তিন দশক আগে ১৯৯১ সালে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। তাঁর হত্যাকাণ্ডে ছয় জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি মহিলা বন্দি নলিনী শ্রীহরণ। গত ১১ নভেম্বর, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মুক্তি পেয়েছে নলিনী। ১৯৯১ সালের ২১ মে, রাজীব গান্ধী যখন এলটিটিইর হামলায় প্রাণ হারায়, সেই সময় শ্রীপেরুমবুদুরে নলিনীই ছিল একমাত্র জীবিত জঙ্গি। গ্রেফতারির ৩১ বছর বাদে সে গত ১২ নভেম্বর জেল থেকে ছাড়া পায়।
কে এই নলিনী শ্রীহরণ?
ইথিরাজ কলেজ থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতক নলিনী শ্রীহরণ চেন্নাইয়ে এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছিল। মা পদ্মাবতী ছিলেন পেশায় নার্স। আর বাবা পি শংকরা নারায়ণন পুলিশ ইনস্পেক্টর। তিনি ২০১৬ সালে মারা যান। তার মা-বাবার মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল না। ফলে নলিনীর শৈশবও সুখে কাটেনি। কিশোরী বয়সেই তারা বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যায়। তিন সন্তানের মধ্যে নলিনীই ছিল সবচেয়ে বড়।
রাজনীতির যোগাযোগ ছিল না
এই মামলার অন্য আসামিদের মতো ব্যাপারটা নয়। নলিনী বা তার পরিবারের সঙ্গে কোনওদিনই কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। অন্যান্য বন্ধুদের মতই তার ভাই বাগ্যনাথনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল শ্রীহরণ ওরফে মুরুগানের। অন্যান্য বন্ধুদের মত মুরুগানকেও বাড়িতে নিয়ে এসেছিল বাগ্যনাথন। মুরুগান লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (LTTE)-এর সদস্য ছিল। পরে নলিনীকে বিয়ে করে।
রাজীব হত্যা
গত ৩১ বছর আগে ১৯৯১ সালের ২১ মে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নির্বাচনের আগে একটি সমাবেশে যোগ দিতে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুরে গিয়েছিলেন। সেখানে একজন এলটিটিই মহিলা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর বিস্ফোরণে তিনি প্রাণ হারান। ধনু, যাকে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সমাবেশ চলাকালীন গান্ধীর কাছাকাছি গিয়েছিলেন। তাঁর সালোয়ার কামিজের মধ্যে ছিল বোমাটি। বিস্ফোরণের আগে গান্ধীর পা স্পর্শ করার মত নত হয়েছিলেন। রাজীব গান্ধী ছাড়াও ওই বিস্ফোরণে আরও প্রায় ১৫ জন নিহত হয়েছিলেন। আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন।
টাডা হেফাজতে স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি
টাডা হেফাজতে নেওয়া নলিনী স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতিতে বলেছে যে সে শ্রীলঙ্কার দুই মহিলা সুভা এবং ধনুকে আতিথ্য দিয়েছিল। তারা ওই হামলা চালিয়েছিল। হত্যার দিন তাদের পরা জামাকাপড় কিনতে নিয়ে যাওয়া, তাদের পরিকল্পনা আগে থেকে জানা এবং রাজীবের নির্বাচনী সমাবেশে তাদের সঙ্গে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে নলিনীর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- গেহলট আর পাইলটের কোন্দলে রাজস্থান কংগ্রেসে ডামাডোল, মজা নিচ্ছে বিজেপি
হত্যাকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
শিবরাজন, সুভা, ধনু এবং ফটোগ্রাফার এস হরিবাবুর সঙ্গে নলিনী বাসে চেপে শ্রীপেরামবুদুরে যান। চার্জশিটে বলা হয়েছে, ধনু নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার পর নলিনী, সুভা এবং এলটিটিই মাস্টারমাইন্ড শিবরাজন পালিয়ে যায়। হরিবাবুও ছিল এলটিটিইর সমব্যথী। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। হরিবাবুর ক্যামেরাতেই নলিনীর সঙ্গে হত্যাকারীদের ঘনিষ্ঠতার ছবি ধরা পড়ে।
কীভাবে ধরা পড়েছিল
নলিনী এবং মুরুগান হত্যার পর বেশ কয়েকদিন আত্মগোপন করে ছিল। ১৯৯১ সালের ১৫ জুন, চেন্নাইয়ের সাইদাপেট বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। যদিও ষড়যন্ত্রে নলিনীর ভূমিকা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মধ্যেও বিতর্কের বিষয় ছিল। কিন্তু, রাজীবের খুনিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নলিনীকে এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিল। গ্রেফতারের সময় নলিনী গর্ভবতী ছিল।
Read full story in English