৩০ জানুয়ারি 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র সমাপ্তি। জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে হবে মেগা অনুষ্ঠান। উপত্যাকায় 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র সমাপ্তি আসরে যোগ দিতে বিজেপি বিরোধী ২১টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানালেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। যাত্রায় যোগ দিতে বিরোধী দলের একাধিক শীর্ষ নেতা-নেত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লিখেছিলেন খোদ রাহুল গান্ধী। তারপর খাড়গের এই উদ্যোগ জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী রাজনৈতিক পরিসরে যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
আমন্ত্রণ পর্বে খার্গে লিখেছেন, 'যাত্রার শুরু থেকেই আমরা প্রত্যেক সমমনস্ক ভারতীয়দের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। রাহুল গান্ধীর আমন্ত্রণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদরাও বিভিন্ন পর্যায়ে যাত্রাপথে হেঁটেছেন। আমি এখন আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে ৩০শে জানুয়ারি দুপুরে শ্রীনগরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারত জোড়ো যাত্রার সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই অনুষ্ঠানটি মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে, যিনি এই দিনে বিদ্বেষ ও সহিংসতার আদর্শের বিরুদ্ধে তাঁর অক্লান্ত সংগ্রামে প্রাণ হারিয়েছিলেন।'
গত ৭ সেপ্টেম্বর দেশের দক্ষিণপ্রান্ত কন্যাকুমারী থেকে কংগ্রেসের 'ভারত জোড়ো যাত্রী'র সূচনা হয়েছিল। যাত্রাটি ১০ রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির পথ ধরে ৩,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করে বুধবার পাঞ্জাবে প্রবেশ করেছে।
খাড়গে, বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের লেখা চিঠিতে লিখেছেন, 'অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে।' যুক্তি দিয়ে যাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে কংগ্রেস সভাপতি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, 'যখন সংসদ ও সংবাদ মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠ দমন করা হচ্ছে, তখন যাত্রা লক্ষাধিক মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে। আমরা আমাদের জাতিকে প্রভাবিত করে এমন গুরুতর সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি, যেমন- মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, সামাজিক বিভাজন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা এবং দেশের সীমান্তে হুমকি। যুব, মহিলা এবং বয়স্ক; কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি; দলিত, আদিবাসী এবং ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, কর্মী, শিল্পী এবং আধ্যাত্মিক গুরু- নেতারাসমাজের সকল অংশ যাত্রার অংশ হয়েছে এবং তাদের সমস্যাগুলি ভাগ করে নিয়েছেন। জনগণের সঙ্গে এই সরাসরি কথোপকথন যাত্রার একটি বড় প্রাপ্তি।'
কংগ্রেস সভাপতির দাবি, এই যাত্রায় সম্প্রীতি এবং সাম্যের একটি খুব সহজ এবং স্থায়ী বার্তা ছিল। তাঁর লেখায় ঘরা পড়েছে, 'ভারতীয়রা বহু শতাব্দী ধরে এই মূল্যবোধের জন্য লড়াই করেছে, এবং সেগুলি আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত। যাত্রায় প্রতিদিন মানুষ গরম, ঠান্ডা এবং বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে 20-25 কিমি হেঁটে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে যাত্রার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।'
চিঠিতে মল্লিকার্জুন খাড়গে লিখেছেন, 'সমাপ্তী অনুষ্ঠানে আমরা ঘৃণা ও হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করতে, সত্য, সহানুভূতি এবং অহিংসার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং সকলের জন্য স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব এবং ন্যায়বিচারের সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে নিজেদেরকে অঙ্গীকারবদ্ধ করব।' তাঁর সংযোজন, 'আমাদের দেশের এই সংকটের সময়ে, জনগণের নানা সমস্যা থেকে থেকে দেশবাসীর মনোযোগ পরিকল্পিতভাবে সরানো হয়েছে, যাত্রা একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। আমি আশা করি আপনি অংশগ্রহণ করবেন এবং এর বার্তাকে আরও শক্তিশালী করবেন।'
কংগ্রেস সূত্রে খবর, ভারত জোড়ো যাত্রার সমাপ্তী আসরে যোগ দিতে যে ২১ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেই তালিকায় রয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও আমন্ত্রণ পত্র পৌছেছে বিজেপি বিরোধী ও মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী শিবসেনা, বিহারের শাসক দল আরজেডি, জেডি(ইউ), উত্তরপ্রদেশের দুই বিরোধ দল সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ওড়িশার শাসক দল বিজেডি, তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে, তেলেঙ্গারা শাসক দল টিআরএস ও সব বাম দলগুলির কাছে। তবে আপের কাছে আমন্ত্রণপত্র নাও পৌঁছতে পারে বলে জানা গিয়েছে।