বিশ্বব্যাপী কোভিডের নতুন স্ট্রেনে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যে ব্রিটেন স্ট্রেনের পাশাপাশি ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনের হদিশ মিলেছে দেশে। এই তিনটি মিউটেট স্ট্রেন ঘিরে দেশে মোট আক্রান্ত ১৫০ ছাড়িয়েছে। এই আবহে বন্দে ভারত প্রকল্পে এবং নির্দিষ্ট কিছু দেশের সঙ্গে যৌথ চুক্তির মাধ্যমে ‘বাবল’ উড়ানে বিদেশ থেকে ভারতে নিয়মিত যাত্রীরা আসছেন। তাই, নতুন স্ট্রেনের সংক্রমণ রুখতে সোমবার মধ্যরাত থেকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করল ভারত সরকার।এই নিয়ম মূলত ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
আগে বিধি ছিল, বিদেশ থেকে আসার উড়ান ধরার ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন আগে আগে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার (RT-PCR Test) নেগেটিভ রিপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে। এবার বাকি সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে ওই নিয়ম একই থাকলেও ইউরোপ, ইংল্যান্ড এবং পশ্চিম এশিয়ার সমস্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ভারতে নামার পরে আবার নতুন করে পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে যাঁরা ভারতে আসেন, তাঁরা মূলত ইউরোপ বা পশ্চিম এশিয়া ঘুরেই ভারতে আসেন।
এই মুহূর্তে কলকাতায়, মূলত দুবাই, দোহা ও বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীরা আসছেন। এ দিন কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তবে, সপ্তাহে প্রায় সাত দিনই দুবাই থেকে এবং তিন দিন দোহা থেকে যাত্রীরা এলে নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের পরীক্ষা করা হবে। কৌশিকবাবুর কথায়, ‘সোমবার রাতেই দোহা ও দুবাইয়ের দু’টি উড়ান আসার কথা। মঙ্গলবার সকালেও দুবাই থেকে একটি উড়ান আসবে।’ এদিকে, দেশে করোনার নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত হিসেবে ছয় জনের হদিশ মিলেছে। সোমবার এই ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রে খবর, ব্রিটেন স্ট্রেনে আক্রান্ত হিসেবে দেশে ১৮৭ জনের হদিশ মিলেছে। ৫ জন দক্ষিণ আফ্রিকান স্ট্রেন আর ১ জন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রেনে আক্রান্ত। এখনই সতর্ক না হলে এই দুটি স্ট্রেন আগামি দিনে আরও ভয়াবহ অতিমারি দেকে আনতে পারে। সম্প্রতি এমন দাবি করেছেন গবেষকরা। যদিও এই দুটি স্ট্রেন কেরল ও মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বারার নেপথ্যে কিনা, তা জানা যায়নি। এদিন জানান নীতি আয়োগের সদস্য চিকিৎসক ভিকে পাতিল।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, দেশে এখন গড় সংক্রমণের হার ৫.১৯%। প্রতিদিন এই হার কমার লক্ষ্মণ মিলেছে। তিনি জানান, ‘দেশের মোট সক্রিয় সংক্রমণের ৭৫% কেরল আর মহারাষ্ট্রের। ৩৮% সক্রিয় সংক্রমণ কেরলের আর ৩৭% মহারাষ্ট্রের।‘
তবে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উদ্বেগ টিকাকরণ অভিযান শুরুর পরেও দেশে করোনা সংক্রমণে রাশ টানা যাচ্ছে না। বরং নতুন বছরের নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে গোটা দেশ জুড়ে নয়, মূলত ৫টি রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিরই প্রভাব পড়েছে জাতীয় করোনা-চিত্রে।
মহারাষ্ট্র ও কেরলের পাশাপাশি পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিসগড়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। ফলে ফের আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৪২১। বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের বেশি।
গত বছরের নভেম্বরের শেষ পর্বের পর ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির হার তিন শতাংশ পেরোল বলে সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে। গত, ২৭ নভেম্বর সংক্রমণ বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৩.৮৫ শতাংশ। গত সপ্তাহের গোড়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধির হার নেমে এসেছিল ১.৫৭ শতাংশে। কিন্তু তার পর থেকেই তা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে।
অপরদিকে, ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ পর্যালোচনা করে পাঞ্জাবে নতুন কোভিড বিধি লাগু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। জানা গিয়েছে, বদ্ধ জায়গায় সর্বাধিক ১০০ জন জমায়েত করতে পারবেন। আর খোলা জায়গায় সর্বোচ্চ ২০০ জন জমায়েত করতে পারবেন। পাশাপাশি মাস্ক পরা ও সামাজিক দুরত্ব বজায় বাধ্যতামুলক। এমনটাই সুত্রের খবর।