লোকসভা নির্বাচনে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে কার্যত পারস্পরিক দোষারোপেই আটকে রইলেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন এমন ফল, তা নিয়ে সরাসরি দুই মেরুতে অবস্থান করছেন দলের সর্বভারতীয় এবং কেরলের নেতারা।
পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় বাম সরকারের পতনের পর দেশে একমাত্র বামপন্থী সরকার টিঁকে রয়েছে কেরালায়। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে সেখানেও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে সিপিএম। রাজ্যের ২০টি আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে বিজয়ী হয়েছেন বামপন্থী প্রার্থী। সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, এমন অপ্রত্যাশিত নির্বাচনী ফলাফল কেন হল, তা তাঁরা আরও বিস্তারিত ভাবে পর্যালোচনা করবেন। শবরীমালা ইস্যুতে পিনারাই বিজয়নের সরকার যেভাবে পদক্ষেপ করেছিল, তা কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভিমত, শবরীমালা ইস্যু রাজ্যের হিন্দু ভোটারদের একটি বড় অংশকে বামপন্থীদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রাজ্যের নেতারা ভোটারদের এই পরিবর্তন অনুধাবন করতে পারেননি। পাশাপাশি, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি ওয়েনাড কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটারদের একাংশ কংগ্রেসকেই বিজেপি-র বিকল্প হিসাবে ভরসা করেছেন।
সিপিএমের পলিটব্যুরো স্বীকার করে নিয়েছে, দলের দীর্ঘদিনের শক্তঘাঁটিগুলিতে এ-বারের নির্বাচনে কার্যত ধ্বস নেমেছে। বিপুল সংখ্যক বামপন্থী ভোটার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানান, কেন এমন বিপর্যয় হল, তা সার্বিকভাবে খতিয়ে দেখা হবে। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব প্রতিটি ইস্যু পর্যালোচনা করবে। শবরীমালা কাণ্ডে রাজ্য সরকারের অবস্থান নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করেছে কিনা জানতে চাওয়া হলে ইয়েচুরি বলেন, "প্রতিটি ইস্যুকেই গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। নানা ধরনের মতামত রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে রিপোর্ট আসছে। আমরা সবকিছুকে খতিয়ে দেখব। কোন কোন বিষয়গুলি ভোটের ফলকে প্রভাবিত করেছে, তা নির্দিষ্টভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।"
পশ্চিমবঙ্গের বাম-বিপর্যয়ের প্রসঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক জানান, ওই রাজ্যে কিছু অতিরিক্ত বিষয় নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল এবং বিজেপি বাংলায় প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছে। ফলে নির্বাচন হয়েছে মেরুকরণের ভিত্তিতে। গতান্ত্রিক কাজকর্মের পরিসর ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে।
দলের এমন বিপুল বিপর্যয়ের দায় কেউ নেবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে ইয়েচুরি বলেন, "সিপিএম যৌথতার ভিত্তিতে কাজ করে। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এর প্রধান দায়ভার আমারই। আমি এই দায় নিচ্ছি।"