ফিনিশিং লাইন এখনও অনেক দূর। সাফল্যের শেষ স্টপেজ কমনওয়েলথ গেমসের সোনার পোডিয়াম নয়। অন্তত গত কয়েকদিনে উপলব্ধি করে ফেলেছেন অচিন্ত্য শিউলি। আবেগের অত্যাচার তাঁকে ঘিরে যত আলোড়ন ফেলছে, সেই সময়েই প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলেছেন তিনি পরবর্তী লক্ষ্যের। সেই চাঁদমারির নাম আপাতত অলিম্পিক।
কিছুদিন আগেই মোহনবাগান তাঁবুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, পাঁচ লাখ টাকায় মুড়ে দেওয়া হবে বাংলাকে বিশ্বের সিংহাসনে বসিয়ে দেওয়া তরুণকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেউলপুরের অচিন্ত্য বুধবার বলে দিলেন, "নিজের অলিম্পিক প্রস্তুতির জন্যই এই টাকা ব্যয় করা হবে।" অলিম্পিকই যে তাঁর আপাতত ধ্যান-জ্ঞান!
আরও পড়ুন: সোনার ছেলে অচিন্ত্য সেভাবে চিনতে পারছেন কই! অভিমানে ঘরবন্দি দেউলপুরের মহাগুরু অষ্টম দাস
তাঁকে ঘিরে এখন আলোর বলয়, আবেগের বৃত্ত। কোটি কোটি স্বপ্নপূরণের জ্বলন্ত মশাল তিনি। লাইমলাইটের চড়া আলো তাঁকে এখন ধাওয়া করে। ক্যামেরার মুহুর্মুহু ফ্ল্যাশলাইট তাঁকে যেন সন্তর্পনে বলে, 'তুমি পেরেছ। তাই তুমি স্পেশ্যাল।'
অচিন্ত্য শিউলি রূপকথার অন্য নাম। বার্মিংহ্যাম থেকে দেশে ফেরার পরে একদমই ফুসরত পাচ্ছেন না নিভৃতে একান্তে সময় কাটানোর। কখনও মহামেডান ক্লাব, কখনও আবার ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবের সংবর্ধনা! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলাপ-পর্ব তো রয়েইছে। আবার সেলেব হওয়ার বিড়ম্বনা কী, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন দেউলপুরের রাজপুত্র। সমর্থক পরিবৃত হয়ে পড়া, ঘনঘন সেলফির আবদার, ফুল-মালার আদর জাপটে ধরা এসব এখন নিত্য দিনের সফর বছর বাইশের।
অচিন্ত্যকে নিয়ে বুধবার কার্যত আবেগের লাভাস্রোত দেখল দেউলপুর হাইস্কুল। কচি-কাঁচাদের জটলা পেরিয়ে তিনি যখন বলছেন, "সবাই এখন ভারোত্তলক হতে চাইছে। উঠতিদের জন্য একটাই কথা বলব, কাউকে অনুসরণ করার দরকার নেই। হৃদয় যেটা চাইবে, সেটাই করো।" মনে হচ্ছিল, কত দ্রুত পরিণত হয়ে উঠেছেন সাফল্যের হাইওয়েতে সওয়ারি হয়ে!
রাজপথে তাঁর জন্য এখন ফুলের পাঁপড়ি বিছানো থাকে। তবু ভোলেননি ফেলে আসা কষ্ট, দারিদ্র্য। সেই অন্ধকার সময়। অচিন্ত্য বলছিলেন, "আজকের জায়গায় পৌঁছনোর পথে পেরোতে হয়েছে এগারো বছরের খাটনি, পরিশ্রম। সকলের এসব কথাও মনে রাখা প্রয়োজন।"
টালির চালার বাড়ি এখন ঢালাই করা একতলা। সমস্ত পরিশ্রমের কাহিনী যেন খোদাই করা রয়েছে ইঁট-বালি-সিমেন্টের প্রতি খাঁজে। রংয়ের প্রতি প্রলেপে। বাড়িতে ঢুকতে গেলে এখনও কাদামাটি পায়ে লাগে। ঢালাই রাস্তার আস্তরণ কি অপেক্ষায় থাকল অলিম্পিক সাফল্যের, সময়ই উত্তর দেবে।