পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং গ্রামাঞ্চলে অনেক মন্দির আছে। কিন্তু, খাস শহর কলকাতায় তেমন জাগ্রত মন্দিরের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র। তেমনই একটি মন্দির হল চিত্তেশ্বরী মন্দির। শহর কলকাতায় কাশীপুরের গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির কাছেই চিত্তেশ্বরী মন্দির। কথিত আছে, প্রাচীন কলকাতায় চিৎপুর অঞ্চলের তিনি অধিষ্ঠাত্রীদেবী। আদি চিত্তেশ্বরী মন্দিরের স্থাপনাকাল ১৬১০ খ্রিস্টাব্দ বলে মন্দিরের বাইরের গায়ে লেখা আছে।
জনশ্রুতি আছে, সেই সময় এই অঞ্চল জঙ্গলে ভরা ছিল। সেই সময় চিৎপুর এলাকায় ব্যাপক ডাকাতি হত। যার নেতৃত্বে থাকত চিতে বা চিত্তেশ্বর ডাকাত। সেই চিতে ডাকাত নাকি একবার জঙ্গল থেকে নিমগাছের গুঁড়ি কেটে দেবীর প্রতিমা তৈরি করেছিল। তার নাম অনসারে ওই দেবীর নামকরণ করা হয় চিত্তেশ্বরী। যাঁর আরাধনা চিতে ডাকাত তান্ত্রিক মতে করত বলেই শোনা যায়।
চিতে ডাকত মারা যাওয়ার পর দেবীমূর্তিটিকে মাটির তলায় কে বা কারা পুঁতে দেয়। পরবর্তীতে নৃসিংহ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক মাটির নীচ থেকে দেবীর সেই বিগ্রহ উদ্ধার করেন। তিনি ফের ওই মূর্তির পুজো শুরু করেন। নৃসিংহ ব্রহ্মচারীর নাকি অলৌলিক ক্ষমতা ছিল। সেই ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে শেওড়াফুলির রানি ওই এলাকার বহু সম্পত্তি দেবোত্তর করে দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি, নৃসিংহ ব্রহ্মচারীকে পূজারি ও সেবায়েত নিযুক্ত করেছিলেন। সেই থেকে ওই মন্দিরের পূজারির উপাধি হয়ে আসছে ব্রহ্মচারী।
আরও পড়ুন- বহু প্রাচীন মন্দির, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজকাহিনিও
দেবী চিত্তেশ্বরী সিংহবাহিনী দুর্গা। তবে, আমরা যেমন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সহ দুর্গামূর্তি দেখে থাকি, তেমনটা নয়। দেবী চিত্তেশ্বরীর সঙ্গে কোনও অন্য দেবতা নেই। তাঁর পাশে শুধু একটি বাঘের মূর্তি আছে। আজও পুরোনো প্রথা মেনে এখানে চিত্তেশ্বরী দেবতার পুজো করার আগে বাঘ দেবতার পুজো করা হয়। এখানে আজও নৃসিংহ ব্রহ্মচারীর পঞ্চমুণ্ডির আসনটি রয়েছে। মন্দিরের পিছনে এক বাগানের মধ্যে আসনটি দেখতে পাওয়া যায়। আশপাশের লোকজন তো বটেই। দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত এই মন্দির দর্শন করতে আসেন।