ইরফান চলে গিয়েছে, দেখতে দেখতে অনেক দিন হয়ে গেল। আমাদের কারোর বাবা মায়েরা আছেন, কারোর আবার সময়ের নিয়মে ফ্রেমবন্দি! ফাদার্স ডে-র ঠিক আগে পরে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে যাবে নানা কার্ড, মেসেজ, শুভেচ্ছা উদযাপনে। কারোর আবার সারাদিনজুড়েই স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসবে টুকরো কিছু ছবি, কিছু মুহূর্ত, যা নিয়েই আজীবন পথ চলা। ইরফান আবেশ কাটতে আমাদের সময় লাগবে, তাই এই দিনটায় বারবার চোখে ভেসে উঠবে একটা ছবি, আর কিছু টুকরো কথা।
Advertisment
মীরা নায়ারের ছবি নেমসেক। ইরফানের চলে যাওয়ার পর ভিডিও ক্লিপিংসটি ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোগোল বাবার সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে চলে যাচ্ছে সমুদ্রের কাছে। মা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নজর রাখছে, একটু একটু করে ছোট হয়ে আসছে দুই অসমবয়সী বন্ধুর অবয়ব। মা খানিক দুশ্চিন্তায়। চেঁচিয়ে বাবাকে বলছেন, "খুব বেশি দূরে যেও না, ও খুব ছোট, চোখের আড়াল হয়ো না"।
আর বাবা অনেকটা দূর এসে বুঝলেন ক্যামেরা ভুলে ফেলে এসেছেন গাড়িতে। সাময়িক আফসোস, কী করি? "গোগল, ক্যামেরা নেই। ছবিটা তোমায় মনে রাখতে হবে। মনে রেখে দিতে হবে আজীবন। দিনটা মনে রেখো গোগোল। মনে রেখো তুমি আর আমি এমন একটা জায়গায় এসেছিলাম, যেখান থেকে আর কোথাও যাওয়ার ছিল না আমাদের"।
এই কথাগুলোই তো বলেছিল আমাদের বাবারা। অথবা বলতে চেয়েছিল, গুছিয়ে উঠতে পারেনি। বাবারা বলতে চেয়েছিল 'মুহুর্তের আসলে ছবি থাকেনা, সময়ের ছবি ধরা যায় না ক্যামেরায়। সময় ধরে রাখতে হয় মনে। আজীবন সেই ছবির সঙ্গে বোঝাপড়া চলে, চলে কথা বলা। মানুষ আসলে চলে যায় একদিন, শুধু থেকে যায় পাথরে আছড়ে পড়া ঢেউ আর সেদিনের মুহুর্তরা, ভাবনারা। আমাদের শরীর বুড়িয়ে গেলেও মনের ভেতরে থেকে যায় ছোট্ট গোগোল, আর তাঁর বাবার ওই পথ চলাটুকু। গাড়ি থেকে নেমে ওই পাথরে আছড়ে পড়া ঢেউ পর্যন্ত পথ, ওটাই জীবন...! ওই পথটুকুই আসলে বারবার হাঁটি আমরা। ফিরে আসি গাড়ির কাছে। আবার যাই, ফিরি, যাই। কখনও একা, কখনও সঙ্গে আরও কেউ...
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন