The State Tree of West Bengal: Symbolism, Ecology, and Cultural Relevanc: ছাতিম গাছ (Blackboard Tree) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য উদ্ভিদ। এই গাছ 'অ্যাপোসাইনেসি' বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল এলস্টোনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)। আগেকার দিনে ছাতিমের কাঠ দিয়ে শিশুদের লেখার তক্তা বানান হত। মনে করা হয়, সেই কারণে এই গাছের বৈজ্ঞানিক নামের প্রথমে 'এলস্টোনিয়া' এবং পরে 'স্কলারিস' কথাটি যোগ করা হয়েছে। ছাতিম গাছের সাতটি পাতা একসঙ্গে থাকে। এই কারণে একে সংস্কৃত ভাষায় 'সপ্তপর্ণ' বা 'সপ্তপর্ণা' বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাঙালির কাব্য এবং সাহিত্যে ছাতিম গাছের বিশেষ জায়গা আছে। বিশেষত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শান্তিনিকেতনের কারণে। এই গাছ সাধারণত ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বহুশাখা বিশিষ্ট গাছটির পাতার ওপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা পাতা একই মূলকে ঘিরে ৪ থেকে ৭টা পর্যন্ত থাকে। শাখার শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংয়ে থোকা থোকা ছোট আকারের ফুল ফোটে। এর ফল ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং সরু হয়। সাধারণত একটা বৃন্তে দুটো করে থাকে। ছাতিমের বীজ হয় লম্বাটে ডিমের আকারের। এর কিনারায় আঁশ থাকে। এই গাছের ভিতরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো প্রচুর কষ থাকে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গাছের নীচেই বহু কবিতা রচনা করেছিলেন। এই গাছ মূলত ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ। আর্দ্র, কাদামাখা, জলে ভেজা জায়গায় ছাতিম গাছ বেশি জন্মায়। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়া-নিউগিনি, ফিলিপাইনস, অস্ট্রেলিয়া (কুইন্সল্যান্ড), চিনেও (গুয়াংজি, ইউনান) এই গাছ পাওয়া যায়।
ছাতিম গাছ থেকে ওষুধ
ছাতিমের কষ ওষুধ হিসেবে ঘা বা ক্ষতে অনেকে লাগিয়ে থাকেন। ছাতিম গাছের ছাল শুকিয়ে ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়। চর্মরোগেও ছাতিমের ব্যবহার প্রচলিত। রক্তের চাপ কমাতেও ছাতিম উপকারী। এর কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র, প্যাকিং বাক্স, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইয়ের কাঠি, কফিন, চামচ, কর্ক তৈরি হয়।
আরও পড়ুন- বিখ্যাত পরিচালক থেকে জনপ্রিয় গায়িকা, বিশ্বের ১০ ধনী তারকার তালিকায় কারা? ভারতের কেউ আছে?
পরিবেশগত দিক থেকেও ছাতিম গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দূষণ রোধে সহায়তা করে এবং শহুরে পরিবেশে অক্সিজেনের উৎস হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, ছাতিম গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই রোপণযোগ্য, যা শহরের সবুজায়নে সাহায্য করে। ছাতিম গাছ শুধু একটি গাছ নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য প্রতীক। রাজ্য উদ্ভিদ হিসেবে সেই কারণেই ছাতিম গাছ বাংলার গর্ব ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা বহন করে থাকে।