মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একে অপরকে ছাড়া আমরা কেউ চলতে পারি না। আমাদের যা কিছু এই সমাজকে ঘিরেই। কিন্তু, এই সমাজেই কে আমাদের বন্ধু, আর কে আমাদের শত্রু, অনেক সময়ই আমরা তা বুঝতে পারি না। আর, সেই কারণেই মাঝেমধ্যেই আমাদের সকলকেই কমবেশি বিপদের মধ্যে পড়তে হয়। সেই বিপদ থেকে রেহাই পেতে জীবনে বন্ধু চেনা অত্যন্ত জরুরি। এটা আমাদের প্রায় প্রত্যেককেই অভিভাবকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তার মধ্যেই বহু মানুষ আছে, যাঁদের বারবার আঘাত পেয়েও যেন চেতনা জাগে না। যে ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি বারবার আঘাত খাচ্ছেন, তাঁর কাছেই আবার তিনি দৌড়ে যান। আর, তার ফলে বারেবারে সেই ব্যক্তিকে আঘাতে জর্জরিত হতে হয়। আর, এই ব্যাপারটা নিয়ে অভিভাবকের মত ঘোরতর আপত্তি প্রকাশ করে গিয়েছেন মহামতি চাণক্য। ভারতীয়দের জন্য তাঁর লেখা নীতিশাস্ত্রে চাণক্য লিখেছেন, 'সকৃদ্ দুষ্টং সখায়ং যঃ পুনঃ সন্ধাতুমিচ্ছতি। স মৃত্যুমেব গৃহ্নিতি হস্তেন ভুজগং যথা।'
যার বাংলা করলে হয়, বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর সঙ্গে যে পুনরায় সদ্ভাব স্থাপন করে, কাঁকুড়লতার গর্ভধারণের মতই সে তার নিজের মৃত্যু ডেকে আনে। আসলে চাণক্য বলতে চেয়েছেন যে বন্ধুত্ব ভালো। কিন্তু, সেই বন্ধুত্বের যাঁরা অবমাননা করে, তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে। ফলে, যদি কোনও বন্ধুত্বস্থাপনকারী ব্যক্তি কারও অনিষ্ট করে, তাঁর থেকে দূরে থাকাই উচিত। সেই বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি ছলনা করে কাছে এলেও তাঁর সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব স্থাপন করা উচিত নয়।
আরও পড়ুন- মুখে মিষ্টি কিন্তু অন্তরে বিষ, এঁদের কী করা উচিত, কী বলেছেন চাণক্য?
এর কারণ হিসেবে চাণক্য বোঝাতে চেয়েছেন যে ওই ব্যক্তির সঙ্গে পুনরায় বন্ধুত্ব স্থাপন করলে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বাড়ে। কারণ, দুর্জনের চরিত্রের কখনও সংশোধন হয় না। সুযোগ পেলেই তারা আবার নিজের রূপ প্রকাশ করে ফেলে। এই খল প্রকৃতিই তাদের আসল স্বভাব। আর, তাই চাণক্য বলেছেন, কাঁকুড়লতা যেমন একবার ফল দিয়েই মারা যায়। গর্ভধারণই তার মৃত্যুর কারণ। সেইরকমই বিশ্বাসঘাতক বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখাও সমান ক্ষতিকারক।