মাত্র ৩৬ রানে অলআউট! বিশ্বাসই হচ্ছে না বাংলাদেশের, দিন রাতের টেস্টে ভারতের প্রথম গোলাপি বলে টেস্ট খেলা প্রতিপক্ষের। গতবছরেই ইডেনে পর্যুদস্ত করে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল কোহলিরা। আড়াই দিনে। আর এবার কোহলিদের আড়াই দিনে বধ করল অজিরা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিদেশের মাটিতে এভাবে শুইয়ে পড়া- যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট মহলের!
ইডেনে লিটন দাস রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার পর মাঠে নেমেছিলেন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'কে বলে দিয়েছেন, “আসলে গোলাপি বলে ব্যাটিং করা কঠিন। দ্বিতীয় ইনিংসে তো আরও কঠিন। কারণ উইকেটটা ওরকম থাকে না যেমনটা থাকে স্বাভাবিকভাবে। একই সঙ্গে রাতে বল মুভমেন্ট করতে থাকে। ওরা (অস্ট্রেলিয়া) হয়তো ভালো বোলিং করেছে। যদিও আমি পুরো খেলাটা দেখিনি।”
আরো পড়ুন: অনুষ্কার গর্ভযন্ত্রণাতেই নাকি লজ্জার হার, বেনজির আক্রমণের মুখে বিরাট ঘরণি
বাংলাদেশ ও ভারতকে কাকতালীয়ভাবে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছিল গোলাপি বলের টেস্ট। গত বছর কলকাতায় ইডেন টেস্ট নিয়ে দুদেশের মধ্যে প্রচণ্ড মাতামাতি হয়েছিল। আর হবেই না বা কেন, গোলাপি টেস্ট বলে নতুন বোর্ড সভাপতি ইডেন গার্ডেন্সে চাঁদের হাট বসিয়েছিলেন। সেখানে কে ছিলেন না! সৌরভের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন খোদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লা সৌরভ ও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ঢাকার মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ইডেনে। সৌরভের চমকের এখানেই শেষ ছিল না। কলকাতার মহারাজ একেবারে নাম ধরে ধরে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট দলের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ক্রিকেটের নন্দন কাননে।
আরো পড়ুন: শনিবারের কালবেলা! একের পর এক মহালজ্জার রেকর্ড ভারতের, জানুন কেলেঙ্কারির সাতকাণ্ড
এ তো গেল বাংলাদেশের কথা। ভারতের রথী মহারথীরাও ইডেনের গোলাপি টেস্টে হাজির হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা সেই টেস্টের সব সদস্যই ছিলেন। বাদ যাননি কপিল দেব থেকে ফারুখ ইঞ্জিনিয়ারদের মত প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেট নক্ষত্ররা। এত ঘটা করে যে জন্য আয়োজন সেই মাঠের খেলায় মুমিনুল হকের বাংলাদেশ যারপনারই হতাশ করেছিল অবশ্য। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১০৬ রানে। ভারত বিরাট কোহলির ১৩৬ রানের সৌজন্যে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে দেয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের দৌলতে তুলতে পেরেছিল মাত্র ১৯৫ রান। মাত্র আড়াইদিনেই ম্যাচ শেষ। এবার যা হল ভারতের, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
হতাশ হয়েছিলেন কলকাতার দর্শকরা। হতাশ গোটা বাংলাদেশও। টেস্টটাকে আরেকটু প্রলম্বিত করা গেল না! আক্ষেপ মিশে গিয়েছিল গঙ্গা থেকে পদ্মায়। গোলাপি টেস্ট নিয়ে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা তখন উধাও। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অতিথিরা একটু অপ্রস্তুতই হয়ে গিয়েছিলেন! ভারতে বাংলাদেশের সমালোচনাও হয়েছিল।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) অ্যাডিলেডে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত যেভাবে ধসে পড়ল তা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। টেস্ট ইতিহাসেই সর্বনিম্ন রানে (৩৬) অলআউট হয়ে গিয়েছে বিরাট কোহলির টিম ইন্ডিয়া। ভারতও পুরো তিনদিন খেলতে পারেনি। আড়াই দিনে ম্যাচ শেষ!
সেই তুলনা টানলে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা একটু স্বস্তি পেতেই পারেন। বাংলাদেশ তো ভারতের মতো এত টেস্ট খেলার সুযোগ পায় না!
ইডেনে গোলাপি বলে টেস্ট খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ দলের কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও আয়োজন করা হয়নি গোলাপি বলের টেস্ট। মিরাজ সেই প্রসঙ্গ টেনে বলে গেলেন, “আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবেই খেলেছি। গোলাপি বলে এর আগে কখনো খেলিনি৷ আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে ভারতেরও কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু ওদের সবাই বিশ্বমানের ক্রিকেটার৷ আমরা আসলে মানিয়ে নিতে পারিনি। তাই আমাদের জন্য গোলাপি বলে টেস্ট কঠিন ছিল। তারপরও আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিং করেছিল।”
অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংসে ভারত ২৪৪ রান তুলে লিড নিয়েছিল৷ সেই দলটিই কি-না দ্বিতীয় ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবল। মিরাজ এটাকে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোন থেকেই দেখছেন, "ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে। আমি মনে করি ক্রিকেটে যে কোনো কিছই হতে পারে৷ ভারত যে খারাপ দল সেটা বলার উপায় নেই। ভারত বিশ্বমানের দল। তাদের খেলোয়াড়রাও বিশ্বমানের৷”
বাংলাদেশ দল ভবিষ্যতে গোলাপি বলে টেস্ট খেলতে চাইলে প্রচুর ম্যাচ খেলার যে বিকল্প নেই সেটা মনে করিয়ে দিলেন মিরাজ। তাঁর কথায়, “আসলে গোলাপি বলে খেলা এত সহজ না৷ আমাদের প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলে খেলা অনেক কঠিন। আমাদের অনেক ম্যাচ খেলতে হবে।”
ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে মাঠে বসে দেখেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার হাসিবুল হোসেন শান্ত। তিনিও ভারতের এমন পারফরম্যান্সে অবাক। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা'কে শান্ত বলছিলেন, “কিছু বলার নেই। ভারতের মতো দলের এমনটা হওয়ার কথা না। দেখা যায় যে বিশ বছরে এমনটা একবার হয়। সব দলেরই এমন হয়। ভারতের মনে হয় অনেকদিন পর এরকম ঘটনা ঘটল। দূর্ভাগ্যজনক!”
বাংলাদেশের টেস্ট প্রসঙ্গ উঠতেই শান্তর সাফ কথা আরও সময় লাগবে, “আমি যদি বলি টেস্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনো অনেক সময় লাগবে। কারণ আমরা লংগার ভার্সনের ক্রিকেট অনেক কম খেলি। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে যারা লংগার ভার্সনের ক্রিকেটে খেলতে যাবে তাদের খেলাটা মুখস্থ থাকতে হবে, আমাকে এভাবে এভাবে খেলতে হবে। তা না হলে কিন্তু কঠিন হবে। আপনি যদি দেখেন ভারতে রঞ্জি ট্রফিসহ প্রচুর ম্যাচ খেলার পর একজন জাতীয় দলে সুযোগ পায়। সেরকম আমাদেরকেও টেস্ট দলে খেলতে হলে ঘরোয়া এবং “এ” দলের হয়ে লংগার ভার্সন ক্রিকেট খেলতে হবে।”
ঘটনা যাইহোক, কোহলিদের জঘন্য পারফরম্যান্স যে ভারতের মত বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলকেও হতাশ করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন