তাঁর অভিনয় দক্ষতা কিংবা প্রাণোচ্ছলতা সবসময় মন কেড়ে নেয় সকলের। বিশেষ করে এখন হাইপার মা কোজাগরী হিসেবে তিনি পর্দায় এসেছেন। ছেলে মেয়ে নিয়ে যেমন চিন্তা, তেমনই নিজের জীবনের সরল সোজা শর্ত পূরণ করার অগাধ ইচ্ছে। অপরাজিতা নিজেও খানিকটা তাইই। বাঁধভাঙ্গা আনন্দ তাঁর সঙ্গে স্বতস্ফূর্ত ভাব, অভিনেত্রী বাস্তব জীবনে নিজের মায়েদের কাছে কতটা চোখের মণি? 'জল থই থই' এর কোজাগরী শুটিং এর ফাঁকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে জানালেন সেসব কথা।
আগের সিরিয়ালে একটা অন্যরকম চরিত্র, এটাতেও একদম স্বাধীনচেতা, তোমার নিজের সঙ্গে মিল বলেই রাজি হয়েছিলে?
নিজের সঙ্গে মিল বলে রাজি হয়েছিলাম কিনা জানি না, তবে হ্যাঁ লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম এটা কিন্তু বলা যায়। আসলে, আমি উনার লেখার ওপর খুব বিশ্বাস করি। লীনা দি এত ভাল লেখেন। আমি তো মাঝেমধ্যে ডায়লগগুলো ভাবিই। রাতে বসে হয়তো হঠাৎ মনে হল, যে এই ডায়লগটা বলেছি? নাকি ভুলে গেলাম? দীর্ঘদিন হল, লীনাদির সঙ্গে কাজ করছি। আর এই চরিত্রটা করার আগে একদম সময় পাইনি। অনেক ভেবে বেছে তো কাজ করি। কিন্তু লীনা দির ওপর আমার ভরসা আছে। সেই কারণে, এটা যখন উনি বললেন আমি আর না করিনি।
পরপর এতগুলো সাকসেসফুল সিরিয়াল, চরিত্রের আগে বাস্তবের কাউকে দেখে অনুপ্রেরণা পাও?
আমার দেখার পরিসরটা অনেক বেশি। অভিজ্ঞতাটাও খুব মারাত্মক। কোজাগরী যে ধরনের দেখতে পারছ, সেটা একদম আদ্যোপান্ত আমার মায়ের মত। আমার মায়ের ছেলেমানুষী দেখে দেখে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়তাম। আমার শাশুড়ি মা তিনিও পুরো এক। কোনও বিভেদ নেই। উনার ৭৫ বছর বয়স। কী যে কাণ্ডটা করছে। আমার মায়ের ইচ্ছে হত উনি থাইল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন। আর সবসময় বলত, আমায় তোমরা কেউ শাসন করবে না। কেউ কিছু বলবে না। তোমরা আমায় পেটে ধরো নি, আমি ধরেছি।
তোমার মা তো সাংঘাতিক ছিলেন তবে...
লেডি হিটলার বলে না, ঠিক তেমন ছিলেন। আর এই যে কোজাগরীর একটা ডায়লগ আছে না, বয়স হলে আমরা কোন কাজটা করি না? একদম তাই, আমরা সব কাজ করি। আর এর পারফেক্ট উদাহরণ হলেন আমার শাশুড়ি মা। উনি আমার থেকে অনেক বেশি খাটেন, অনেক বেশি পরিশ্রম করেন। অনেক এনার্জি উনার। উনি মানে দারুণ। উনি জীবনটা উপভোগ করেন যা, বিশ্বাস হবে না কারওর। আমি সত্যি বলছি, উনার কাছে আমি বুড়ো।
তোমার শাশুড়ি তোমার আরেক মা, অনুসুয়াদিকে অনস্ক্রিন শাশুড়ি হিসেবে কেমন লাগছে?
ভীষণ বড় মাপের অভিনেত্রী। একটা গোটা ইনস্টিটিউশন। শুধু তাই না, উনার ডায়লগ ডেলিভারি থেকে কাজ এর ধরন। সিনটা ভীষণ অন্যরকম হয়ে যায়। একটা অন্যরকম ব্যাপার থাকে।
সিরিয়ালে বলতে শোনা গেল, 'ঠ্যাস মেরে কথা বলো না তো... পাল্টাব না আর...' আমরা আদৌ পাল্টাই?
অবশ্যই পাল্টাই। সারাজীবন বয়স এক থাকে না, মানুষ এক থাকে না। ১৮/২০ বছর বয়সে মেয়েটা বলবে, মায়ের মত আমি নই। কিন্তু সেই মেয়েটাই ৪০/৪৫ এ চলে গেলে মায়ের মত আচরণ করবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মানুষ পাল্টায়।
দুটো, এত সুন্দর ছেলের মা... সেই জন্যই কি মায়ের এত চিন্তা?
কোন মায়েদের চিন্তা হয় না? কিন্তু সব ছেলেমেয়েদের একটাই কথা এবং কাজ। ফোন ধরে না, কথা বলে না। আমার তো মনে হয়, আমি একাই ছিলাম যে মায়ের ফোন ধরে রোজ এক ঘন্টা ধরে একই কথা শুনতাম। মায়েরা পারে না। বাবার তাও অনেক কম চিন্তা হয়। কিন্তু মায়েরা, সম্ভব না।
তোতা, তোমার মেয়ে সব স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে আসছে, একথা কি সত্যিই মেয়েরা স্বপ্নপূরণে সাহায্য করে?
মেয়েরা অনেক নমনীয় হয়। অনেক সেন্স ওদের। এটা একদম সত্যিই কথা, যে মেয়েরা ছেলেদের থেকে বাবা মায়েদের বেশি বোঝে। যে মেয়েটা তাঁর বাবা মায়ের জন্য কিছু করতেও পারছেন না, সেও কিন্তু এটুকু বুঝতে পারে তাঁদের কোনটা ভাললাগা কোনটা খারাপ লাগা। মেয়েরা ধৈর্য্যশীল। তাঁরা বাপের বাড়ি শ্বশুর বাড়ি একসঙ্গে সামলাতে পারে। মেয়েরা চেষ্টা করে, বাবা মায়ের কথা শোনে। এটা তো দাড়িপাল্লা ভারী।
এতদিন কাজ করছ, তাও মাঝে মাঝে তোমার কাজকে ছাপিয়ে যায় তোমার পোশাক, ট্রোল কীভাবে সামলাও?
আমি তো দেখিই না। আমার সোশ্যাল মিডিয়া সামলায় দুজন মেয়ে। ওরাই তো আমায় বলে ছবি দাও, পোস্ট করব। আমার নজরে পরেই না। আর যেটুকু পড়ে, আমি ভাবি এরা সব ফ্রাস্ট্রেটেড, ভেবে লাভ নেই।