রাষ্ট্রদ্রোহ আইন অবিলম্বে স্থগিত করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল বিরোধীরা। ১৬২ বছরের পুরনো ব্রিটিশ আমলের এই আইন স্থগিত হওয়ায় কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল। এমনটাই মনে করছে বিরোধীরা। প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি হিমা কোহলির নেতৃত্বাধীন শীর্ষ আদালতের বেঞ্চের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে কংগ্রেস স্বভাবতই আক্রমণ শানিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত বুঝিয়ে দিয়েছে যে, 'সত্যের কণ্ঠরোধ করা আর যাবে না।'
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, 'ক্ষমতার বিরুদ্ধ কথা বলা রাষ্ট্রদ্রোহ হতে পারে না। কারণ, এটাই প্রকৃত জাতীয়তাবাদ। দেশ এবং দেশবাসীর জন্য আপনি কতটা দায়বদ্ধ, এটাই তার প্রকৃত পরীক্ষা। সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে তার ঐতিহাসিক রায়ে স্বৈরতন্ত্র এবং জনগণের কণ্ঠরোধকারী সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। সত্যকে দমিয়ে দেওয়া যাবে না। ভিন্ন কণ্ঠস্বরকে চেপে রাখা যাবে না।'
কংগ্রেসের পাশাপাশি, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। এই আইনের বিরুদ্ধে অন্যতম মামলাকারী তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের লড়াই আজ স্বীকৃতি পেল। সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে এই রায় প্রদানের জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আজ সত্যিই একটা ঐতিহাসিক দিন। ১২৪-এ ধারা আইনটা ব্রিটিশরা ভারতীয়দের দমন করার জন্য চালু করেছিল। এটা কোনো ভারতীয় সরকার চালু করেনি। একদম শেষ মুহূর্তে, কেন্দ্রীয় সরকার এই মামলা নিয়ে রায়দানের ক্ষেত্রে দেরি করানোর চেষ্টা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে তারা এই আইন পুনর্বিবেচনা করবে। তবে, তার জন্য আরও সময় দরকার। সরকারের এই কৌশল সুপ্রিম কোর্ট বুঝে নিয়ে বলেছে, যে তোমরা পুর্নবিবেচনা কর। কিন্তু, যতক্ষণ না-করছ, ততদিন এই আইনটা এই আইনটাও আর চলবে না।’
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রদ্রোহ আইন কী, কেন দরকার পড়ল সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশিকার
তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, '১৬২ বছর পরে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। যদিও এই আইনটা পুরোপুরি বাতিল করে দিলেই ভালো হতো। তবুও সরকারকে একটা সুযোগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট যে তারা যেন এই আইন পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিলের পথে এগোয়।'
শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বামেরাও। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, 'এই আইন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এটা খুবই ভালো ব্যাপার। ২০১৪ সাল থেকেই সমস্ত ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরকে হয়রান করার জন্য মোদী সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অপব্যবহার করে আসছে।'
Read story in English