Kolkata: পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের ভিড় এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাঙ্গের বিষয়। কিন্তু করোনা যোদ্ধা থেকে পুলিশ এবং প্রশাসন এই ভিড়েই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। দেশের ১৬ টি রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ওমিক্রন ছড়িয়েছে। দিল্লিতে জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা। একাধিক রাজ্যে কার্যকর নাইট কার্ফু।
এই আবহে বাংলায় ওমিক্রন আক্রমণ উদ্বেগের না হলেও, খোলা ময়দান রাখতে নারাজ নবান্ন। সেই ইঙ্গিত সোমবার দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বড়দিনের ভিড় বর্ষবরণের রাতেও ফিরবে। এটাই এখন আশা-আশংকার দোলাচলে রেখেছে প্রশাসনকে। আর এই ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনও প্ল্যান-বি নেই তাদের কাছে। কেন, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেরিয়ে কোথায় গলদ বের করার চেষ্টা করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। জানা গিয়েছে, ২৪ কিংবা ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় যে ভিড় দেখা গিয়েছে, প্রতিবছর সেই ভিড় পার্কস্ট্রিটে হয়। যেহেতু এখন করোনা আবহ, তাই জমায়েতটা বেশি চোখে পড়েছে। এবং ভাইরাল হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে বড়দিন উদযাপনের ব্যবস্থা করে ধন্যবাদ কুড়িয়েছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু এই পুলিশেরই একটি সূত্র বলছে, সেদিন যারা পথে ছিলেন অধিকাংশ গণপরিবহন নির্ভর এবং শহরতলির বাসিন্দা। অর্থাৎ ট্রেন বাস বা মেট্রোয় যাতায়াত করেন। সঙ্গে যোগ হয়েছিল পরেরদিন রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিন। অর্থাৎ কাজে যোগ না দেওয়ার একটা বিষয় কাজ করেছে।
এদিকে ২৫-৩১ ডিসেম্বর উৎসব আবহ হলেও থাকে না কোনও বাড়তি মেট্রো বা লোকাল ট্রেন। আর করোনাকালে কলকাতা মেট্রো সময় কমিয়েছে রাতের ট্রেনের। ৯.৪০-এ শেষ মেট্রো ছাড়ে দুই অন্তিম স্টেশন দমদম এবং নিউ গড়িয়া থেকে। পাশাপাশি কমবেশি ১১.৪০-১১.৫০ নাগাদ শেষ লোকাল ট্রেন ছাড়ে শিয়ালদহ এবং হাওড়া ডিভিশন থেকে। তাই উৎসবের রোশানাইয়ে ভেসে শেষ মেট্রা বা ট্রেন এবার অনেকে মিস করেন। সেদিন পার্কস্ট্রিটে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য এসেছে। ফলে বাড়তি ভাড়ার ফাঁদে পা দিয়ে ওলা/উবের ভরসায় না থেকে তারা বেশি রাত পর্যন্ত শহরে পুলিশি ঘেরাটোপে থাকাই নিরাপদ মনে করেন। এছাড়াও কিছু মানুষ আছেন যারা ব্যক্তিগত দুই চাকা/চার চাকায় শহরতলি থেকে কলকাতায় ঢোকেন। তাই যেহেতু তাঁদের কাছে বাড়ি ফেরার পরিবহণ ছিল, সে কারণে বেশি রাত পর্যন্ত তারা পার্ক স্ট্রিটে থেকে যান।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডবল টিকাকরনের আত্মবিশ্বাস। সব মিলিয়ে করোনা বিধিতে একটু ছাড় পেয়েই পথে নেমেছে বঙ্গবাসী। যদিও কলকাতা মেট্রো বা পূর্ব রেল সূত্রে খবর, বর্ষবরণের রাতের জন্য তাদের বিশেষ ট্রেন চালানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত রাজ্যের থেকে সুপারিশ পেলেই তারা অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। যেমনটা দুর্গাপুজো কিংবা কালীপুজোর সময় হয়ে থাকে। কিন্তু বর্ষবরণের জন্য এখনও কোনও সুপারিশ রাজ্যের তরফে আসেনি।
তাই শুক্রবার সন্ধ্যায় বা বেশি সন্ধ্যায় যারা পথে নামবেন তারা অনেকেই রাত্রিযাপন প্রিয় শহরেই করবেন। খুব ভোরে প্রথম ট্রেনে বা গঙ্গায় সূর্যোদয় দেখে গন্তব্যে পৌঁছনোর পরিকল্পনা তাঁদের। এদিকে, যেহেতু ২৫ ডিসেম্বর ছিল শনিবার এবং পরদিন রবিবার অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটি। তাই আরও বেশি জমায়েত ছিল মধ্য কলকাতা কিংবা পার্ক স্ট্রিট, অকাডেমি চত্বরে। একই তত্ত্ব প্রযোজ্য ৩১-শে রাতে। পরেরদিন শনিবার এবং রবিবার। তাই একই উৎসাহ নিয়ে সেদিনও এবং পয়লা জানুয়ারি সকাল থেকেই পথে মানুষ নামবে এটাই সম্ভাবনা। আর এই উৎসাহে ভাঁটা টানার কোনও প্ল্যান-বি প্রশাসনের নেই। কারণ এই মুহূর্তে কোনও করোনাবিধি রাজ্যে কিংবা কলকাতা শহরে কার্যকর নেই। তাই তারা ছেড়ে দিয়েছেন মানুষের সচেতনতার উপর। তবে এই অনিয়ন্ত্রিত জমায়েতের জেরে ওমিক্রন কতটা ফনা বাড়াতে পারবে? সেই আশংকায় এখন দিন গুনছেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সামান্য বেড়েছে সংক্রমণের হার। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন করোনা যোদ্ধারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন