আলোর উৎসবেই বঙ্গ রাজনীতির আকাশে আঁধার। খসে পড়েছে বাংলার রাজনীতির অন্যতম নক্ষত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। 'এভারগ্রিন' এই মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা একডালিয়ার কর্তারাও। হঠাৎই যেন অন্ধকারময় দক্ষিণ কলকাতার এই পুজো কমিটি। না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন কমিটি ও ক্লাবের মূল কর্তা।
একডালিয়ায় কালীপুজোর মণ্ডপ রয়েছে। হয়েছে পুজোও। কিন্তু, মণ্ডপের চেনা ছবি উধাও। চারপাশে শোকের ছায়া। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে সুব্রত মুখোপাধ্যায় আর নেই। দল, মত নির্বিশেষে একডালিয়া যেন অভিভাবকহীন। চোখের কোণে জল প্রত্যেকের।
আরও পড়ুন- ‘প্রিয়দা থাকলে হয়তো কংগ্রেসে ফিরতাম,’ সুব্রতর অজানা কথা
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই একডালিয়া চত্বরে ছন্নছাড়া পরিবেশ। সবার মুখেই 'দাদা'র কথা। সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও একডেলিয়ার পুজো যেন সমার্থক। মাস গড়ায়নি, দুর্গাপুজোর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যিনি নিজের হাতে পরিচালনা করলেন তাঁর এমন চলে যাওয়া কেউ মানতে পারছেন না। একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো কমিটির সম্পাদক অভিষের আগারওয়াল বলছিলেন যে, 'ভাবনা থেকে শুরু করে ভাসান পর্যন্ত সবটাই কাকুক পরিকল্পনা। সব সামলাতেন নিজের হাতে। উনি যেভাবে পথ দেখাতেন আমরা শুধু তা রূপায়ণ করতাম। তাতেই মানুষ একডালিয়ার পুজোকে ভালোবেলেছে। এখন কাকু নেই ভাবতে পারছি না। পুজোর যে কী হবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।'
পাশে বসেছিলেন গৌতম মুখোপাধ্যায়। যিনি গত কয়েক দশক ধরে একডালিয়া এভারগ্রীনের দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত। সুব্রতবাবুর নাম উঠতেই তাঁর চোখে জল। বললেন, 'দাদাকে হারালাম। সুব্রত দা নেই এটাই ভাবতেই পারছি না। ভুল হচ্ছে বোধহয়, এটাই সবসময় মনে হচ্ছে।' শুধ গৌতমবাবুর নয়, এই পরিস্থিতি একডালিয়ান প্রায় সবরাই।
আরও পড়ুন- ইন্দিরার স্নেহধন্য, সিদ্ধার্থের প্রিয়পাত্র, মমতার শ্রদ্ধেও- একনজরে বর্ণময় সুব্রত
একডালিয়া মানেই ঐতিহ্য, সাবেকিয়ানা। গোটা শহর যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থিমের মণ্ডপে তখন, সুব্রতবাবুর প্রয়াসেই ৬৭ বছরের একডালিয়ায় চিরাচরিত পুজো। মায়ের চণ্ডীরূপ। মণ্ডপও গড়ে ওঠে নানা মন্দিরের আদলে। যা দেখতে পুজোর কয়েকটা দিন কাতারে কাতারে মানুষ একডালিয়ামুখী হয়ে থাকে। সাধারণ পুজোর সকাল, সন্ধ্যে মণ্ডপের আশেপাশেই থাকতেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তবে, নিরাপত্তার আতিশয্যে নয়, পাড়ার পুজো কমিটির কর্তা হিসাবেই সব খেয়াল রাখতেন তিনি। কেউ কথা বলতে চাইলে নিরাশ করতেন না। এটাই যেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম ইউএসপি। এই গুণেই তিনি সবার প্রিয়পাত্র।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন একডালিয়ার মধ্যমণি। তাঁর উপস্থিতি মানেই আড্ডা আর হই হই। হরেক রকমের দেদার গল্প। থেমে গেল সব। 'এভারগ্রিন' মানুষটিকে হারিয়ে অভিভাবকহীন হল একডালিয়া।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন