বাংলার তাঁত বস্ত্রের কদর জগৎ জোড়া। তাই দেশের অন্য রাজ্য এমনকি বিদেশের বাসিন্দারাও বাংলার তাঁত শিল্প ও শিল্লীদের কাজ একবার স্বচোক্ষে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে থাকেন। এমনই উৎসুক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার তাঁত নিয়ে জানার আগ্রহ থেকেই মঙ্গলবার তিনি পৌছে যান পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার বেণীনগর গ্রামের তাঁত শিল্পীদের ডেরায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডিজাইনার সুকেট ধীর, চলচ্চিত্র নির্মাতা রাণু ঘোষ এবং ফ্রান্সের বাসিন্দা ইলাস্ট্রেটর সেইন অলিভিয়া।
এঁরা সবাই মিলে বেণীনগর গ্রামে তাঁতশিল্পীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে হ্যান্ডলুমে কাপড় কী ভাবে তৈরি হয় তা ভাল ভাবে খুঁটিয়ে দেখেন। এমনকি কাঠ দিয়ে তৈরি তাঁত যন্ত্রপাতিগুলিও তাঁরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। পাশাপাশি সুবিধা-অসুবিধা ও আয়ের বিষয়েও অভিজিৎবাবু তাঁত শিল্পীদের কাছ থেকে জানেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বেণীনগর গ্রামে আগমন ঘটায় ভাল কিছু হওয়ার আশা জেগেছে সেখানকার তাঁত শিল্পীদের।
তাঁত শিল্পে কেতুগ্রামের বেণীনগর গ্রামের পরম্পরা বহু বছরের। গ্রামের সিংহভাগ পরিবার তাঁতে কাপড় বোনাকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। বেণীনগর গ্রামে তৈরি কাপড় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সরবরাহ হয়। বেণীনগর গ্রামের তাঁতশিল্পী বাসুদেব সিনহা বলেন, 'আমাদের গ্রামে শিল্পীদের তৈরি তাঁতের কাপড় দিল্লির এক ডিজাইনার কেনেন। ওই ডিজাইনার সেই সমস্ত বস্ত্র প্যারিসে একটি প্রদর্শনীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে অভিজিৎবাবুকে একটি জামা উপহার দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি জানতে পারেন জামার কাপড়টি আদপে কেতুগ্রামের বেণীনগর গ্রামে তৈরি হওয়া। এরপর অভিজিৎবাবু আমাদের গ্রামে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।"
আরও পড়ুন রাতের রাস্তায় গড়াগড়ি খেল বস্তা-বস্তা ‘খাদ্যসাথী’র চাল, অবাক-কাণ্ডে হইচই
বেণীনগর গ্রামের তাঁতিরা জানিয়েছে, এই প্রথম অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বেণীনগর গ্রামে এলেন এমনটা নয়। গত বছর নভেম্বর মাসেও একবার অভিজিৎবাবু বেণীনগর গ্রামে ঘুরে গিয়েছিলেন। আর এদিন সকালে চারজনকে সঙ্গে নিয়ে অভিজিৎবাবু ফের বেণীনগর গ্রামে আসেন। গ্রামের তাঁতি বাসুদেব সিনহার বাড়িতেই তাঁদের জন্য মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা করা হয়। ফিরে যাওয়ার আগে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বেণীনগর গ্রামের তাঁতিদের বলেযান, “আমি বাংলার তাঁতের ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি“।