দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড়কাছারি শিবভূমির কথা অনেকেই জানেন। অতি জাগ্রত এই শিবতীর্থের খ্যাতি রাজ্যের এক থেকে অন্য জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, শুধু বড়কাছারিই নয়। এই শিবধামের কাছেই রয়েছে বিখ্যাত খড়গেশ্বর শিব মন্দির। এই মন্দিরও জাগ্রত। কিন্তু, স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়া এই মন্দিরের নাম তেমন একটা কেউ জানেন না। এখানকার শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভূ। আশির দশকেও অঞ্চলটি ছিল জঙ্গলে ভরা।
কথিত আছে, দক্ষিণ কলকাতার কসবার এক শিবভক্ত ব্যবসায়ীকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন মহাদেব। তিনি ওই ব্যবসায়ীকে স্বপ্নে জয়রামপুর গ্রামে জঙ্গল পরিষ্কারের নির্দেশ দেন। স্বপ্নে দেবাদিদেব বলেছিলেন, জঙ্গল পরিষ্কারের পর যে স্থানে খড়গ পাওয়া যাবে, সেখানেই মাটির নীচে মিলবে শিবলিঙ্গ। স্বপ্নাদেশ মেনে ওই ব্যবসায়ী সদলবলে জয়রামপুর গ্রামে যান। সেখানে জঙ্গল পরিষ্কার করান। কথিত আছে, ওই ব্যবসায়ীদের পাওয়া স্বপ্নাদেশ মতই উদ্ধার হয় খড়গ। সেই স্থানের মাটি খোঁড়ার পর উদ্ধার হয় শিবলিঙ্গ।
এরপর স্বপ্নাদেশ পাওয়া ব্যবসায়ী ওই স্থানে শিবমন্দির বানিয়ে দিয়ে সেখানে মহাদেবের প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি, নিত্যপুজোর জন্য মন্দিরের পাশে পুকুর খনন করে দেন। খড়গের নীচের মাটি থেকে শিবলিঙ্গ উদ্ধার হওয়ায় এখানে মহাদেবের নাম খড়গেশ্বর। বিবিরহাট থেকে আমতলা যাওয়ার রাস্তায় রয়েছে এই মন্দির। খড়গেশ্বর মহাদেবকে চাল, কলা, বাতাসা, মিষ্টি ও ফল দিয়ে দু'বেলা ভোগ নিবেদন করা হয়। পাশাপাশি, ভক্তদের নিয়ে আসা মিষ্টি দিয়েও হয় মহাদেবের আরাধনা।
আরও পড়ুন- মহাজাগ্রত শিশুয়েশ্বর শিবমন্দির, মুসলিম বাসিন্দারাই আগলে রাখেন, করেন যাবতীয় দেখভাল
জয়রামপুরে খড়গেশ্বর শিবের পুজো উপলক্ষে পালিত হয় গাজন উৎসব। স্থানীয় বাসিন্দারা একে গাজন মেলা না-বলে জয়রামপুরের মেলাও বলে থাকেন। ভক্তদের দাবি, এই মন্দিরে শিবের কাছে প্রার্থনা করলে তা বিফল হয় না। চৈত্র এবং শ্রাবণ মাসে এই মন্দিরে ভিড় বেশি থাকে। শিবের মাথায় জল ঢালতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন ভক্তরা। এছাড়া বছরপর সোমবার করে ভক্তদের আনাগোনা তো লেগেই থাকে। মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় বহু ভক্তই এখানে আলাদাভাবে পুজোও দেন।