Advertisment

তত্ত্ব বিনিময়ের মাধ্যমেই প্রেমের নিবেদন, বাঙালির 'ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র রীতি বজায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের

প্রেমের মরসুম...

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bardwan universitys students exchange tatwa in nextday of saraswati puja, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ছাত্র ছাত্রীদের তত্ত্ব আদান প্রদান

ঢাক সহযোগেতত্ত্ব হাতে ছাত্রীরা চলেছেন ছাত্রদের হস্টেলে। ছবি- প্রদীপ চট্টপাধ্যায়

শাস্ত্র মতে বিদ্যার দেবী সরস্বতী। কিন্তু কালের নিয়মে অজান্তেই সরস্বতী যেন বাঙালির কাছে প্রেমের দেবী হয়ে উঠেছেন। তাই হয়তো সরস্বতী পুজো বাঙালির 'ভ্যালেন্টাইন্স ডে' হিসাবে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে। যার প্রতিচ্ছবি পূর্বের বছরগুলির মতো এই বছরও সরস্বতী পুজোর পরদিন দেখা গেল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে। বসন্তের এই দিনটা এখানকার আবাসিক ছাত্র ছাত্রীদের কাছে যেন ছিল এক অন্য প্রেমের দিন। তত্ত্বের ডালি আদান প্রদানের মধ্য দিয়েই তার প্রকাশ প্রস্ফুটিত হল ।

Advertisment

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ চত্বরে রয়েছে একগুচ্ছ ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাস। প্রতিবছর সরস্বতী পুজোয় আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তার মধ্যে নজকারা থাকে ঐতিহ্য মেনে কয়েক দশক ধরে হয়ে চলা ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে তত্ত্ব আদান প্রদান। তার মধ্যদিয়েই এক ফাঁকে সেরে ফেলা হয়ে যায় একে অপরের হাত ধরে মন দেওয়া নেওয়ার পর্ব। বিষয়টা এমন যেন চকোলেট, মিষ্টি, ফুল ইত্যাদি উপহার দেওয়ার মোড়কে আসলে মনের মানুষকে মনের কথা জানানো, ভাললাগা ও ভালবাসার সম্পর্ক তৈরির বীজ বপন।

গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে রয়েছে গার্গী, নিবেদিতা, সরোজিনী এবং মীরাবাঈ নামের ছাত্রীবাস (হোস্টেল)। আর রয়েছে চিত্তরঞ্জন, অরবিন্দ, নেতাজি, বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্র নামের ছাত্রাবাস। এমনিতে সারাবছর ছেলেদের হোস্টেলে মেয়েদের ও মেয়েদের হোস্টেলে ছেলেদের ঢোকার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকে। ব্যতিক্রম থাকে শুধুমাত্র সরস্বতী পুজোর কটাদিন। সত্তরের দশক থেকে রীতিমেনে সরস্বতী পুজোর পরের দিনটায় ছাত্র ছাত্রীদের একে অপরের আবাসে যাওয়ার অনুমতি থাকে তত্ত্ব হাতে। পরস্পরের আবাসে পৌছে যাবার এই দিনটিকে উৎসবের মত করে পালন করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।

গোলাপবাগ ক্যাম্পাস এদিন সকাল থেকেই প্রেম মূর্ছনায় ভাসতে শুরু করে। বেলা গড়াতেই সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ছাত্রীরা হাতে ফুল এবং মিষ্টি ও উপহারের দিয়ে সাজানো তত্ত্বের ডালা সহযোগে ছাত্রাবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তত্ত্ব নিয়েই সটান ছাত্রাবাসে পৌছে যায় ছাত্রীরা। এরপর একই কায়দায় ছাত্ররাও তত্ত্ব হাতে নিয়ে ছাত্রীবাসে ঢোকে। রীতিমত ঢাক, কাঁসর, ঘন্টা বাজিয়ে ছাত্র ছাত্রীরা তত্ত্ব আদান প্রদান সারেন।
তখন গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে বসন্তের দ্যুতি।

এই রীতি কবে, কেন চালু হয়েছিল তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারলেন না। তবে অনেকেই মনে করেন, সত্তরের দশকে এই রীতি রেওয়াজের সূচনা হয়েছিল। এর কারণ হিসাবে মনে করা হয়,বছরের অন্য সময় ছাত্রী আবাসনে ছাত্রদের প্রবেশের খুব একটা সুযোগ থাকে না। সরস্বতী পুজোর সময় এক আবাসন থেকে অন্য আবসনে যাওয়ার সেই রুদ্ধদ্বার খোলা হয়। পুজোর পরের দিন এই তত্ত্ব আদান প্রদানের মাধ্যমে মনের মানুষের একটু কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়। তবে ছাত্রছাত্রীদের মতে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে  বন্ধুত্বের সুসম্পর্ক আরও নিবিড় হয়। কিন্তু, যে যাই বলুক বসন্তের এই দিনতো প্রেমেরই দিন। তাই প্রেম নিবেদনের সুবর্ণ সুযোগ পড়ুয়াদের কেউই হাতছাড়া করতে চান না।
 
তত্ত্ব আদান প্রদানে অংশ নেওয়া অর্ক ভট্টাচার্য, মৌমিতা সাধুখাঁ, শ্রেয়া মণ্ডলরা এদিন জানান,
অতিমারির জন্য গত দু'বছর সরস্বতী পুজোটুকুই কোনও রকমে সারা হয়েছিল। বিধি নিষেধ থাকায় বাকি আর কিছুই করা যায় নি। এবছর বিধি নিষেধ না থাকায় সরস্বতী পুজো ও তত্ত্ব আদান প্রদান খুব ভালো ভাবে করা গিয়েছে। ফলে আনন্দের বহরও বেশি।

East Burdwan burdwan
Advertisment