আজ মহাষষ্ঠী, উমার বোধন অর্থাৎ পুজো শুরু। আর আজই কিন্তু গোটা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মেয়ে দিবস। সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে মেয়েদের প্রতি চিত্র সারাংশ কিন্তু নানান পরিসরে নানান রকম এবং এই নিয়ে মতামত তথা উত্তেজনার শেষ নেই। আমাদের দেশেও এখনও এরকম অনেক জায়গা রয়েছে আজও কিন্তু রীতিমতো পর্দা প্রথার আড়ালে মেয়েদের জোর করেই রেখে দেওয়া হয়।
দুর্গাপূজার প্রাক্কালে মেয়ে দিবসের গল্প কিন্তু অনেক কিছুই ইঙ্গিত দেয়। যে দুর্গা বেদীতে-ঠাকুরের আসনে পূজিতা সেই দূর্গাই আমার আপনার সমাজে অত্যাচারি তা। যেই দুর্গার সামনে মাথা ঠেকাতে পুরুষদের একেবারেই অসুবিধে হয় না সেই মা কেই বাড়িতে এখনও ভৎসনার শিকার হতে হয়। সমাজের খারাপ নজর এবং দূর্বিসহ যন্ত্রণা তো রইল, সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আজও শহরের রাস্তায় একটু রাত হলেই আমরা সুরক্ষিত নয়। কারণ হিসেবে অনেকেই বলেন, মেয়েদের নাকি অত রাতে রাস্তায় বেরোতে নেই। এই পোশাক পড়তে নেই। নজর তো পোশাকে নয়, মানসিকতায় বদলানো উচিত। তারপরেও এই শিক্ষা পেতেই ভুলে যায় অনেকেই। তাদের কণ্ঠ রোধ করতেও একবিন্দু কেউই চিন্তা করে না। সমাজের চোখে সব শেষে অপরাধী একজন মেয়েই। এর কোনও বদল আজ অবধি নেই। আজও গ্রামে গঞ্জে রীতিমতো সাবালিকা হওয়ার আগেই পণের বিনিময়ে বিবাহের সম্পর্কেও একরকম বিক্রি করে দেওয়া হয় এক নাম না জানা কন্যা সন্তানকে। অথচ এই মৃন্ময়ী রূপের সামনে দাড়িয়ে হাত ফেলিয়ে জীবনের কত কিছুই চাইতে থাকেন সকলেই।
ভ্রূণ হত্যা নাকি পাপ? এমনকি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে এটি রীতিমতো আইন বিরুদ্ধ। তার পরেও এই অপরাধ করে চলেছেন অনেকেই। মায়ের গর্ভে ছোট্ট ফুলের আশ্বাস পেয়েই শিশুহত্যা আজও চলছে। এর কোনও বিবাদ নেই! দিকে দিকে কন্যা ভ্রূণ বাঁচাও এই নিয়ে ক্যাম্পেইন কম হয়নি তারপরেও এই বিষয়ে বেশ কিছু মানুষের একেবারেই ভ্রুক্ষেপ নেই। মেয়েদের এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই এভাবে বসলে দোষ, এটা না করলে দোষ হাজার নিয়মের বেড়াজালে একটা মানুষকে বেঁধে ফেলে ক্রমাগতই তাকে সমাজে চোখে আঙুল দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা, তুমি মেয়ে নিজের জন্য নয় সবার জন্য বাঁচো! কিন্তু সত্যিই কি নিজের বলে কিছুই হয় না?
জাতিসংঘের একটি বিবৃতি তে উল্লেখ করা হয়, মেয়েরা নিজেদের বাস্তবতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আনন্দ এবং সম্ভাবনার বিষয়ে তাদের নিজস্ব দক্ষতা রয়েছে। বৈচিত্রময় পথগুলি নানানরকম বৈচিত্রের সঙ্গেই এগিয়ে যেতে সক্ষম তারা। জাতি, লিঙ্গ, ভাষা, অর্থ, ক্ষমতা, ভৌগলিক উৎপত্তি সবকিছুর সঙ্গেই তাদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা অসীম। ওদের নিজের মত বাঁচতে দিন, নিজেকে মেলে ধরতে দিন। শিক্ষার প্রয়োজন সকলের আছে! দোষ সবসময় ওদের একেবারেই নয়। মানুষ নির্বিশেষে নিজের মত বাঁচতে পারে এই অধিকার কোনোভাবেই কেরে নেওয়া সম্ভব নয়। ওদের হাত ধরে আলোর দিকে এগিয়ে দিন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন