ভারকের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে চান তথ্যের অধিকার আইনের অপব্যবহার আটকাতে ফিল্টার চালু করা হোক। তিনি বলেছেন, এই আইনের ব্যাপারে ভয় রয়েছে, রয়েছে পক্ষাঘাত। মানুষ আর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না... আমরা তথ্যের অধিকার আইনের অপব্যবহার আটকাতে চাই।
মাত্র একমাস আগেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির দফতরও তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে সুপ্রিম কোর্ট বারবার তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় স্বচ্ছতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে এসেছে, এবং কোনও কোনও সময়ে এর অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়েও মন্তব্য করেছে।
শক্তিশালী তথ্যের অধিকারের জন্য
তথ্য দিতে অস্বীকার- ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর জয়ন্তীলাল এন মিস্ত্রি বনাম ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মামলায় বিচারপতি এম ওয়াই ইকবাল এবং বিচারপতি সি নাগাপ্পানের পর্যবেক্ষণ ছিল, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নজরে এসেছে যে তথ্যের অধিকার আইনের ৮ নং ধারায় যে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে জন তথ্য আধিকারিকরা মানুষের অধিকারে যে তথ্য রয়েছে, তার থেকে তাঁদের বঞ্চিত করে রাথছেন... জনগণের সরকারের পক্ষে আদর্শ হল জনগণের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে তথ্য তাঁদের আওতায় রাখা। সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সরবরাহ যত সহজ হবে জননীতি নিয়ে বিতর্ক সেই অনুপাতে বাড়বে, এবং তাতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়। এর ফলে খোলাখুলি প্রশাসনের পরিস্থিতি তৈরি হয় যা গণতন্ত্রের ভিত্তিও বটে।
তথ্যের অধিকারের আওতায় এনজিও:
ডিএভি কলেজ ট্রাস্ট অ্যান্ড ম্যানেজিং বনাম ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন মামলায় ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি দীপক গুপ্তা এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোসের বেঞ্চ ঘোষণা করে এনজিওগুলি তথ্যের অধিকারের আওতা থেকে ছাড় পাবে না। এনজিওগুলি সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পৃষ্ঠপোষকতা পায় কিনা, সে প্রশ্ন খতিয়ে দেখতে গিয়েই এ প্রসঙ্গ ওঠে। বেঞ্চের বক্তব্য ছিল, আমাদের মতে, যথেষ্ট মানে একটা বড় অংশ। তার অর্থ অধিকাংশ বা ৫০ শতাংশের বেশি হতে হবে, তেমন নয়। এ ব্যাপারে কোনও কঠোর নিয়মাবলী নেই। যথেষ্ট পরিমাণ অর্থসাহায্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, যদি একটি শহরের একটি জমি বিনামূল্যে বা প্রচুর পরিমাণ ছাড় দিয়ে কোনও হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়, তাহলে তা যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য বলে গণ্য।
এরকম ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সস্তায় জমি দেওয়া হবে কিনা অর্থাৎ তাকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য করা হবে কিনা, তা সরকার স্থির করবে। সরকারের অপ্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তাকে হিসেবের বাইরে রাখলে চলবে না। যে সময়ে জমি দেওয়া হয়েছিল, সে দিন জমির দাম কত ছিল তা-ই কেবল বিচার্য নয়, যে সময়ে ওই প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট পরিমাণ সরকারি সাহায্য পেয়েছে কিনা সে প্রশ্ন উঠছে, সে সময়ের জমির দামও বিচার্য। কোনও অসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত কিনা তা স্থির হবে প্রতিটি ক্ষেত্র পৃথকভাবে বিবেতনার ভিত্তিতে।
এই পর্যবেক্ষণের জেরে বেশ কিছু এনজিও-র উপর নজর পড়ে, যারা জনসাধারণের অর্থ পাচ্ছে কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ছে না। বেশ কিছু সোসাইটি সরাসরি রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও দাবি করে যাচ্ছে যে তারা স্বচ্ছতা আইনের আওতাধীন নয়।
অতিব্যবহার বিষয়ে সমালোচনা
উত্তর দিতে দেরি:
সিবিএসই বনাম আদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য মামলায় ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, দেশ এরকম একটা পরিস্থিতি চায় না, যেখানে ৭৫ শতাংশ সরকারি কর্মী দৈনন্দিন কাজ ছেড়ে কাজের সময়ের ৭৫ ভাগ ব্যয় করছেন আবেদনকারীর জন্য তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য দেওয়ার কাজে।
হিসেব অনুসারে, প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ লাখ তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আবেদন জমা পড়ে এবং যে সব প্রশ্ন করা হয়, তাতে সরকারি কর্মীদের কাজের সময়ের ৭৫ ভাগই ব্যয় হয় তার উত্তর জোগাড় করে দিতে। বেশ কিছু সরকারি কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে অস্বীকার করবার ব্যাপারে তাঁদের পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে থাকেন। সুপ্রিম কোর্ট যে প্রয়োজনীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দিতে বলেছে, সে তথ্যও তাঁরা অবজ্ঞা করেন।
আইনের উৎস
সুপ্রিম কোর্ট তথ্যের অধিকার আইনের বীজ বপন করেছিল ১৯৭৫ সালে। উত্তরপ্রদেশ সরকার বনাম রাজ নারায়ণ মামলায় বিচারপতি কে কে ম্যাথিউয়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, দেশের মানুষের অধিকার রয়েছে সমস্ত আইন জানার, সরকারি কর্মীরা সরকারি পদ্ধতিতে কী করছেন তা জানাও তাঁদের অধিকার।
তথ্যের অধিকার আইনের ৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, একজন আবেদনকারী কোনও তথ্যের আবেদন করার সময়ে কেন এ আবেদন করছেন, তা জানাতে বাধ্য নন অথবা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়া কোনও ব্যক্তিগত তথ্য দিতে বাধ্য নন। ৮(১)(জে) ধারায় বলা রয়েছে, এই তথ্য সংসদে বা বিধানসভায় কোনও ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারবেন না।