দিন দশেক আগেই মুক্তি পেয়েছে 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি: দার্জিলিং জমজমাট'। 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ'-এর পর আবারও সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ফ্রেমে ফেলু মিত্তিরের চরিত্রে টোটা রায় চৌধুরি। তবে প্রথম সিরিজ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাজিমাত করলেও দ্বিতীয়টি নিয়ে কিন্তু দর্শকমহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। সৃজিতের নতুন ফেলুদা সিরিজ নিয়ে দ্বিবিভক্ত নেটপাড়া। মিশ্র প্রতিক্রিয়া তো রয়েইছে, তবে খারাপের দিকেই পাল্লা ভারী! নেটিজেনদের একাংশ তো করজোরে পরিচালকের কাছে অনুরোধ-ই রেখে বসেছেন যে, 'ফেলুদাকে ছেড়ে দিন সৃজিতদা।' 'দার্জিলিং জমজমাট' নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, ঠিক সেইসময়েই মুখ খুললেন টোটা রায় চৌধুরি।
নেটিজেনরা ফেলুদার প্রতি যেভাবে ঘৃণা, ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন, তাতে কিন্তু বেজায় চটেছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নয়া 'ফেলু মিত্তির' টোটা। বললেন, "আমার বিরুদ্ধে যে বিষোদগার কার হয়েছে- জঘন্যতম ফেলুদা, আড়ষ্ট, কেতাবাজ, চিবিয়ে কথা বলে আরও নানান বিশেষণে আমায় ভূষিত করা হয়েছে। আমি নিজে যতবারই অনুরোধ বা বিনতি করি না কেন, সৌমিত্রবাবু বা সব্যসাচীবাবু যে হিমালয়-সম, ওনাদের সঙ্গে আমার তুলনা করা আর সৌরভ বা ধোনির সঙ্গে ক্যাম্বিস বলের পাড়ার ক্রিকেটারের তুলনা করা, একই পর্যায়ের। তাই দয়া করে তুলনা টানবেন না। কিন্তু তারপরেও কিছু মানুষ তুলনা টানবেনই কারণ মানুষকে ছোট করে যে অনাবিল আনন্দ আরোহণ করা যায় এবং নিজের ক্ষুদ্রতা থেকে যে ক্ষণিকের মুক্তি পাওয়া যায় তা থেকে কিছু মানুষ কেন নিজেদের বঞ্চিত করবেন! তাই বারবার তুলনা টানা এবং ট্রোল করে পৈশাচিক আনন্দে লিপ্ত হওয়া। এটাও তো একপ্রকার বিনোদন।"
এখানেই অবশ্য থামেননি টোটা রায় চৌধুরি। পরিচালক সৃজিতকে নিয়ে যেভাবে ঠাট্টা-তামাশা হচ্ছে তারও প্রতিবাদ করে বলেন, "সাধারণত, সমালোচনাকে আমি স্বাগত জানাই। এর থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। এবারও যেমন শিখেছি। তবে এবারে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল। বেশ কিছু সমালোচনা গঠনমূলক তো নয়ই। অসম্ভব ঘৃণা মিশ্রিত। যার প্রধান উদ্দেশ্যই হল পরিচালককে বা অভিনেতাদের হেয় করা। বেশ কিছু মানুষ জোরের সঙ্গে দাবি করছেন যে, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের গত কয়েকটা কাজ নাকি পাতে দেওয়ার অযোগ্য। অথচ তাঁরা সেই অযোগ্য কাজগুলোই যে কেন পরপর দেখছেন সেই রহস্যের সমাধান করতে হয়ত ফেলুদাকেই ডাকতে হবে! ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি যে সৃজিতের মত পরিশ্রমী, কাজের প্রতি সমর্পিত ও কাজপাগল পরিচালক আমি আমার পুরো কেরিয়ারে (প্রায় পঁচিশ বছরে) দুটি দেখিনি।"
<আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছে অসম, বিপুল আর্থিক সাহায্য ‘দিলদার’ আমির খানের>
কথাটা যে ভেবেচিন্তেই টোটা লিখেছেন এবং কেন? সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন- "আমি কিন্তু বেশ কিছু বড়মাপের পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি এবং ভেবেচিন্তেই কথাটা লিখলাম। দুম করে আবার বলে বসবেন না যে পরের ছবিতে চান্স দিচ্ছে নাকি! ও কিন্তু ছবিতে আমাকে কোনোদিন নেয়নি এবং বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে আগামীতে যে ছবিগুলো করছে সেগুলোতেও আমার স্থান নেই। আর ইদানীং মুম্বইয়ে কিঞ্চিৎ কাজ করছি বলে এটা জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে, বাংলা থেকে সৃজিতই একমাত্র পরিচালক যাকে ওঁরা চেনেন এবং যার কাজের সম্বন্ধে ওঁদের সম্যক ধারণা আছে। তা সে করণ জোহর হোক, রণবীর সিং বা আলিয়া ভাট হোক বা শাবানা আজমি। 'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি'তে এই অধম একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করছে এবং সেটে যেদিন সৃজিত এসেছিল, সেদিন সেটা প্রত্যক্ষ করেছি বলেই লিখছি। 'গেঁয়ো যোগী যে ভীখ পায় না' সেটা আমার থেকে ভালো আর কে জানবে।"
তবে এই পরিসরে উল্লেখ করা ভাল, 'দার্জিলিং জমজমাট' সিরিজটি কিন্তু দশ দিনের মধ্যেই বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ইতিহাসে রেকর্ড করে ফেলেছে। এযাবৎকাল বাংলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শক এই সিরিটি দেখেছেন। যে প্রেক্ষিতে টোটা কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি দর্শককে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন