আমফান বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন। সেখানকার দুর্গত মানুষদের সঙ্গে কথা, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক। রাস্তায় ত্রাণ না পাওয়াদের বিক্ষোভের মুখোমুখি হওয়া। এরপর কলকাতায় পাঁচ তারা হোটেলে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া শোনা। সেখান থেকেই শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নবান্নে বৈঠক করলেন রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্ব বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে। আমফানের পরই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ঘূর্ণি ঝড়ে রাজ্যে ক্ষতি হয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা। এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে ১লক্ষ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকার হিসেব তুলে দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সোমবার ক্ষতির হিসেব দেবে বলে জানা গিয়েছে।
এক বার দেখে নেওয়া যাক, আমফানে কোন খাতে কত ক্ষতি হয়েছে। মোট ১৬ দফায় ক্ষতির হিসাবের ক্ষতিয়ান তুলে ধরেছে রাজ্য। টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বসত বাড়ি। ২৮ লক্ষ ৫৬ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। তার জন্য ধরা হয়েছে ২৮হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় দলকে পেশ করা রিপোর্টে ব্যাপক ক্ষতির হিসাব দেওয়া হয়েছে শিল্প ক্ষেত্রে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়্যার হাউজ, কাঁচামাল, শিল্প পরিকাঠামো, শেডের ক্ষতি হয়েছে ২৬,৭৯০ কোটি টাকার। এরপরই রয়েছে কৃষিক্ষেত্র। ১৭ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমিতে বোরো শষ্য, তিল, পাট, মুগ ডাল, আখ সহ অন্য শষ্যের ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষতির হিসাব ধরা হয়েছে ১৫,৮৬০ কোটি টাকা। শহরের পরিকাঠামো ক্ষতির পরিমান ধরা হয়েছে ৬,৭৫০ কোটি টাকা।
২৫০৫৫৬.১৭ হেক্টর জমিতে সুপারী, আম, লিচু সহ ফল নষ্ট হয়েছে। এতে ৬,৫৮১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। মাছ উৎপাদন ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব ফেলেছে আমফান। ৮০০৭টি নৌকা ভেঙে গিয়েছে। কুঁড়ে ঘরের ক্ষতি হয়েছে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার। ক্ষতির পরিমান ২০০০টাকা। গৃহপালিত প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে ২১.২২ লক্ষ। টাকার অঙ্কে ৪৫২ কোটি টাকা। পানীয় জলের ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হয়েছে। ধরা হয়েছে ২০৬২ কোটি টাকা। গ্রামীণ রাস্তা, কার্লভার্ট, সেতু নিয়ে ক্ষতির পরিমান ২,২৩৭ কোটি। সেচ ক্যানেল ও জলাশয়ের ক্ষতির পরিমান ধরা হয়েছে ৩২৩০ কোটি টাকা। এই ঝড়ে ১লক্ষ ৫৮ হাজার হেক্টর বন নষ্ট হয়েছে। ১,০৩৩ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলেছে রাজ্য। ১২,৬৭৮টি অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ৩৪২ কোটি টাকা। মিসলেনিয়াস ক্ষতি ১,৫৪০ কোটি টাকা।
নবান্নে এক ঘণ্টার বৈঠকে কেন্দ্রীয় দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারি অনুজ শর্মা। এছাড়া ছিলেন ৬ জন প্রতিনিধি। রাজ্যের মুখ্যসচিব ছাড়া ছিলেন স্বরাষ্ট্র, অর্থ, কৃষি, বিদ্যুৎ, সেচ, পঞ্চায়েত সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন