/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/bhutan-tourism-explained.jpg)
ভুটানে বিরাট কোহলি-অনুষ্কা শর্মা (ফাইল ছবি)
ভূটান যাত্রার খরচ বাড়তে পারে এ দেশের পর্যটকদের। হিমালয়ের পাদদেশের এই দেশটিতে নতুন দুটি খরচ দিতে হতে পারে ভারতীয়দের। সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন ফি এবং পারমিট প্রসেসিং ফি এবার থেকে ভারতীয় পর্যটকদের ক্ষেত্রেও লাগু করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে এই দেশ।
ভূটানের বিদেশমন্ত্রী দেশের নতুন খসড়া পর্যটন নীতি নিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দ্য হিন্দু পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অনামা সূত্র উদ্ধৃত করে খবরটি জানান হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি
এখন ভারতীয়, বাংলাদেশি ও মালদ্বীপের নাগরিক ছাড়া ভূটানের সমস্ত বিদেশি পর্যটককেই ভরা মরশুমে ২৫০ মার্কিন ডলার এবং অফ সিজনে ২০০ মার্কিন ডলার করে দিতে হয়।
ভুটানে অফ সিজনে হল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতের সময়, এবং জুন থেকে অগাস্টের বর্ষার সময়।
এর মধ্যে থাকার খরচ, ভূটানের মধ্যে যাতায়াতের খরচ, একজন ট্যুরিস্ট গাইডের খরচ এবং নন-অ্যালকোহলিক ড্রিঙ্কের খরচ ও প্রবেশমূল্য ধরা থাকে। এর মধ্যে স্থিতিশীল উন্নয়নের দরুন ৬৫ ডলারের দৈনিক চার্জও ধরা থাকে। ধরা থাকে পর্যটকের ভিসা খরচও।
এ ছাড়া কোনও পর্যটক একা ভ্রমণ করে ৪০ মার্কিন ডলার ও দুজন বা তার বেশি একসঙ্গে ভ্রমণ করলে মাথাপিছু ৩০ ডলার করে অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে হয়।
আরও পড়ুন, ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশি
অর্থাৎ এর মধ্যে ভূটানে যাওয়া-আসা এবং সেখানে কেনাকাটি, ও বকশিস ছাড়া সব খরচই ধরা থাকে।
তবে ভারত, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের পর্যটকদের এই খরচ দিতে হয় না।
এই দেশের নাগরিকদের ভূটান যাবার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না এবং ন্যূনতম ২০০ বা ২৫০ ডলার খরচের আওতাতেও পড়েন না তাঁরা। এর ফলে ভারতীয় পর্যটকরা নিজেদের মত করে পর্যটনের বাজেট স্থির করতে পারেন, থাকা-খাওয়ার নিজস্ব বন্দোবস্ত করতে পারেন।
লোনলি প্ল্যানেট নামক পর্যটন পোর্টাল অনুসারে থিম্পুর বাজেট হোটেলের এক রাত থাকার খরচ ২০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে, রেস্তোরাঁয় একজনের খাবার খরচ ৭ থেকে ১৫ ডলারের মধ্যে। লোনলি প্ল্যানেটের হিসেব অনুসারে উঁচু মানের হোটেলের খরচ ৫০০ থেকে ৭০০ ডলারের মধ্যে।
এই বদল কেন
ভূটানের উদ্বেগের কারণ হল পর্যটকের স্রোতের কারণে সে দেশের ভঙ্গুর হিমালয় বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব পড়েছে।
ভূটানে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যান ভারত থেকে- ২০১৮ সালে ভূটানের মোট ২ লক্ষ ৭৪ হাজার পর্যটকের মধ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বা ৬৬ শতাংশ ছিলেন ভারতীয়।
ভারত থেকে যাওয়া এই বিশাল সংখ্যক পর্যটককে ভিসা ফি এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন ফি না দিতে হওয়ায় ভূটান বেশ কিছু পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বছরের এপ্রিল মাসে ভূটানের সংবাদপত্র কুয়েনসেলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশের চতুর্থ পে কমিশন আঞ্চলিক পর্যটকদের জন্য স্থিতিশীল উন্নয়ন ফি লাগু করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান হয়।
৫০০ গুলট্রাম (ভুটানি মুদ্রা) মাথাপিছু যদি ধার্য করা হয় তাহলে বছরে ৪২৫ মিলিয়ন গুলট্রাম আনুমানিক রাজস্ব আদায় হবে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়। কমিশন একই সঙ্গে সরকারকে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ধার্য স্থিতিশীল উন্নয়ন ফি ৪৫ ডলার থেকে বাড়ানো যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখার প্রস্তাব দেয়। কমিশনের যুক্তি যুক্তি ছিল গত ৪০ বছর ধরে এই হার অপরিবর্তিত রয়েছে।
ভুটানের মুদ্রা গুলট্রাম এবং ভারতীয় মুদ্রার মান একই।
ওই রিপোর্টে ভুটানের পর্যটন পরিষদের ডিরেক্টর জেনারেল দোর্জি ধ্রাধুলকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আঞ্চলিক পর্যটকদের জন্য ন্যূনতম ফি লাগু করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ধার্য ফি ৬৫ ডলার থেকে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এর সঙ্গে পে কমিশনের রিপোর্টের কোনও যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ওই রিপোর্টে ধ্রাধুলকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, "ফুন্টশোলিংয়ে যেসব আঞ্চলিক পর্যটকরা আসেন এবং তাঁদের নিয়ন্ত্রণ এবং তাঁদের জন্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় তাঁদের এবং অন্য অতিথিদেরও অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে।"
"এই আঞ্চলিক পর্যটকরা নিজেরা আসেন, তাঁদের গাইড করার কেউ থাকে না, ফলে তাঁরা অনেকসময়ে এমন কাজকর্ম করে ফেলেন যা গণ্ডির বাইরে চলে যায়। গাইড না থাকার কারণে কোনটা করা যায়, কোনটা করা যায় না সে সম্পর্কে তাঁদের সম্যক ধারণা থাকে না। এতে তাঁদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় যা ঠিক নয়।"
গত মাসেই এক ভারতীয় পর্যটক একটি পবিত্র বৌদ্ধ স্মৃতসৌধে উঠে পড়ায় ভুটান পুলিশ তাঁকে আটক করে।