ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির উত্থানের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে চর্চা বা আলোচনা। আর, জাতীয় রাজনীতির ময়দানে সরাসরি নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না-থেকেও তিনি গত কয়েক বছর ধরেই জড়িয়ে আছেন ওতপ্রোতভাবে। রাজ্য থেকে জাতীয় রাজনীতি তাঁকে একডাকে চেনে ভোটকুশলী হিসেবে। তিনি প্রশান্ত কিশোর, রাজনীতির জগতের কাছে পরিচিত তাঁর সংক্ষিপ্ত নাম পিকে।
তিনি নাকি হামেশাই বদলে দেন রাজনীতির নানা অঙ্ক। সেই পিকেই এবার খোলামেলা মেজাজে ধরা দিলেন 'এক্সপ্রেস আড্ডা'য়। মেরুকরণের রাজনীতি, নির্বাচনে জয় থেকে ভারতীয় রাজনীতির অলিগলি সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরলেন। শুনলেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কার্যনির্বাহী ডিরেক্টর অনন্ত গোয়েঙ্কা ও ন্যাশনাল ওপিনিয়ন এডিটর বন্দিতা মিশ্র।
রাজনীতির জগতের পণ্ডিতদের একাংশ যখন মেরুকরণের রাজনীতির সাফল্যে জয়গান গেয়ে থাকেন, পিকের ভাবনা কিন্তু অন্য। তাঁর মতে, নির্বাচনে মেরুকরণের প্রভাব সম্পর্কে, 'বাস্তবের চেয়ে অনেকটা বেশিই ফুলিয়ে বলা হয়।' আসলে বিরোধীদের মনে রাখা উচিত, 'হিন্দুরা যেমন বিজেপির হিন্দুত্বের ভাবনায় মুগ্ধ, তেমন এরকম হিন্দুও আছেন, যাঁরা মুগ্ধ নন।' বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিকে অন্দরমহল থেকে দেখার সুবাদে পিকের ধারণা, আগামী ২০-৩০ বছর বিজেপিকে ঘিরেই ভারতীয় রাজনীতি আবর্তিত হবে। আবার, তাঁর ধারণা, এই বিজেপি নিজে থেকেই শেষ হয়ে যাবে। তবে, এই শেষের ভাবনাটাকে তিনি আপাতত কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান না।
সম্প্রতি কিশোরের কংগ্রেসে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছিল। দলের পুনরুজ্জীবন কীভাবে সম্ভব সেই ব্যাপারে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কিশোরের বৈঠক হয়েছে। কিশোরের দাবি, তিনি কংগ্রেস হাইকমান্ডকে মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। মানে, হিন্দু মাত্রেই বিজেপি, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছেন। সঙ্গে, বিরোধী দল হয়ে উঠতে শেখার দরকার আছে বলে জানিয়েছেন। কিশোরের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ কার্যত বিরোধীশূন্য। বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী হিসেবে দেশবাসী কাউকে পাচ্ছে না। তাই আগে শক্তিশালী বিরোধী হয়ে ওঠা দরকার। বিরোধীদের মুখ কে হবেন, তা পরে ভাবলেও চলবে। মানুষের ঝোঁক নতুনের প্রতি। সেকথা মাথায় রেখে কিশোর নতুন 'কাহিনি আর সেই কাহিনি'তে টিকে থাকার ওপর জোর দিয়েছেন। কিশোরের কথায়, 'যদি আপনি পুরনো কাহিনিতেই নিজেকে আটকে রাখেন, তবে নতুন মুখ উঠবে না।' ব্যাপারটা যেন, যে গল্প সবাই জানে, তাতে আর কেন কেউ উত্সাহ দেখাবে?
আর, বর্তমান জাতীয় রাজনীতির মেরুকরণের ভাবনা সম্পর্কে কিশোর রীতিমতো সোজাসাপটা। তাঁর কথায়, 'মেরুকরণ এমন একটা ব্যাপার, যতটা না-বাস্তব, তার চেয়ে অনেক ফুলিয়ে বলা হয়। মেরুকরণের প্রক্রিয়াটাই বদলে গেছে। (কিন্তু) কীভাবে মেরুকরণ করতেন, ১৫ বছর আগের কথা বলুন, এর প্রভাবটা প্রায় একইরকম রয়ে গেছে। আর আমরা নির্বাচনী পরিসংখ্যান দেখেছি। মেরুকরণের বিভিন্ন ঘটনার পর নির্বাচন হল, আমরা দেখেছি যে সম্প্রদায়ের ৫০-৫৫ শতাংশের বেশি মানুষকে সেদিকে চালাতে পারবেন না। তা যে ধরনের মেরুকরণের ঘটনাই হোক না-কেন।'
Read full story in English