি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি। ঐতিহ্যগত কৌশল এবং আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে তা তৈরি করা হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Netaji Subhas Chandra Bose

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একটি মূর্তি উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জেট ব্ল্যাক গ্রানাইট মূর্তিটি দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের পূর্ব দিকে গ্র্যান্ড ক্যানোপির নীচে উন্মোচিত হল। বুধবারই মূর্তিটি বসানোও হয়েছিল।

Advertisment

মূর্তিটি কত বড়?

২৮ ফুট লম্বা। দোতলা বাড়ির চেয়েও উঁচু। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি ভারতের অন্যান্য স্মারক মূর্তির মান অনুযায়ী এটি বেশ ছোট। যেমন, স্ট্যাচু অফ ইউনিটিই তো প্রায় ৬০০ ফুট লম্বা। কিন্তু, গ্র্যান্ড ক্যানোপির উচ্চতার জন্য এই মূর্তির আকারও সীমিত করতে হয়েছে। মূর্তিটি ২৮০ টন ওজনের গ্রানাইট পাথর দিয়ে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে। এই মূর্তির ওজন ৬৫ টন বা ৬৫ হাজার কেজি। ২৬ হাজার ঘণ্টায় শিল্পীদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল।

নেতাজির মূর্তিটি সেই জায়গায় উন্মোচিত হবে, যেখানে তাঁর হলোগ্রাম মূর্তিটি চলতি বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী পরাক্রম দিবসে উন্মোচন করেছিলেন। ২৩ জানুয়ারি, নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে পালিত হয়েছে পরাক্রম দিবস। তার আগে ২১ জানুয়ারি, মোদী বলেছিলেন যে নেতাজির একটি গ্রানাইট মূর্তি ইন্ডিয়া গেটে স্থাপন করা হবে, তাঁর প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চিহ্ন হিসাবে।

এই গ্রানাইট ব্লক কোথা থেকে এসেছে?

১৪০টি চাকা সহ একটি ১০০ ফুট লম্বা দৈত্যকার ট্রাক বিশেষভাবে গ্রানাইট মনোলিথের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যাতে তেলঙ্গানার খাম্মাম থেকে ১,৬৬৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে নয়াদিল্লিতে এসেছে এই গ্রানাইট। সংস্কৃতি মন্ত্রক তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, মূর্তিটি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি। ঐতিহ্যগত কৌশল এবং আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে তা তৈরি করা হয়েছে। ভাস্করদের দলের নেতৃত্বে ছিলেন মহীশূরের বিখ্যাত শিল্পী অরুণ যোগীরাজ। তিনিই এর আগে আদি শংকরাচার্যের ১২ ফুট মূর্তিটি তৈরি করেছেন। সেই মূর্তি মোদীই ২০২১ সালে কেদারনাথে উন্মোচন করেন।

ইন্ডিয়া গেট ক্যানোপির তাৎপর্য কি?

ইন্ডিয়া গেট থেকে প্রায় 150 মিটার পূর্বে, সি-হেক্সাগনের কেন্দ্রে, ৭৩ ফুটের ছাউনি আছে। যা মহাবলীপুরমের ষষ্ঠ শতাব্দীর মণ্ডপ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এডউইন লুটিয়েন্সের ডিজাইন করা ছাউনিটি ১৯৩৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ইন্ডিয়া গেট কমপ্লেক্সে যোগ করা হয়েছিল এবং তার নীচে ৫০ ফুট উচ্চতার মার্বেল মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল।

মূর্তিটি, পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেকের পোশাকে এবং ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউনে দেখানো হয়েছিল। সার্জেন্ট চার্লস জ্যাগারকে এই মূর্তি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি যুদ্ধের স্মারক তৈরির একজন সুপরিচিত ভাস্কর ছিলেন। তাঁর কাজ ব্রিটেন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে। যদিও গ্র্যান্ড ক্যানোপি এবং মূর্তি বসানোর কাজ শেষ হয়েছিল জ্যাগারের মৃত্যুর কয়েক বছর পর।

স্বাধীনতার পরে, পঞ্চম জর্জের মূর্তিটির ব্যাপক বিরোধিতা হয়েছিল। কারণ, এই মূর্তি দেশের রাজধানীতে একেবারে মূল কেন্দ্রে ছিল। তবুও, এটি আরও দুই দশক ধরে ওই জায়গাতেই ছিল। পরে, জর্জের মূর্তিটি ১৯৬৮ সালে উত্তর দিল্লির যমুনায় আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাস টার্মিনাসের কাছে করোনেশন পার্কে স্থানান্তরিত হয়।

publive-image

করোনেশন পার্ক হল ১৮৭৭ সালে দিল্লি দরবারের স্থান। যেখানে রানি ভিক্টোরিয়াকে গ্রেট ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের রানির উপাধি ছাড়াও ভারত সম্রাজ্ঞী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯১১ সালে, রাজা পঞ্চম জর্জ এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জর্জের বদলে গ্র্যান্ড ক্যানোপির নীচে কার মূর্তি বসবে, তা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়। প্রথমে ঠিক হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি বসানো হবে। পরে ঠিক হয়, জওহরলাল নেহরুর মূর্তি বসবে।

১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর ইন্দিরার মূর্তি বসানোর কথা ভাবা হয়। যদিও তা বসেনি। সেই সময় ইতিহাসবিদরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, শূন্যতা দেশের অতীতের স্মারক হিসেবে কাজ করবে। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে, ছাউনিটি খালি ছিল। যার জন্য গ্র্যান্ড ক্যানোপির নামই হয়ে গিয়েছিল 'খালি ছাউনি'।

আরও পড়ুন- নীতীশ-হেমন্তকে নিয়ে বৃহত্তর জোট, লোকসভার বাদ্যি বাজিয়ে দিলেন মমতা

অনুষ্ঠানে কী হল?

নেতাজির মূর্তি উন্মোচনের জন্য ছাউনিতে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী শঙ্খ ভাদায়ম এবং কেরালার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চ ভাদ্যম এবং চন্দের মাধ্যমে ঘোষণা করা হল। মূর্তিটির উন্মোচনের সঙ্গে চলল, 'কদম কদম বাড়ায়ে যা'। এই গান নেতাজির জাতীয় সেনাবাহিনীর গান। সেই সেনাবাহিনী প্রথমে রাসবিহারী বোস ১৯৪২ সালে তৈরি করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে সুভাষ বোস সেই বাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। বাহিনীতে গান্ধী, নেহেরুর নামে রেজিমেন্টের নাম রাখা হয়। এছাড়াও মৌলানা আজাদ এবং নেতাজির নিজের নামে নামকরণ হয় রেজিমেন্টের। এছাড়়াও ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাইয়ের নামে একটি মহিলা রেজিমেন্টের নাম রাখা হয়েছিল।

দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে ৫০০ জন নৃত্যশিল্পী একটি সাংস্কৃতিক উত্সব প্রদর্শন করলেন কর্তব্য পথে। এই রাস্তার কিছুদিন আগেও নাম ছিল রাজপথ। ইন্ডিয়া গেটের কাছে স্টেপ অ্যাম্ফিথিয়েটারে প্রধানমন্ত্রী ও সেই ৩০ জন শিল্পীকে দেখানো হল, যাঁরা উপজাতীয় লোকশিল্প যেমন সম্বলপুরি, পান্থি, কালবেলিয়া, করগাম এবং ডামি ঘোড়া, নাসিক ঢোল, তাসা এবং লাইভ মিউজিকের সঙ্গে তাঁদের শিল্পকলা পরিবেশন করলেন। ১৯৪৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পণ্ডিত শ্রী কৃষ্ণরতন জঙ্করজির লেখা মঙ্গলগান উপস্থাপন করলেন পণ্ডিত সুহাস বশী ও তাঁর সম্প্রদায়।

Read full story in English

netaji modi India Gate
Advertisment