Advertisment

'পর্বতচূড়ায় বসে পাশেই দেখি স্নো লেপার্ডের পায়ের ছাপ!', দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা চান্দ্রেয়ীর

মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরেন সুনীতা হাজরা! সেই এভারেস্ট জয়ের কাহিনিতে চান্দ্রেয়ী ঘোষ।

author-image
Sandipta Bhanja
New Update
Chandreyee Ghosh, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, Mission Everest, Sunita Hazra, মিশন এভারেস্ট, সুনীতা হাজরা, এভারেস্টজয়ী সুনীতা হাজরা, টলিউডের খবর, Indian Express Entertainment News, Bengali News today

'মিশন এভারেস্ট'-এ শুটের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ

২০১৬ সালে সুনীতা হাজরার এভারেস্ট জয়ের কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গকন্যা। শরীরজুড়ে ফ্রস্টবাইট। হাল ছেড়ে দিয়েছিল শরীর। এভারেস্টের বুকেই বাকি সঙ্গীদের শৈল-সমাধি। তবু মন ভাঙেনি। কারণ ফিরতে তাঁকে হতোই। বাড়িতে অপেক্ষা করছিল তাঁর ছোট ছেলে আর্যবীর। দুঃসাহসী সেই বঙ্গকন্যা সুনীতার হার না মানার অদম্য লড়াই এবার বড়পর্দায় আসছে চান্দ্রেয়ী ঘোষের (Chandreyee Ghosh) হাত ধরে। 'মিশন এভারেস্ট'-এ (Mission Everest) কতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে শেয়ার করলেন চান্দ্রেয়ী। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ

Advertisment

পর্বতারোহীর ভূমিকায় অভিনয়, শরীরের পাশাপাশি মানসিক দিক থেকেও ফিট থাকতে হবে। কীভাবে শুরুটা হয়েছিল?

চান্দ্রেয়ী- বেসিক ওয়ার্কশপ এখানেই স্ক্রিপ্ট রিডিংয়ের সময় হয়েছে। তবে রিয়েল লোকেশনে গিয়ে পর্বতারোহীদের পোশাক পরে টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি শিখে ২ দিন পর থেকে শুটিং করেছি। প্রফেশনাল পর্বতারোহীরা তো ছিলেনই, সুনীতাদির স্বামীও ছিলেন।গাইড হিসেব ছিলেন তাসি, শেরপারা, যাঁরা এর আগে বহু সামিট পার করে এসেছেন।

প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?

চান্দ্রেয়ী- প্রথমত একজন নারী হিসেবে সুনীতাদি আমাকে কাছে অনুপ্রেরণা। শারীরিক জোর তো বটেই, তবে ওঁর মানসিক জোর আমায় ভাবিয়েছে। যাওয়ার আগে অ্যাথলিটদের ফিটনেস আনার জন্য ২ মাস জিম ট্রেনারের কাছে কড়া ট্রেনিং নিয়েছি। দুবেলা করে যেতাম। একদম সকালে ৬টা নাগাদ, আর পরে রাত ৮টা। কড়া ডায়েট। প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল নিতে হয়েছে। পর্বতের ওপরে গিয়ে যাতে অসবুধে না হয়। ৪৫ মিনিট করে জিম তখন রোজকার রুটিনে বাধা-ধরা। সুনীতা হাজরার জুতোতে পা গলাতে কোনওরকম ফাঁক রাখতে চাইনি। পর্বতারোহীদের চলন-বলন, হাবভাব সবটাই আয়ত্ত করতে হয়েছে। ১৫ দিনের একটা ওষুধের কোর্স করে গিয়েছি, যাতে মারাত্মক কোনও শারীরিক অসুবিধের মধ্যে না পড়তে হয়।

শুটের আগে সুনীতা হাজরার সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। ওঁর পরিবারও খুব সাপোর্টিভ।

আগে ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল?

চান্দ্রেয়ী- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প থেকে শুরু করে টুকটাক ট্রেকিংয়ের একটা অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু এটা করতে গিয়ে দেখলাম সেই অভিজ্ঞতা এখানে গোটা সমুদ্রের মধ্যে এক ঘটি জল!

প্রতিকূল কোনও পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল?

চান্দ্রেয়ী- কাজায় ভোর ৪টেয় কল টাইম। আমরা পৌঁছলাম তখন সন্ধে নেমে গেছে। চারদিকে কোথাও কিচ্ছু নেই। জলও নেই। ওইরকম মারাত্মক ঠাণ্ডায়, চরম আবহাওয়ায় আমরা সেখানে ১৪ ঘণ্টা শুট করব শুনে তো স্থানীয় লোকেরা হতবাক। প্রত্যেকে মনের জোর রেখে কাজটা করে গিয়েছি।

ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে দু-আড়াই ইঞ্চির মোটা জ্যাকেটের ভিতর আরও দুটো লেয়ারের পোশাক। উপরন্তু ২টো জুতো। তাতে আবার লোহার ক্র্যাম্প অন লাগানো। হার্নেস, দড়ি, খাবার-দাবার, অক্সিজেন সিলিন্ডার এত ওজন নিয়ে ট্রেক করে শুট করেছি। ফ্রস্টবাইটে নাক ফেটে গিয়েছিল। কলকাতায় ফিরে গ্লাভস-সুদ্ধ হাতটাকে আগুনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখলাম কোনওরকম অনুভূতি নেই। একদিন সকালে উঠে দেখলাম অক্সিজেনের অভাবে এক্কেবারে ফুলে গিয়েছি। স্নো ব্লাইন্ডনেসের সমস্যা যাতে না হয় সারাক্ষণ চশমা পরে থাকতে হয়েছে।

'মিশন এভারেস্ট'-এর শুট করতে গিয়ে নতুন কী শিখলেন?

চান্দ্রেয়ী- 'মিশন এভারেস্ট' ছবির শুটিং আমার লাইফটাইম একটা অভিজ্ঞতা। কী কী পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি কাজ করতে পারি, সেটা বুঝেছি। মুহূর্তের মধ্যে দেখলাম সন্ধে নেমে এল। সেইসঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন। দিনে প্রচণ্ড চড়া রোদ। মোটা লেয়ারের পোশাকের ভিতর মারাত্মক ঘামছি, শট দিচ্ছি। আর সন্ধে নামলেই মাইনাস ডিগ্রি। শট দিতে গিয়ে ঠাণ্ডায় তখন আমাদের থর হরি কম্প পরিস্থিতি! এভাবেই রাতের দৃশ্য শুট করেছি। সে কী কষ্ট! এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম পর্বতারোহীরা কতটা কষ্টসহিষ্ণু। লাদাখ, স্পিতি ভ্যালি, কাজা। একেকটা লোকেশনে পৌঁছতেই ১৬-১৮ ঘণ্টা। তারপর আবার শুটিং করা।

publive-image

২০১৯-২০ সালেই 'মিশন এভারেস্ট'-এর শুট হয়। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

চান্দ্রেয়ী- শুট চলেছিল অনেক দিন ধরে। প্রথম ২০-২২ দিনে মাত্র কয়েকটা শট দিতে পেরেছিলাম। তার কারণ, প্রথমে ট্রেক করে উঠে লোকেশনে পৌঁছই। অক্সিজেনের অভাব। চারদিকে শুধু বরফ আর বরফ। নিচে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইউনিটের লোকজন। সবাইকে পিঁপড়ের মতো দেখা যাচ্ছিল। সেখান থেকেই নির্দেশ আসছিল পরিচালকের। অর্ধেক কথা শুনতে পাচ্ছি, কিছুটা পাচ্ছি না। অক্সিজেন কম বলে হাঁপিয়ে যাচ্ছি সবাই। আবার মাইনাস ডিগ্রিতে অতটা ট্রেক করে নিচে নেমে পরের শট দিচ্ছি। শুধু আমি নই, ইউনিটের লোকজন থেকে আমার সহ-অভিনেতাদের সকলকেই মারাত্মক পরিশ্রম করতে হয়েছে।

পরিচালক দেবাদিত্যও অসুস্থ হন শুটের সময়। এমনও হয়েছে যে, একটা প্লাস্টিক সিটের ওপর শুয়ে শুটের তদারকি চালিয়ে গিয়েছে।

শুটের সময় কোনও মজার ঘটনা?

মনে আছে একটা শট দেওয়ার জন্য পর্বতের একেবারে উঁচুতে অনেক কষ্ট করে পৌঁছলাম। চারদিকে শুধু বরফ আর আকাশ। সঙ্গে শো শো করে হাওয়া চলছে। আশেপাশে শুধু একটা জিনিস দেখতে পাচ্ছি। সেটা হল স্নো লেপার্ডের পায়ের ছাপ! তবে ভয় না পেয়ে একেবারে শট দিয়েই নিচে নেমেছি।

দর্শকরা কতটা একাত্মবোধ করতে পারবেন 'মিশন এভারেস্ট' দেখে?

চান্দ্রেয়ী- সিনেমায় খুব ছোট্ট ছোট্ট চরিত্র রয়েছে, যাঁদের চরিত্রটাকে খুব ইনফরমেটিভ ক্যারেক্টার হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। পর্বতারোহীদের মনস্তত্ত্বও দেখানো হয়েছে এখানে।

সুনীতা হাজরা শুধু নন, তাঁর সহযাত্রীদেরও নেপথ্যের কাহিনি দেখা যাবে সিনেমায়। এভারেস্ট তাঁদের জীবনে কী, কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সেটাও দেখিয়েছেন দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমোশনের এত শেডস রয়েছে, যে কোনও বয়সের দর্শকরাই এই গল্পের সঙ্গে একাত্মবোধ করতে পারবেন।

প্রথমবার এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সিনেমার দায়িত্ব কাঁধে, রিলিজের আগে অনুভূতি কেমন?

চান্দ্রেয়ী- দারুণ উচ্ছ্বসিত। তবে ভয়ও লাগছে। বাংলায় এরকম একটা বিষয় নিয়ে সিনেমা হল, এখানকার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছে, সেটাই অভাবনীয়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tollywood Mount Everest Chandreyee Ghosh Entertainment News
Advertisment