মেডিক্যালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভার্তির জন্য যে প্রবেশিকা পরীক্ষা, মানে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এনট্রান্স টেস্ট (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট) বা নিট-পিজি-- তা পিছিয়ে গিয়েছে চিকিৎসকদের একাংশের আন্দোলনের চাপে। নিট-পিজি এবং নিট-পিজি কাউন্সেলিংয়ের দিন এক সঙ্গে পড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল মার্চের ১২ তারিখ, আপাতত সেটিকে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৬ এমবিবিএস চিকিৎসক। কিন্তু আদালতে ফয়সলা হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর চেষ্টা করা যাক।
নিট-পিজি ও নিট-পিজি কাউন্সেলিং কী?
এমবিবিএসের পর, ইনটার্নশিপ, তার পর পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির দৌড়ে নামা যায়। মানে কোনও চিকিৎসক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হতে পারেন তার পর। সে জন্য তাঁকে যে পরীক্ষাটিতে বসতে হবে, সেটিই নিট-পিজি। এবং নিট-পিজি উত্তীর্ণ হওয়ার পর, শুরু হবে নিট-পিজি কাউন্সেলিংয়ের প্রক্রিয়া। মানে কোন বিষয় নিয়ে কোন হাসপাতালে পড়তে পারবেন, তা স্থির হবে কাউন্সেলিংয়ে। কিন্তু কোভিড নিট-পিজি-কে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছেন। অন্য পড়াশোনার মতো মেডিক্যালে পঠনপাঠনটের বিষয়টিও ঘেঁটে গিয়েছে। কিন্তু অন্য কিছুর সঙ্গে এটি গুরুত্বের বিচারে অনেক ভারী, কারণ এর সঙ্গে যে মানুষের স্বাস্থ্য ও প্রাণের বিষয়টি জড়িয়ে। ফলে গত বছর নিট-পিজি স্থগিত হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ঘনীভূত হয়েছে সঙ্কট।
সমস্যাটা কোথায়?
সমস্যাটা একটু সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। বোঝানো যেতে পারে সঙ্কট কী, তাও। ধরা যাকে ইন্টার্নশিপের পর, কোনও চিকিৎসক নিট পিজি-তে বসেছেন। পাশও করে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর স্থান হয়েছে মেধাতালিকায় নীচের দিকে। ফলে নিজের পছন্দ মতো বিষয় এবং কলেজ তিনি নাও পেতে পারেন। ফলে আর একবার বসতে চান নিট-পিজি-তে। আবার তাঁকে কাউন্সেলিংয়েও বসতে হচ্ছে, কারণ তিনি তো পাশ করেছেন। এখন দুটি যদি এক সঙ্গে হাজির হয়, তা হলে তিনি দুটিতে কী করে এক সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন? দেখা যাচ্ছে, ৪৫ হাজার সিট রয়েছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের। দেড় লক্ষ চিকিৎসক আবেদন করেন। দেখা যায়, এক জন এমএমবিএস চিকিৎসক দু' থেকে তিন বার আবেদন করছেন। ফলে একটির ঘাড়ে আর একটি পড়ে গেলে সমস্যা তো হবেই।
আরও পড়ুন আয়কর আইনে কী কী রেট্রোস্পেকটিভ পরিবর্তন, তার কেমন প্রভাব আপনার জীবনে পড়বে?
সে ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং পিছানো হল না কেন?
অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের সংরক্ষণের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলার জেরে পিজি কাউন্সেলিং গত বছর স্থগিত হয়ে যায়। কাউন্সেলিং না হওয়ায় পোস্টগ্র্যাজুয়েটের প্রথম বর্ষের ক্লাস স্বাভাবিক ভাবে শুরু হয়নি। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসক সঙ্কট তৈরি হয়েছে নিদারুণ। এ নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের তীব্র আন্দোলনও দেখা গিয়েছিল, আন্দোলনে ধুন্ধমারও হয়েছে। এবং এখন যা পরিস্থিতি তাতে পিজি-র তৃতীয় বর্ষ পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছে, কাউন্সেলিং না হওয়ায় প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়নি, ফলে ত্রাহি মধুসূদন--! তাও আবার মহামারিতে। দ্রুত চিকিৎসক সঙ্কট মেটাতে কাউন্সেলিং ভারে এগিয়ে রয়েছে অনেক। কোনও ভাবে যা পিছানো যাবে না।
পাশাপাশি, যাঁরা নিট-পিজি-তে বসবেন, মানে এমবিএস চিকিৎসকরা, তাঁদের বড় অংশ বলছেন, কোভিডের ফলে ডিউটির চাপে তাঁরা তৈরি হতে পারেননি। ফলে পরীক্ষা না পিছোলে চলবে না।