শ্রীরামপুর স্টেশনে দেখা একটা গাছ, সেখানে তাঁকে একেবারেই মানাচ্ছিল না, প্রয়াত লোকসংগীত শিল্পী অরুণবাবু লিখে বসলেন একটা গান। লাল পাহাড়ির দেশে যা...' তারপর সেই গান জগৎজোড়া খ্যাতি পেল। বাংলা লোকসঙ্গীতের দরবারে এই গান নিয়ে, যে পরিমাণ আলোচনা রয়েছে, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার দরকার নেই।
অরুণ বাবুর সঙ্গে বহু শিল্পীর সাক্ষাৎ হয়েছিল অনেকবার। এই প্রজন্মের অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি। তাঁর মধ্যে বাদ পড়েননি, ইমন চক্রবর্তী। ইমন সবধরনের গান গেয়ে থাকেন। কিন্তু, তাঁর লোকসঙ্গীতের ভক্ত সংখ্যা দারুণ। মানুষ তাঁর লোকসঙ্গীতের সঙ্গে যেভাবে কানেক্ট করতে পারেন, তাতে তাঁর প্রতিভার কদর করতেই হয়। আর আজ লাল পাহাড়ির দেশে যা গানের স্রষ্টা অরুণ চক্রবর্তী না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার পর, ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
তাঁর সঙ্গে অরুণ বাবুর কোনোদিন দেখা হয়েছিল কী? কী শিখেছিলেন তাঁর কাছ থেকে? অরুণ বাবুর প্রয়াণের খবরটিতে মর্মাহত ইমন। একদম ছোট বয়সে ফিরে গেলেন। তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছে। আমি তো শ্রীরামপুরেই গান শিখতে যেতাম। শ্রী রাজকুমার রায়ের কাছে। সেই সুবাদে দাদার সুবাদে, অনেকবার তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়েছে।" যেহেতু অনেক ছোট ছিলেন, সেই কারণে ঠিক উপদেশ সংক্রান্ত কিছুই ইমনের মনে নেই। তবে শিল্পী বলেন...
"আমি প্রফেশনালি তখন গান বাজনা শুরু করিনি। কিন্তু, হ্যাঁ একটা কথা বলতেন খুব, এটা আমার মনে আছে, যে শেখার থেকে বড় কিছুই হয় না। এবং শিখে যাওয়াটাই সবথেকে বড় লার্নিং। আর তাঁর সঙ্গে তো শ্রীরামপুরের ওই গাছটার কথা উনি আমাদের বলতেনই। যে গাছটি দেখে তাঁর বিখ্যাত গান লেখা, 'লাল পাহাড়ির দেশে যা...'। সেই গাছটা দেখেই উনার মনে হয়েছিল, ওই গাছটা ওখানে বড্ড বেমানান। ওটার যেখানে থাকার কথা সেখানে থাকলেই ভাল। তাই, উনি রূপক হিসেবে লিখেছিলেন, 'এখানে তোকে মানাচ্ছে না...'। এই গল্পগুলো বলতেন আমার।
ধীরে ধীরে একে এক প্রয়াত হচ্ছেন লোকসঙ্গীতের স্তম্ভরা। এমন একটা সংগীতের ফর্ম যা মানুষদের নাড়ির সঙ্গে, পৃথিবীর সঙ্গে কানেক্ট করে। এই মানুষদের চলে যাওয়ায় কি একলা মনে হয় ইমনের? তিনি বলেন, "আমি কখনোই অবক্ষয়ের কথা ভাবি না জানো। কিন্তু, যত সময় এগোয় ততই জিনিস আলগা হতে থাকে। এটাই নিয়ম। আর বাঙালিরা, আমরা আমাদের জিনিস প্রিজারভ করতে পারি না যে। আমার আমাদের কালচার, যা শিকড়, সেটাকে বেঁধে রাখতে শিখিনি। সেকারণে সবটাই একটা মিশ্র সংস্কৃতি হয়ে গিয়েছে। এবং এই যে অরুণদার মত মানুষেরা বা যারা এখন শুধুই লোকসংগীত গান একদম অথেনটিক ভাবে, তাদের জন্য এখনও লোকগীতি শক্ত হয়ে আছে। নাহলে তো এখন লোকগীতি এবং ফিউশন এক হয়ে গিয়েছে। অনেক বাজনা নিয়ে গান যেটা, সেটা আমিও করি। কারণ, আমার দর্শক সেটা শুনতে পছন্দ করেন। কিন্তু, সেটায় কতটা রুট বা শিকড় থাকে আমি জানি না।"