Advertisment

গড়ে উঠছে গড়িয়াহাট চত্বরে 'ইন্সটা ক্যাফে'র রমরমা বাজার

"আজকাল ছেলেমেয়েরা চায় একটু সুন্দর জায়গা হোক, যেখানে আড্ডা মারতে মারতে বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর ছবি তুলবে, বা খাবারটা নিয়ে লিখবে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata cafes instagram

দেখলেই ছবি তুলতে ইচ্ছে করবে, এই মন্ত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে একাধিক ক্যাফে।

এক কাপ কফি টেবিলের উপর রাখতেই আমার হাতটা অভ্যাসমতো ফোনের দিকে চলে গেল - দুটো ছবি তুলে পোস্ট করতেই পটাপট কমেন্ট আসতে থাকল - 'কোথায় রে এই নতুন ক্যাফেটা!' 'কী ইন্সটা-ফ্রেন্ডলি!' টুকটাক উত্তর দিতে দিতে খেয়াল হলো, এই ইন্সটা-ফ্রেন্ডলি ব্যাপারটা কিন্তু আজকাল বেশ দেখা যায়।

Advertisment

পনেরো থেকে পঁয়তিরিশ, অর্থাৎ মিলেনিয়াল এবং জেনারেশন Z এর ছেলেমেয়েরা ইনস্টাগ্রামের অনুগামী। ইন্সটাগ্রামার সোহম সিন্হা ওরফে কলকাতা ডিলাইটস (@kolkatadelites) এর কথায়, "ইনস্টাগ্রাম অনেক সহজ ফেসবুকের চেয়ে, এখানে লোকে যা দেখতে চায়, তাই দেখতে পায়। যদি কিছু ভালো না লাগে, চুপচাপ সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায়, আবার যা দেখতে ইচ্ছে করছে, সেই অনুযায়ী হ্যাশট্যাগ দিয়ে সার্চ করলেই তা মুহূর্তের মধ্যে চলে আসে।"

কলকাতার অনেক ক্যাফে নিজেদেরকে ইন্সটা-ফ্রেন্ডলি বলে - অর্থাৎ এখানকার সাজ, সরঞ্জাম, খাবারদাবার, ছবিতে দেখলে দিব্যি লাগে, আর অনেকেই এখন 'এক্সপেরিয়েন্স' এর খাতিরে খরচ করতে চান। ফটোগ্রাফার সায়ন্তন সরকার বলেন, "আমি তো বাড়িতেই খাবারের অর্ডার দিতে পারি - কিন্তু একটা সুন্দর ছিমছাম ক্যাফেতে বিকেলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে বসে একটু গল্প করবার আনন্দই আলাদা।" গড়িয়াহাট-গোলপার্কের চারপাশে তাই জমে উঠেছে ক্যাফের বাজার, যার কয়েকটার কথা না বললেই নয়। ফুড ব্লগার পূর্ণা ব্যানার্জী খোঁজ দিলেন গড়িয়াহাট চত্বরে তাঁর পছন্দের 'ইনস্টাগ্রাম-ফ্রেন্ডলি' ক্যাফের।

kolkata cafes instagram ক্যাফের চেহারা দেখেই বসতে ইচ্ছে করবে, তবেই না

মিসেস ম্যাগপাই (Mrs Magpie)

২০১৩ সালে সোহিনী বসুর কেয়াতলা রোডের এই ক্যাফের প্রেমে পড়েছিল কলকাতা - ছোট্ট ছোট্ট কাপকেকের উপর বসে থাকে মার্জিপ্যানের মৌমাছি। গোলাপি-সাদা দেওয়াল এবং ঘন হট চকোলেটে চুমুক দেওয়ার আনন্দ ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ারই মতো ছিল। ছবির মতো সুন্দর সেই ক্যাফে এখন সল্টলেক, পার্ক সার্কাস, এবং পার্ক স্ট্রিটেও তৈরী করে নিয়েছে নিজের ঠিকানা, তবে গরম চীজ স্কোন আর হট চকোলেটের স্বাদ বদলায়নি।

পটবয়লার ক্যাফে (Potboiler Cafe)

বই ভালোবাসলে পটবয়লার ক্যাফেতে অবশ্যই আশা উচিত - পূর্ণদাস রোডে ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের কাছে তিনতলায় সুন্দর এই ক্যাফেটাতে ঢুকলেই দেখা যায় সারি সারি বইয়ের সম্ভার। একদিকে বইপ্রেমীদের জন্যে সেলফি কর্নার, অন্যদিকে প্রত্যেকটা পানীয়ের নাম কোনো না কোনো বইয়ের নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়ানো। যদি জর্জ অরওয়েল ভালো লাগে, চেখে দেখতেই পারেন 'নাইন্টিন এইটি পোর', আর হ্যারি পটারের প্রেমে খেয়ে দেখুন 'বাটারবিয়ার লাটে'।

kolkata cafes instagram যাঁরা পড়তে ভালবাসেন, তাঁরা শুধু কফিই খাবেন না, ডুবে যাবেন বইয়ের পাতায়ও

রোস্টারি (Roastery)

হিন্দুস্তান পার্কে সাউথ ইন্ডিয়া ক্লাবের ভেতরে রোস্টারি। কলকাতায় এটাই তাদের প্রথম শাখা। নিশান্ত সিনহার ইচ্ছে ছিল, এমন একটা ক্যাফে তৈরি করবেন, যেখানে কফি রোস্ট করে গুঁড়িয়ে নানাভাবে ব্যবহার করা হবে, তাই এখানে কিছুই ফেলনা নয় - কফি বীনের খোসাটা অবধি কাসকারা তৈরী করতে ব্যবহার হয়। এখানে রকমারি কফির বাহার তাক লাগানোর মতো। যদি এক্সপেরিমেন্ট করার ইচ্ছে না থাকে, তবে এগ চীজ স্যান্ডউইচ বা পিনাট বাটার ব্লেন্ড কোল্ড কফির কথা ভাবতেই পারেন, কিন্তু কফি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে চুমুক দিতেই হবে এদের 'নাইট্রো ব্রু'তে।

ট্রাইব ক্যাফে (Tribe Cafe)

বই, ইন্ডোর গেম্স্, মিউজিক কর্নার, লাইভ পারফরম্যান্স - সবকিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে ট্রাইব ক্যাফেতে। কর্ণধার শিল্পা চক্রবর্তী জানালেন, "আজকাল ছেলেমেয়েরা চায় একটু সুন্দর জায়গা হোক, যেখানে আড্ডা মারতে মারতে বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর ছবি তুলবে, বা খাবারটা নিয়ে লিখবে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। তাই আমরা একটু ভেবে এমনভাবেই আমাদের ক্যাফেটা সাজিয়েছি যে তারা এসে দেখে খুশী হয়, আনন্দ পায়, আর বারবার ফিরে আসে। আমরা চাই যে আমাদের ক্যাফেতে সবাই নিজেদের বন্ধুদের দলবল নিয়ে আসবে আর যা পছন্দ - ধরো গান, বাজনা, বই, খাবার - নিজেদের প্যাশন খুঁজে নেবে।"

এইটথ ডে (8th Day)

প্রথমটা বেকবাগানে আলিয়াঁস ফ্রঁসের উল্টোদিকে খুললেও দ্বিতীয় এইটথ ডে বছরখানেক আগে খুলেছে বিবেকানন্দ পার্কের কাছে। কফি এবং নিউ ইয়র্ক স্টাইলের ব্যাগেল ছাড়াও পাওয়া যায় গ্লেনবার্নের চা আর বেশ কিছু মার্কিন মিষ্টি - যেমন সিনামন রোল, রেড ভেলভেট কাপকেক, অ্যাপেল পাই, শর্টব্রেড।

ডেইলি ক্যাফে (Daily Cafe)

স্বাস্থ্য এবং স্বাদ - দুটোর কথাই মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে দেশপ্রিয় পার্কের কাছের ডেইলি ক্যাফে - শেফ উর্বীকা কানোই-এর মেনুতে আছে কুইনোআ রিসোত্তো, পর্ক বেলি স্লাইডার, ভিয়েতনামের কফি, আবার ডায়েট-ফ্রেন্ডলি খাবার, এবং যাঁরা কেটো বা অ্যাটকিন্স ডায়েট করছেন, তাঁদের জন্যেও সুখবর। আজকালকার ডায়েট-প্রিয়, জিমে যাওয়া মানুষদের কথা মাথায় রেখে এখানে থাকে নানারকমের রুটি, বিস্কুট, ডার্ক চকলেট, কম্বুচা (অল্প গ্যাঁজানো চা), আর সুগার-ফ্রি কেক, যাতে কার্বোহাইড্রেট কম, অথবা একেবারেই নেই।

Advertisment