বেশি নয়, দু-তিন দশক আগেও কার্তিক মাস পড়লেই সন্ধে হলে বাংলার ঘরে ঘরে জ্বলে উঠত আকাশ প্রদীপ। হেমন্তের বুক ঝিম করা ভাব, মন কেমন, উত্তরে হাওয়ার কাছে আসতে থাকা, দিন ছোট হয়ে আসা, ভোর বেলা ঘাসের আগায় জমে থাকা শিশির, সবের সঙ্গে মিশে আছে দিন ফুরোলে বাড়ির চাল অথবা ছাদের ওপর বাঁশের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া একটা প্রদীপ। আকাশ প্রদীপ। গ্রাম বাংলার বড় চেনা ছবি ছিল আকাশ প্রদীপ।
হিন্দু পুরাণ মতে আশ্বিন মাসের অমাবস্যায় মহালয়ার দিন পূর্ব পুরুষকে উদ্দেশ্য করে তর্পণ করা হয়। তার পরের একটা মাস মৃত পূর্ব পুরুষেরা ধরাধামে আসেন। থেকে যান আমাদের সঙ্গে। আনন্দ উৎসব উদযাপনে শামিল হন ক'টা দিন। কালী পূজার অমাবস্যায় তাঁদের ফিরে যাওয়ার পালা। ফিরে যাবেন পরলোকে। কে পথ দেখাবে তাঁদের? তাই আকাশ প্রদীপ জ্বেলে রাখা রাতভর। এই সংস্কৃতিতে বারবার ফিরে এসেছে অতীতের কাছে ফিরে যাওয়া। অতীত মানে স্মৃতি। প্রাচ্য দর্শণ সবসময় স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর সেই শ্রদ্ধা মিশে রয়েছে, যত্ন মিশে রয়েছে ওই সাঁঝবেলায় জ্বালিয়ে রাখা আকাশ প্রদীপে।
আরও পড়ুন, ভূত চতুর্দশীতে কেন জ্বলে চৌদ্দ প্রদীপ? খেতে হয় কোন শাক?
আধুনিক সময়ে অতীতের সঙ্গে যোগ কমছে। স্মৃতির সঙ্গে বাড়ছে দূরত্ব। হেমন্তের সন্ধেয় আর জ্বলে না আকাশ প্রদীপ। বিস্মৃতিতেই সুখী আমরা। অতীতের সঙ্গে, ঐতিহ্যের সঙ্গে কমে আসছে টান। সাঁকোটা দুর্বল হচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে একটু একটু করে।ফিকে হয়ে আসছে আকাশ প্রদীপ...