মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই সার। অবৈধ বালি খাদান আর গাড়ি ওভারলোডিং রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ইদিলপুরে। ঘটনার সময় ওই খাদানে বালির গাড়ির চালান পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা। চালকহীন বালি বোঝাই একটি ট্রাক্টর তাঁরা ধরেও ফেলেন। আধিকারিকদের অভিযোগ, এর পরই তাঁদের ওপর চড়াও হয় ওই বালিঘাটে থাকা মাফিয়ারা। ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের গাড়িতে মাফিয়াদের লোকজন ভাঙচুরও চালায়।
খবর পেয়ে ডিএসপি (সদর) অতনু ঘোষালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুরু হয় ধরপাকড়। এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলাশাসক ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায় বলেন, 'বালির গাড়ির চালান দেখতে চাইলেও এখন কিছু লোকের গাত্রদাহ হচ্ছে। এজন্যই তারা বারে বারে ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। ইদিলপুরের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।' এভাবে বারেবারে ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা মাফিয়াদের হাতে আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। কয়েকদিন আগেই তেলিপুকুর সংলগ্ন এলাকার বালিঘাট পরিদর্শনে গিয়ে একইভাবে বালি মাফিয়াদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের নিরাপত্তা কোথায়? নিরাপত্তা থাকলে কেন বারবার মাফিয়াদের হাতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে ভূমিরাজস্ব দফতরের একের পর এক আধিকারিককে? স্থানীয়দের অভিযোগ, যাবতীয় বালিপাচার চলছে পুলিশের নাকের ডগায়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শয়ে শয়ে ওভারলোডেড লরি, পাথর ও বালি নিয়ে কালাড়াঘাট থেকে পলেমপুর যাবার রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। বহুসংখ্যক ওভারলোডেড লরি যাতায়াতের জন্য সদ্য তৈরি হওয়া ওই পিচ রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ প্রশাসনের কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছেন না-বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন খোলার দিনই ছাত্র সংঘর্ষে উত্তপ্ত বেলুড়ের লালবাবা কলেজ, বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ
অতিরিক্ত জেলাশাসকের অবশ্য দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই দামোদরে নৌকো নামিয়ে বালিপাচার বন্ধ সম্ভব হয়েছে। হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে বালি পাচারকারীকে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দামোদরে পাচারকারী ধরা পড়ার ঘটনা পাহাড়ে নুড়ি খুঁজে পাওয়ার মতো। দামোদরে ধৃত ব্যক্তি পাচারকারীর কর্মী মাত্র। মূল চাঁইদের টিকি প্রশাসনের ওপরে বাঁধা। তাই তাদের টিকি ছুঁতেও পারছেন না ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা। একথা বুঝেই পাচারকারীরা অনেক বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর বারেবারে আক্রান্ত হতে হচ্ছে ভূমিরাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের।