ছবি: কণ্ঠ
পরিচালনা: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়
অভিনয়ে: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পাওলি দাম, জয়া আহসান, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রা সেন
রেটিং: ৩.৫/৫
যা কিছু জীবনের সহজাত, প্রতিনিয়ত যার উপর নির্ভরশীল মানুষের 'আমি', তা যদি এক লহমায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন বাচাঁটা বিদ্রোহের সমানুপাতিক হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই লড়াইয়ে শরিক হয় আপনার কাছের জনেরা। যতই বলুন, মন্দ কিন্তু সহজে নেওয়া যায় না। রাজরোগ শরীরে বাসা বাঁধলে আচ্ছা আচ্ছা মানুষ ঘাবড়ে যান। আশা ছাড়েন জীবনের।
সেরকমই নিত্য চলার সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের যাত্রা শুরু করেন অর্জুন মল্লিক (শিবপ্রসাদ), সঙ্গ দেন পৃথা (পাওলি)। অর্জুন পেশায় জনপ্রিয় রেডিও জকি। যার কন্ঠের ফ্যান বহু শ্রোতা। আচমকাই পুরস্কারের মঞ্চে গলা দিয়ে স্বর বেরোয় না তাঁর। টেনশন। সঞ্চালিকা তো বাকরূদ্ধ বলে বিষয়টা সামলে নিলেন, কিন্তু কেন এমন হল এই চিন্তায় একের পর এক নিকোটিন কাঠি পুড়ল হাতে। তারপর জানা গেল, ল্যারিংক্স (পরিভাষায় ভয়েস বক্স)-এ বাসা বেঁধেছে কর্কট রোগ। তাও ফোর্থ স্টেজ। বাঁচতে হলে ভয়েস বক্সটাই বাদ দিতে হবে। কিন্তু কণ্ঠই যাঁর অস্তিত্ব, সেটা বাদ দিয়ে চলবে কী করে? এত টানাপোড়েনের মধ্যেও এই নতুন বাস্তব মেনে নিতে চান না অর্জুন। ছেলে এবং স্ত্রীয়ের মুখ চেয়ে রাজি হন শেষমেশ। বাদ যায় কথা বলার সাধারণ ক্ষমতা। এবার লড়াইটা অন্য।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনা, সংলাপের প্রশংসা তো হবেই। কিন্তু এই সব কিছুকে ছাপিয়ে সামনে আসবেন অভিনেতা শিবু। ইসোফেগাল ভয়েসে কথা বলা শুধু নয়, ডাবিং সত্যিই অসাধারণ। পাওলিও বলে বলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন পর্দায়। তবে একসঙ্গে শিবু-পাওলির যাত্রা অসম্পূর্ণ থাকত যদি না জয়া আহসান আসতেন। তিনি কী অবলীলায় স্পিচ থেরাপিস্ট-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। চিত্রা সেন, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কনীনিকা, প্রত্যেকে অনবদ্য।
তবে আবারও স্বীকার করতে হবে, বাজারটা ভালই করেন শিবপ্রসাদ। জয়া আহসানের বাংলাদেশী অ্যাকসেন্ট যাতে স্বাভাবিক শোনায়, তাঁকে তাই ফরিদপুরের মেয়ের চরিত্রে রেখেছেন পরিচালক। কিছু ছোট ছোট মূহুর্ত নজর কাড়ে যেমন - বরিশালের পিসিমার সঙ্গে ফরিদপুরের রোমিলার (জয়া) সাহচর্য, 'কর্ণ-কুন্তী সংবাদ'-এর অংশ, 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-এর ভূতের রাজার মঞ্চ পরিবেশন। ছবির গান অত্যন্ত মানানসই। অনুপম এবারে একটু পিছিয়েই রইলেন। চিত্রনাট্যের জোরালো পরিবেশনে এড়িয়ে যেতে পারেন সহকারী কিছু অভিনেতার ওভার অ্যাক্টিং। আসলে ছবি জুড়ে যে ''মানুষ কথা বলছে যন্ত্র নয়'', সেটা বুঝতেই ছবিটা দেখতে পারেন। আর আমরা বলতে পারি ''নমো যন্ত্র''।