Advertisment

কল্পতরু উৎসব উপলক্ষে পুণ্যভূমিতে জনজোয়ার, কড়া নিরাপত্তা দক্ষিণেশ্বরে

ভোর ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকবে

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
dakhineshwar temple

দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মায়ের মন্দির

বছরের প্রথম দিন পালিত হচ্ছে কল্পতরু উৎসব। উৎসব উপলক্ষে দক্ষিণেশ্বরে পূনার্থীদের ঢল। ১৮৮৬ সালের আজকের দিনেই কল্পতরু রূপে ভক্তদের আশীর্বাদ করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ৷ কাশীপুর উদ্যানবাটীতে ভক্তদের আশীর্বাদ করে ঠাকুর বলেছিলেন ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’৷

Advertisment

কল্পতরু উৎসব শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভক্ত-শিষ্যরা পালন করেন। এর সূচনা হয়েছিল ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে মূলত এই উৎসব পালিত হয়। তবে, রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসী, রামকৃষ্ণ মিশনের গৃহস্থ, বেদান্ত সোসাইটিগুলো সবাই এই উৎসব পালন করে। দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও রামকৃষ্ণ অনুগামীরা এই দিন গোটা দেশ থেকে পুজো দিতে আসেন। দিনটি পালন করা হয়, কারণ এই দিনেই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন।

এর পিছনে রয়েছে এক কাহিনি। শ্রীরামকৃষ্ণ সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যানসারে আক্রান্ত। তখন তাঁকে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য আনা হয়েছিল। সেই সময় ১ জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি শিষ্যদের নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। উদ্যানবাটীর এক গাছতলায় দাঁড়িয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার কী মনে হয়, আমি কে?’ জবাবে গিরিশ ঘোষ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আপনি রামকৃষ্ণ পরমহংস। মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার।’

জবাবে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন, ‘আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।’ তারপর রামকৃষ্ণদেব সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। আর, তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। পরবর্তীতে রামকৃষ্ণদেবের অনুগামীরা জানিয়েছিলেন, ওই স্পর্শে তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল। এই ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রামকৃষ্ণ দেবের শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত দাবি করেছিলে, শ্রীরামকৃষ্ণ সেই দিন পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন। রামচন্দ্র দত্ত এই দিনটির নাম দেন কল্পতরু দিবস। যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিচিত হয়।

ওই দিন শ্রীরামকৃষ্ণের কোনও সন্ন্যাসী শিষ্য তাঁর কাছে ছিলেন না। শুধু ছিলেন গৃহী শিষ্যরাই। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ভক্ত ও শিষ্যরা দিনটিকে ঠাকুরের বিশেষ উৎসবগুলোর একটি বলে দাবি করে থাকেন। ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি, পূর্ব রেল দক্ষিণেশ্বরের তীর্থযাত্রীদের জন্য দুটি স্পেশ্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণে রাখতে দরিদ্রদের জন্য দাতব্য চিকিৎসা ও কম্বল বিতরণেরও আয়োজন করে থাকেন রামকৃষ্ণ দেবের অনুগামীরা।

বছরের প্রথম দিন পালিত হচ্ছে কল্পতরু উৎসব। উৎসব উপলক্ষে দক্ষিণেশ্বরে পূনার্থীদের ঢল। ১৮৮৬ সালের আজকের দিনেই কল্পতরু রূপে ভক্তদের আশীর্বাদ করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ৷ কাশীপুর উদ্যানবাটীতে ভক্তদের আশীর্বাদ করে ঠাকুর বলেছিলেন ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’৷ এর পর থেকেই প্রতিবছর রীতি মেনে এই দিনেই পালিত হয় কল্পতরু উৎসব৷

দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরে সকাল থেকে পুণ্যার্থীদের ঢল।  মঙ্গলারতি দিয়ে আজকের এই বিশেষ দিনের সূচনা হয়েছে। এরপর রীতি মেনে মায়ের পুজো-অর্চ্চনা হবে। বছরের প্রথম পুজো দিতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন। ২ বছরের করোনা-কাল কাটিয়ে এই প্রথম পয়লা জানুয়ারিতে কল্পতরু উৎসব হচ্ছে। ফলে প্রচুর ভিড় চোখে পড়েছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গনে। অন্যদিকে ২ বছর ধরে কল্পতরু উৎসবে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার চেনা ছবি দেখা যাবে। ফের দরজা খুলতে চলেছে কাশীপুর উদ্যানবাটির। উৎসব চলবে তিনদিন ধরে। ভিড় উপচে পড়েছে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও।

পুণ্যভূমিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম চোখে পড়েছে। ভোর ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মন্দির খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল সংখ্যায় পুলিশবাহিনী। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে খোলা রাখা হয়েছে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ। মন্দিরের সকল এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্টে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

Dakhineswar
Advertisment