প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট নকশালপন্থী নেতা, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী সন্তোষ রানা। শনিবার ভোর ৬টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে সন্তোষবাবুর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ১৯৬০ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়ই বামপন্থী রাজনীতি তথা অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন সন্তোষবাবু। সে সময় তিনি থাকতেন বিধান হস্টেলে। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগের পর তিনি সিপিআই(এম) দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়িতে সংগঠিক কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা নকশালপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। চারু মজুমদারের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া সিপিআই(এমএল) দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা সন্তোষবাবু দীর্ঘদিন রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে কারান্তরালে থেকেছেন। জেলে থাকাকালীনই তিনি ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেন। গোপীবল্লভ কেন্দ্র থেকে জয়ী হন সন্তোষবাবু। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে তিনিই একমাত্র নকশালপন্থী, যিনি বিধায়ক হয়েছিলেন। বামফ্রন্ট আমলের শেষলগ্নে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-সহ বিভিন্ন গণআন্দোলনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন সন্তোষবাবু। রাজনৈতিক কার্যকলাপের পাশাপাশি সমান সাবলীল থেকেছে তাঁর কলমও। প্রবীন এই কমিউনিস্ট নেতা লিখেছেন একাধিক বই, অসংখ্য প্রবন্ধ। নিজের রাজনৈতিক জীবনের উপর ভিত্তি করে লেখা বই 'রাজনীতির এক জীবন'-এর জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার।
ছয়ের দশকের উত্তাল কালপর্বে সন্তোষবাবুর সহপাঠী ছিলেন নকশালপন্থী নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহযোদ্ধার মৃত্যুতে মর্মাহত অসীমবাবু এদিন বলেন, "একসঙ্গে অনেক পথ হেঁটেছি, লড়াই করেছি, মতপার্থক্যও হয়েছে। ১৯৬০ সালে আমরা মফস্বল শহর থেকে পড়তে এসেছিলাম কলকাতা শহরে। একসঙ্গেই থাকতাম বিধান ছাত্রাবাসে। সে এক আশ্চর্য সময়! কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যাচ্ছে, ছাত্র ফেডারেশন ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের মনে হত, গোটা দুনিয়াটা বদলে যাবে বিপ্লবের আঘাতে। তবে কলকাতায় থাকায় সময় আমাদের তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। ১৯৬৮ সালে আমি সিপিআই(এমএল) সংগঠক হিসাবে বাংলা-বিহার-ওড়িশার সীমান্ত এলাকায় যাই। ওই এলাকায় অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন সন্তোষ।"
বামফ্রন্ট আমলের শেষলগ্নে একাধিক গণআন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন সন্তোষবাবু। যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ সাংসদ কবীর সুমনের কথায়, "২০০৯ সালে আমার সমর্থনে প্রচার করেছিলেন সন্তোষবাবু। তবে আমি ওঁকে আমার ছাত্রাবস্থা থেকেই চিনতাম। কলেজে পড়ার সময় উনি ছিলেন আমার হিরো। অত্যন্ত সমীহ করতাম।"