রাশিয়া যখন ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছে, সেই সময় বুধবার রাতেও খারকিভে লাগাতার হামলা চালিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে খারকিভের পুলিশ এবং গোয়েন্দা বাহিনীর সদর দফতরের কার্যালয়ে। সেই হামলায় অন্ততপক্ষে চার জন নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করে নিয়েছে ইউক্রেন প্রশাসন।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই ইউক্রেনে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। অন্যান্য দেশগুলো যাতে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না-করে, সেই নিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নাক গলালে হাতেনাতে তার ফল পাবেই বলেই হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এদিকে ইউক্রেনের ওপর ভয়ঙ্কর ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। এই মিডিয়া ব্রিফিংয়েও তিনি এমন অভিযোগ তুলেছেন। এখন যদি সত্যি রাশিয়া ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ইউক্রেনের ওপর নিক্ষেপ করে থাকে তবে তা হবে সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ।
ক্লাস্টার বোমা-
ক্লাস্টার বোমা হল একটি বিস্ফোরক, যা ছোট সাবমেরিনকে উড়িয়ে দিতে পারে। ক্লাস্টার বোমার সাহায্যে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন, যুদ্ধ বিমানের রানওয়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এই বোমার সাহায্যে রাসায়নিক বা জৈবিক অস্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। ল্যান্ডমাইন ধ্বংস করতে এই বোমা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যানবাহন বা পরিকাঠামোর পাশাপাশি মানুষ হত্যা করা যায় এই বোমার মাধ্যমে। আক্রমণের সময় অনেকগুলি ছোটছোট বোমা একসঙ্গে ফেলা হয়। যা প্রতিপক্ষের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
ভ্যাকুয়াম বোমা-
ভ্যাকুয়াম বোমা বা থার্মোবারিক অস্ত্র হল উচ্চ তাপমাত্রার একটি বিস্ফোরণ। এটি বিস্ফোরণ ঘটালে আশপাশের বায়ু থেকে অক্সিজেন শুষে নেয়। সাধাধরণ বিস্ফোরণের তুলনায় অনেক বেশি বিস্ফোরণের তরঙ্গ তৈরি করে। এটির রেশও অন্যান্য বিস্ফোরকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। এই বিস্ফোরণের আওতায় থাকে যে কোনও মানুষকে সম্পূর্ণরূপে বাষ্পিভূত করে দিতে পারে এই বোমা। অর্থাৎ যতটা এলাকা জুড়ে এই তরঙ্গ থাকে ততটা এলাকায় এই মানুষের চিহ্ন থাকবে না। এজাতীয় বিস্ফোরক অত্যান্ত ভয়ঙ্কর।
বৃহস্পতিবার থেকে এপর্যন্ত রাশিয়ার ক্রমাগত আক্রমণে প্রায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন। বিপর্যস্ত রাজধানী কিয়েভ। সম্প্রতি সামনে এসেছে একটি উপগ্রহ চিত্র। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রাজধানী কিয়েভকে প্রায় ঘিরে রেখেছে রুশ সেনা বাহিনী। এই অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধের সরব হয়েছে ইউক্রেনে কর্মরত মানবাধিকার সংগঠনগুলি । মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ রাশিয়া ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা (Claster Bomb) ও ভ্যাকুয়াম বোমা (vacuum bombs) দিয়ে আক্রমণ করেছে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি প্রবল সমালোচনা করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশালান ও ইউম্যান রাইটস ওয়াচ- দুটি সংস্থাই বলেছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাদের আরও অভিযোগ উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের একটি প্রিস্কুলে হামলা করেছে। সেখানে প্রচুর পরিমাণে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ভ্য়াকুয়াম বোমা নামে পরিচিত একটি থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ ক্রমশই ধ্বংসের পথে হাঁটছে রাশিয়া। 'আজ তারা ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে।' এই বোমার ব্যবহার আগেই বিশ্বে নিষিদ্ধ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার নিয়ে মুখ খুলেছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, রাশিয়া কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে রাশিয়া যদি ঐ জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে যা যুদ্ধ অপরাধর হিসেবে চিহ্নিত হবে।
এই অস্ত্র ব্যবহার করা বৈধ?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে এই ধরণের অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা একটি যুদ্ধাপরাধ। তবে এটা উল্লেখযোগ্য যে কোন আর্ন্তজাতিক আইন অনুসারে এই ধরণের ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার অবৈধ এমন কোন নির্দেশ জারী করা হয়নি। কিন্তু এই ধরণের যুদ্ধাস্ত্র যদি সাধারণ মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা তবে ১৮৯৯ এবং ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের অধীনে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে রাশিয়া এখনও পর্যন্ত ক্লাস্টার বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তিকে সাক্ষর করেনি।