Advertisment

শবরীমালার তাণ্ডবেও অম্লান নারীশক্তির আরাধনা

পরিকল্পিত হামলায় দেশের ঐতিহ্যময় ও বহুমুখী সংস্কৃতির প্রবাহ যে কোনওভাবেই রুদ্ধ হওয়ার নয়, আজ নারীশক্তির আরাধনায় আবার সেই প্রমাণই দেবে দেশ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে

এক অনন্ত স্ববিরোধিতার দেশ আমাদের। এই দেশে কুমারীপূজার পাশেই চলে নাবালিকা ও অশীতিপরের ধর্ষণ, শবরীমালার মন্দিরে ঋতুসম্ভব নারীর বিরুদ্ধে তাণ্ডবের বিপরীতে কামাখ্যার মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় দেবীর ঋতু-উৎসব। আজ দেশ জুড়ে নারীশক্তির আরাধনার আড়ালেও হয়তো পুনরাবৃত্ত হবে কোনও ভয়াবহ নারকীয়তা। হয়তো, সেই অপকীর্তিতে অভিযুক্ত হবেন কোনও বিধায়ক বা সাংসদও। তবু, করালবদনী কালীর আধারে মানুষের তিমিরবিনাশের প্রার্থনা তো কোনওভাবেই অবহেলার নয়।

Advertisment

আমাদের মনে পড়ে, পিতৃতান্ত্রিক বৈদিক সংস্কৃতিতে নারীর অবস্থান ছিল প্রায়-অপ্রাসঙ্গিক। বৈদিক দেবীরা ছিলেন কেবল দেবতাদের স্ত্রীবিশেষ। প্রাচীনতর বৈষ্ণব ও শৈবধর্মে লক্ষ্মী বা পার্বতী নিছক বিষ্ণু ও শিবের শক্তিপ্রকাশক প্রতিভাস। প্রকৃতপক্ষে, মধ্যযুগীয় পুরাণ থেকেই স্বতন্ত্র দেবীভাবনার উদ্ভব ও বিকাশ। সেই পৌরাণিক আখ্যানের প্রধান সূত্র ছিল মার্কণ্ডেয়-রচিত ‘দেবীমাহাত্ম্যম’ গ্রন্থটি, যা সাধারণভাবে ‘চণ্ডীপুরাণ’ নামেও খ্যাত। দেবী দুর্গার মহিষাসুরবধের কাহিনিই এই গ্রন্থের প্রতিপাদ্য। দেবভিত্তিক হিন্দুধর্মে সেই প্রথম দেবীসত্তার স্বীকৃতি। তবু, সেই দেবী-প্রকল্পনায়ও দেবতাদের প্রভাব অপরিসীম। কেননা, অসুরবধে দেবীর সমস্ত প্রহরণগুলিই দিয়েছিল দেবতারা। ফলত, দুর্গাশক্তিও অনেকটাই পিতৃতন্ত্রেরই প্রতিভূ।

আরও পড়ুন, তাহলে কি রেহানের মতো ধর্ষণশহিদই হবে মেয়েরা

ষষ্ঠ-শতকে শাক্তধর্মই প্রথম পিতৃতন্ত্রের অধীনতা থেকে মুক্ত হল। শক্তির আধার হয়ে উঠল নারী, তিনিই পরব্রহ্ম, এক ও অদ্বিতীয়। দেবমণ্ডলীতে সেই পরম নারীশক্তির প্রকাশ পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে এক নতুন পরিসরের সূচনা করল। প্রসারিত সেই ধর্মক্ষেত্র হয়ে উঠল শূদ্রেরও আশ্রয়স্থল। তবে, নারীসত্তাবিশ্বাসী শাক্তধর্ম কোনওভাবেই পুরুষ বা জড়সত্তাকে অস্বীকার করেনি। কেননা, দেবীশক্তির সঙ্গে শিবশক্তির মিলনেই কেবল সৃষ্টি-স্থিতি-লয় সম্ভব। প্রকৃতি-পুরুষের এই যুগপৎ সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় কল্পনাই রূপ পেয়েছে সপ্তদশ-শতকে নবদ্বীপের বাঙালি-ধর্মবেত্তা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সৃষ্ট কালীমূর্তিতে। দেবীর এই শক্তিরূপই আবার দশমহাবিদ্যার আধারে আরও-বিকশিত।  উপমহাদেশ জুড়ে সতীর একান্নপীঠের মাধ্যমে নারীশক্তির সেই রূপ সুবিস্তৃত হয়েছে। একান্নপীঠের অন্যতম কামাখ্যাপীঠ হয়ে উঠেছে স্ত্রীশক্তির অকল্পনীয় বিস্ফার। কার্তিকের অমানিশায় সেই কামাখ্যাদেবীই যেন শ্যামারূপে আমাদের দেখায় সেই অনির্বচনীয় স্ত্রী-শক্তির ভিন্নতর মহিমা। আজ তিমিরবিনাশিনীর আরাধনা আসলে সবরকম অসুরদমন ও অন্যায়েরই বিরুদ্ধাচারণ।

পুরাণশ্রুতি অনুযায়ী কামাখ্যায় সতীর স্ত্রী-অঙ্গ পড়েছিল। নীলাচলপাহাড়ের এই দেবীপীঠে কোনও পূর্ণাঙ্গ দেবীপ্রতিমা নেই। মন্দিরের-গর্ভগৃহে-অধিষ্ঠিত দেবীর প্রতীকায়িত পাথরের যোনিরূপই ভক্তের পূজ্য। মানুষের প্রাচীনতম টোটেমগুলির মধ্যে যোনি ও লিঙ্গ প্রধানতম। যোনিভেদী-লিঙ্গরূপ শিব যুগ-যুগ ধরে সারা-দেশে লোকায়ত ও প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে পূজিত। তবে, স্বাভাবিকভাবেই, সেই শিবশক্তি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির তফাত আছে। দেশের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ কুম্ভমেলায় সংগঠিত-শৈবশক্তি যেমন রণং-দেহি, তেমনই বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতিতে সেই দুর্দম-শিবশক্তি গণদেবতায় রূপান্তরিত। বাংলার কৃষিসংস্কৃতির সঙ্গে তার যোগ অনেক নিকটতর। কেননা, লিঙ্গ থেকেই লাঙ্গলের সৃষ্টি। লিঙ্গ যেমন কর্ষণের প্রতীক, মৃত্তিকাসম যোনিও তেমনই সেই সৃষ্টির আধার । শিব ও শক্তির মিলিত রূপই এই পরিব্যাপ্ত জগৎ ও জীবন। নারীর ভূমিকা সেখানে স্বভাবতই অবিসম্বাদিত। 

প্রতিটি সতীপীঠেই স্ত্রী-শক্তি ভৈরবী, পুরুষশক্তি ভৈরবরূপী শিব, সে সতীর অতন্দ্র প্রহরী। একান্নপীঠে দেবীর যেমন ভিন্ন-নাম, তেমন ভৈরবেরও। কামরূপে কামাখ্যারূপী সতীর ভৈরব উমানন্দ। উমার আনন্দরূপী সেই শিব আসলেই উমার যৌনানন্দের প্রতীক। ‘কামাখ্যা’ নামটির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে জীব ও শিবের তূরীয় আনন্দ-আধার। বলা যায়, যোনিরূপিণী কামাখ্যাই জীবের কামদেবী। সে-কারণেই আষাঢ়-মাসে অম্বুবাচী-তিথিতে তাঁর রজোকালের কল্পনা করেছে মানুষ। সাধারণভাবে অম্বুবাচী বৈধব্যের কৃচ্ছ্রসাধনকাল হলেও, কামাখ্যার বাৎসরিক ঋতুকাল বিপরীতভাবে হয়ে ওঠে নারীর উর্বরাশক্তিরই মহিমাকাল, উৎসবমুখর। নারীর ঋতুবন্দনার এমন দৃষ্টান্ত আধুনিককালেও আধুনিকতর। ‘কালিকাপুরাণ’ বলে, কামাখ্যায় দেবী পরিপূর্ণভাবে কামদা, কামিনী, কামা, কামাঙ্গদায়িনী ও কামাঙ্গনাশিনী হওয়ায় তিনি কামাখ্যা, কামাখ্যাতা। কামাখ্যায় দেবীর যোনিরূপ প্রতীকপ্রতিমা ছাড়াও রয়েছে নারীশক্তির বিভিন্ন প্রকাশরূপ কামাখ্যা, কামেশ্বরী, ত্রিপুরারী, সারদা, মহোৎসহার বিগ্রহ। দেবীর যোগিনীশক্তিরূপ কটীশ্বরী, গুপ্তকাশী, শ্রীকামা, বিন্ধ্যবাসিনী, পাদদুর্গা, দীর্ঘেশ্বরী, ধনস্থা ও প্রজটাও এখানে সমমহিমায় বিরাজমান। নীলাচলপর্বতেই রয়েছে দশমহাবিদ্যা কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনীর মন্দির। সব মিলিয়ে নারীশক্তির এ এক পরম উৎসার। সে-কারণেই কামরূপকামাখ্যা তান্ত্রিক ভৈরব-ভৈরবীদের মহাপীঠস্থান। যোনিরূপ কামাখ্যার বিবরমুখ সততসিক্ত। দেবীর ঋতুকালে সেই বিবরে রজোস্রোত উৎসারিত হয়। ওই তিনদিন মন্দিরের গর্ভগৃহ রুদ্ধ থাকলেও, দেবীমেলা ঘিরে ভক্তেরা উদযাপন করে দেবীর উর্বরাশক্তির উৎসব। দেবীর অঙ্গসিক্ততা বা রক্তধারার প্রাকৃতিক কারণাকারণ নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়।

শাক্তধর্মের সঙ্গে কালক্রমে জুড়ে যায় তন্ত্রসাধনা। শক্তিতত্ত্বের এই পথটি আসলে প্রাতিষ্ঠানিক বৈদিক জীবনচর্যার সুস্পষ্ট বিরোধিতা। হিন্দুতন্ত্রের অনুসরণে দেশে একসময় বৌদ্ধতন্ত্রেরও প্রসার হয়েছিল। চর্যাপদের ডোম্বিনিও যেন বৌদ্ধতন্ত্রের অনুরূপ আরাধ্যা দেবী। হিন্দুতন্ত্রে মূলত দক্ষিণাচার ও বামাচারের বিধি রয়েছে। মূলগতভাবে দক্ষিণাচারীরা বেদমান্যপথে চললেও, বামাচারীরা চলে বেদবিরোধী পথে। বামাচারী-তন্ত্রসাধনার প্রধান-আধার নারী। সাধকের সঙ্গে সাধিকার মিলনে ষটচক্রভেদ হয়, সহস্রারে জাগ্রত হয় কুলকুণ্ডলিনী। এই যুগলসাধনার তন্ত্রধারাটি পরে বাংলার বাউলসাধনায়ও প্রবাহিত হয়েছে। বাউলসাধকের কাছে সঙ্গিনীর রজোকাল অতি-পবিত্র সাধনসময়, জীবনের সুসময়কাল। তখন নদীতে বান ডাকে, জোয়ার আসে, ভাসে সাধকের তরী। বাউল ব্যতীত আর-কেউ গানে-গানে ধরে রাখেনি নারীশক্তির সেই শরীরী কলধ্বনি।

আরও পড়ুন, সমালোচনার গুরুত্বে কি জল ঢালছে খেউড়?

অন্ধ্রপ্রদেশে বিশাখাপতনমের দেবীপুরমমন্দিরেও কামাখ্যাসদৃশ যোনিপট ঘিরে শাক্ত-তান্ত্রিকদের সমারোহ কম নয়। পার্বতী এখানে ললিতা-ত্রিপুরাসুন্দরী-রূপী। দেবীর ভৈরব শিবশম্ভু এখানে কামেশ্বর-রূপে বিরাজমান। সমাজের প্রান্তিকস্তরের ভক্তরা সহস্রাক্ষী শ্রীবিদ্যাদেবীর আরাধনায় এই মন্দিরে বছরভর সমবেত হয়। সংলগ্ন কামাখ্যাপীঠম ও শিবালয়মেও কামাখ্যামন্দিরের মতো অম্বুবাচী তিথিতে বিপুল জনসমাগম দেবীপুরমকে দ্বিতীয়-কামাখ্যাপীঠের মহিমা দিয়েছে। এই মন্দিরে ঋতুমতী নারী-ভক্তরাই অগ্রভাগে। তান্ত্রিকরা নারীকে মহাবিদ্যা-রূপে গণ্য করে। তাই দেবীপুরমে জাতপাত ও লিঙ্গভেদের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। বরং, পূজার সময় এই মন্দিরে নারীভক্তরা সরবে ঘোষণা করে থাকেন. ‘আমি দেবী, তুমি দেবী, আমরাই দেবী’। দেশের কোনও ধর্মক্ষেত্রেই নারীর এমন ঘোষিত-মহিমা দুর্লক্ষ।

কামাখ্যার মতোই শবরীমালার রাজ্য কেরালার আলাপুজা জেলার চেঙ্গানুরের সুপ্রাচীন মহাদেবক্ষেত্রমেও দেবীপার্বতীর ঋতুদর্শন ও ঋতুস্নান ঘিরেও পুরোহিততন্ত্র ও ভক্তদের কোনও বিবাদ নেই। বরং, প্রধান-পুরোহিতের দৈনন্দিন কৃত্যই হল দেবীর বসনে ঋতুচিহ্ন নিরীক্ষণ করা। তিনি যেদিন সেই ঋতুচিহ্ন দর্শন করবেন, সেদিনই পুরোহিতগ্রাম থাজমান-মঠের প্রবীণতমা সদস্য মন্দিরে এসে রুদ্ধকক্ষে দেবীকে অবারিত করে তার ঋতুদর্শন করবেন। তারপর দেবীকে স্থানান্তরিত করা হবে মূল-মন্দির থেকে সংলগ্ন ঋতুকক্ষে। তিনদিন অশৌচগ্রস্তা দেবীর অধিষ্ঠান হবে রুদ্ধদ্বার-কক্ষে। চতুর্থ দিন, দেবীর ঋতুকাল শেষ হলে, বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হবে পম্বা নদীতে, ঋতুস্নানের জন্য। শুরু হবে ‘তিরুপুতারাত্তু’ বা দেবীস্নানোৎসব। তারপর পুণ্যস্নানা পার্বতীর প্রত্যাবর্তন হবে মন্দিরে-প্রতীক্ষমাণ মহাদেবের কাছে। নদীতীর থেকে মন্দির পর্যন্ত নামবে ভক্তদের উৎসবের প্রবাহ। অবিকল কামাখ্যার ঋতু-উৎসবের মতো ভক্তরা দেবীর পুণ্যঋতুবস্ত্রখণ্ড নিয়ে ঘরে ফিরবেন।

লোকায়ত স্তরে স্ত্রীশক্তির এইসব মাহাত্ম্যই ধূলিসাৎ করতে চায় ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসকদল। স্বৈরশাসকের কাছে যত-মত তত-পথ ঘোর-বিপজ্জনক। দেশের মানুষকে তারা একটি ছাঁচে ঢেলে খোপে পুরে ফেলতে চায়। সে-কারণেই এই সুপ্রাচীন সংস্কৃতির দেশে মানবীর ঋতুকালের মতো এক অনিবার্য শারীরক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে যায় আদালত, ধর্ম, রাজনীতি। অবশ্য, এমনই স্বাভাবিক। ইতিহাসের নিয়মেই যুগব্যাপী কুসংস্কারে একদিন যখন কেউ সামান্যতম নাড়া দেয়, তখনই চারদিক থেকে দাঁত-নখ বের করে তেড়ে আসে তমসাবৃত স্বার্থশক্তি। তা সে বিধবাবিবাহই হোক, সতীদাহই হোক বা সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়ই হোক। প্রাক্তন-প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র কোনও বিদ্যাসাগর বা রামমোহন রায় নন, কিন্তু সাংবিধানিক পরিসরে তিনি ও তাঁর সতীর্থরা  (মহিলা-বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র বাদে ) শবরীমালার মন্দিরে ঋতুসম্ভব নারীর প্রবেশাধিকারে যে-যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন, তা কেবল সংবিধানের মৌলিক-অধিকারসাপেক্ষই নয়, শক্তিরূপিণীর সাধন-অনুসারীও। কিন্তু, সামাজিক মন যদি চিরতমসাবৃতই থেকে যেতে চায়, তাহলে আদালত তাকে যতই এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুক, সে থাকবে নিজ-তিমিরেই। শবরীমালায় সেই অন্ধকার উসকে দিয়েছে মেরুকরণের রাজনীতি।

বিস্ময়ের বিষয়, ১৯৯১ সালে কেরালা হাইকোর্টের নিষিদ্ধকরণ-রায়ের পরেই মন্দির-কর্তৃপক্ষ শবরীমালায় নারীপ্রবেশে কট্টর অবস্থান নেয়। তার আগে প্রথাটি ছিল মেয়েদের ইচ্ছাধীন। অথচ, সেই তথ্যটি বেমালুম চেপে গিয়ে বিজেপি যথারীতি মিথ্যাচারিতায় নেমেছে। মাত্রই সাতাশ-বছর আগের আইনটিকে তারা ‘সুপ্রাচীন প্রথা’ হিসাবে প্রচার করছে। অবশ্য, কেবল বিজেপি-ই নয়, কংগ্রেস ও সিপিএম-ও চলছে গা বাঁচিয়ে।অথচ, দু-বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে মুম্বইয়ের ঐতিহাসিক হাজি আলি দরগায় মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে ‘কট্টরপন্থী’ মুসলিমরা। বিজেপি ধর্মীয় অন্ধতায় তাদেরও পিছনে ফেলে দিয়েছে।

সবচেয়ে বড়কথা, ঘটনাটি ঘটছে দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রসরতম কেরালায়। এমনকি, রাজ্যের মেয়েরাই থাকছে এই অন্ধকারকামীদের সম্মুখ-সারিতে। তারাই ক্রীড়নক হয়ে উঠছে  ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক দলটির সার্বিক নারীবিরোধিতার।  আসলে, অযোধ্যায় রামমন্দিরের মতোই আয়াপ্পামন্দিরের রন্ধ্রেই কালসাপ হয়ে ঢুকে তারা কেরালায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা চায়। তাদের সমস্ত ধর্মীয় পদক্ষেপগুলির মতোই এই নারীবিরোধী তাণ্ডবও যেমন পশ্চাদপদ রাজনৈতিক অভিসন্ধির, তেমনই আর্থিক শোষণ ও কেলেঙ্কারীর বিফল আড়ালমাত্র। ধর্মভীরু মানুষও এতদিনে এই তথাকথিত ধর্মবাদী দলটির স্বরূপ টের পেয়ে গেছে। শবরীমালায় শাসকদলের এই নারীবিরোধিতা আসলে জাতপাতহীন তন্ত্রাচারেরও সুস্পষ্ট বিরুদ্ধাচারণ। কেননা, যারা জনজীবনে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা প্রসারিত করতে চায়, তাদের পক্ষে ভেদবিহীন তন্ত্র, কালী বা লোকায়ত শিবকে স্বীকার করা অসম্ভব। কিন্তু, সেই তাণ্ডবই যে শেষকথা নয়, দেশের ঐতিহ্যময় ও বহুমুখী সংস্কৃতির প্রবাহ যে পরিকল্পিত হামলায় কোনওভাবেই রুদ্ধ হওয়ার নয়, আজ নারীশক্তির আরাধনায় আবার সেই প্রমাণই দেবে দেশ।

WOMEN Sabarimala
Advertisment