উত্তরপ্রদেশে ভোট দোরগোড়ায়। ফলে লখিমপুর খেরিতে চার কৃষক সহ আট জনের মৃত্যু বিজেপিকে চাপে ফেলে দিয়েছে বিস্তর। যেখানে ১৭-য় হু-হু করে উঠে এসেছিল বিজেপি, সেখানে তাদের হু-হু করে নেমে যাওয়ার ভয় তৈরি হয়েছে। উত্থানটা কী রকম ছিল? লখিমপুর খেরি জেলায় ২০১৭-র ভোটে বিজেপি সব কটি আসনে জিতে গিয়েছিল। ঠিক তার আগের ভোটে বিজেপি জয় পেয়েছিল মাত্র একটি আসনে।
লখিমপুর খেরি জেলার জনসংখ্যায় ব্রাহ্মণরা প্রধান। তার পর মুসলিম, কুর্মিরা। এখানকার ৮০ শতাংশই গ্রামীণ। এর বেশির ভাগেই আখ চাষ হয়। অধিকাংশ চাষিই শিখ। দেশ ভাগের পর এই শিখ পরিবারগুলির পূর্বসূরিরা এই উর্বর ক্ষেত্রে পাকিস্তান থেকে এসে বসবাস শুরু করেন। এঁদের বেশির ভাগই আর্থিক ভাবে সচ্ছল।
বিজেপির আশঙ্কা লখিমপুর খেরির হিংসা এই জেলার সীমানাবর্তী পিলভিট, শাহজানপুর, হরদোই, সীতাপুর এবং বাহারাইচে প্রভাব ফেলবে। ২০১৭ সালের ভোটে এই সব অঞ্চলেও বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি হয়েছিল বিরাট। এখানকার ছ'টি জেলায় ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩৭টি। আর বাকিরা? কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়া সমাজবাদী পার্টি জিতেছিল মাত্র ৪টিতে। কংগ্রেস কোনও আসন পায়নি। এই নির্বাচনী ফল ২০১২-র ফলাফলের অনেকটা বিপরীত। ১২-য় সমাজবাদী পার্টি এই অঞ্চলে পেয়েছিল ২৫টি আসন, বিএসপি পায় ১০টি। বিজেপি মাত্র ৫টি আসন পেয়েছিল। যদিও কংগ্রেসের ফলাফল ভাল ছিল না, তারা পায় মাত্র ২টি আসন।
নিঘাসান, লখিমপুর খেরির যে বিধানসভা এলাকায় রবিবারের ঘটনাটা, সেখানে ১৯৯৩ সাল থেকে বিজেপি বেশ কয়েক বার জিতেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র, যাঁর ছেলের গাড়ি এই ঘটনায় ছিল বলে অভিযোগ, তিনি এই বিধানসভা থেকে ২০১২ সালে জিতেছিলেন, যদিও তার আগে ২০০৭-এ অজয় এখান থেকেই হারেন। ২০১২ থেকে দু'বছর-- মানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই নিঘাসান কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন মিশ্র। ১৪-র ভোটে খেরি থেকে তিনি সাংসদ হন। উপনির্বাচনে ফিরে আসে সমাজবাদী পার্টি। বিধায়ক হন কৃষ্ণগোপাল প্যাটেল। ২০০৭ সালেও বিধায়ক হয়েছিলেন কৃষ্ণ, মিশ্রকে হারিয়ে। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণগোপাল হেরে যান, জেতেন প্রবীণ বিজেপি নেতা এবং ১৯৯১ ও ১৯৯৭-এর মন্ত্রী প্যাটেল রামকুমার ভার্মা। ১৮-তে মারা যান রামকুমার, ফের উপনির্বাচন হয়, জেতেন বিজেপির শশাঙ্ক ভার্মা।
বিজেপি এই এলাকায় ২০১৭ থেকে ২০১৭-র মধ্যে ভোটের শতাংশও অনেক বাড়িয়েছিল। বলা যেতে পারে গগনচুম্বী করে তুলেছিল। যেমন, গোলা গোকরনাথ বিধানসভায় ৩.৮৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৯ শতাংশ হয়ে গিয়েছে বিজেপির ভোট। কস্তা (এসসি আসন) বিধানসভায় ৭.৩৬ শতাংশ থেকে তাদের ভোট বেড়ে হয়েছে ৪৪ শতাংশ। ধৌরহরা কেন্দ্রে ৫.৮৯ থেকে ভোট বেড়ে হয়েছে ৩৬ শতাংশ। পালিয়ায় বিজেপির ভোট ১১.৩৪ থেকে হয়েছে ৫১ শতাংশ।
আরও পড়ুন ‘লখিমপুরের অভিযুক্তকে কেন আড়াল করা হচ্ছে?’, মোদীকে প্রশ্ন কেজরিওয়ালের
লখিমপুর খেরির ঘটনায় বিজেপি যতই যা করুক না কেন চিন্তা তাদের বাড়ছে, যা কংগ্রেস ও বিরোধীদের বাড়তি পয়েন্ট দিচ্ছে। লখিমপুর শহরের কংগ্রেস সভাপতি সিদ্ধার্থ ত্রিবেদী বলেছেন, 'বিজেপি এই ঘটনার ভোটে হারবে। এবং তারা যে পরিমাণ ভোট হারাবে, কারা পাবে তার কতটা, সে দিকেই নজর থাকবে।'
স্থানীয় এক বিজেপি নেতাও এই ঘটনার প্রভাব ভোটে পড়বে বলে মেনে নিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, 'কৃষক আন্দোলনের ছাপ ভোটে খুব একটা পড়ত না, কিন্তু লখিমপুরের ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে কৃষকদের একেবারে আক্রমণাত্মক করে তুলেছে। কৃষক শ্রেণির বাইরেও মানুষজনের সহানুভূতি হাওয়া তাঁরা পাচ্ছেন। এটা একটি শাসক দলের পক্ষে মোটেই ভাল নয়।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন