unique initiative: এয়ার কন্ডিশনার মেশিন লাগিয়ে ঘরের শীতলতা সুরক্ষিত করা গেলেও প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করা যায় না। প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করতে হলে লাগাতে হবে প্রচুর গাছ। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে নজিরবিহীন এক কর্মযজ্ঞে সামিল হলেন পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহির ঘুষ্ঠিয়া নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা।
হাজার খানেক গাজের বীজ সঙ্গে নিয়ে তাঁরা বেরিয়েছিলেন শিক্ষামূলক ভ্রমণে। বাসে চড়ে ভ্রমণের সময় যেখানেই তাঁরা ফাঁকা জায়গা দেখতে পেয়েছেন সেখানেই ফেলেছেন কাদা দিয়ে পাকানো গাছের বীজের গোলা। শিক্ষক ও খুদে পড়ুয়াদের প্রত্যাশা, আসন্ন বর্ষার বৃষ্টির জলে ওই বীজ অঙ্কুরিত হবে। পরে তা গাছে
রূপান্তরিত হবে। গ্রামীণ এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডের
নেটিজেনরাও দারুণ প্রশংসা করেছেন।
ঘুষ্ঠিয়া নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে এলাকাবাসীর গর্বের শেষ নেই। পঠন পাঠনের পাশাপাশি
সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে সামিল হওয়ার সুবাদে এই বিদ্যালয়ের পরিচিতি বেড়েছে। এহেন বিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভ্রমণের স্থান হিসাবে তাঁরা বেছে নেন জয়রামবাটি কামারপুকুরকে। ভ্রমণের এমন স্থান বাছার পিছনেও রয়েছে শিক্ষকদের এক অনবদ্য চিন্তা-ভাবনা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মালিক এই প্রসঙ্গে বলেন, “রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এবং সারদা মায়ের জন্মভূমি জয়রামবাটি কামারপুকুর। এমন এক পবিত্র স্থান দর্শনের একটা আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। এমন স্থান ঘুরে দেখার পর পড়ুয়াদের মধ্যে শৃঙ্খলাপরায়ণ হওয়া, নিয়ম-নীতি ও শিষ্টাচার মেনে চলার প্রবণতা জাগ্রত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই শিক্ষামূলক ভ্রমণের স্থান হিসাবে জয়রামবাটি কামারপুকুরে বেছে নেওয়া হয়েছে।"
আরও পড়ুন- AC Classroom: জ্বালাপোড়া গরম থেকে মুক্তি! এবার সরকারি স্কুলের ক্লাসরুমে AC!
শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরিয়ে গাছের বীজ ছড়াতে ছড়াতে যাওয়ার ভাবনাটা কোথা থেকে থেকে এল? এর উত্তরে প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মালিক বলেন, “দিন যত গড়াচ্ছে আবহাওয়া ও প্রকৃতি ততই যেন বিরুপ হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে উত্তাপের পারদ। বাড়ছে বজ্রপাত। বৃক্ষ নিধন ও দূষণ এর একটা বড় কারণ বলেই মনে করছেন পরিবেশ ও আবহাওয়াবিদরা। এই কারণেই ভ্রমণ পথে বৃক্ষ রোপনের উদ্যোগ বিদ্যালয়ের তরফে নেওয়া হয়। সেই মতো আম,জাম, কাঁঠাল, লিচু, অর্জুন সহ নানান গাছের বীজ কাদায় পুরে গোলা তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এমন গোলা প্রায় হাজার খানেক তৈরি করে ফেলে।"
প্রকৃতি নিয়ে স্কুলের এমন ভাবনা ও কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। 'গাছ মাষ্টার' নামে খ্যাত রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত অরূপ চৌধুরী বলেন, “শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরিয়েও যে বৃক্ষ রোপণে সামিল হওয়া যায় তার এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে ঘুষ্ঠিয়া নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও খুদে পড়ুয়ারা।"