মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং যুবরাজ সিং। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহীরুহ। দুই সুপারস্টার ভারতকে বহু স্মরণীয় মুহূর্ত এনে দিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ তো বটেই আইসিসি ইভেন্টেও মাহি-যুবি পার্টনারশিপ শিরোপার মুকুট পরিয়েছে জাতীয় দলকে। যার সেরা কীর্তি অবশ্যই ২০১১-য় বিশ্বকাপ জয় হওয়া। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাটে-বলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন যুবরাজ। ফাইনালে যেমন ধোনি ভারতকে কার্যত একার হাতে চ্যাম্পিয়ন করেন। তেমন ম্যান অফ দ্য সিরিজ হন যুবরাজ সিং।
যুবরাজ সিং এবার সরাসরি জানিয়ে দিলেন, ধোনির সঙ্গে তাঁর কোনও বন্ধুত্বই নেই। টিআরএস ক্লিপে এক সাক্ষাৎকারে যুবি জানিয়ে দিয়েছেন, "ধোনি মোটেই আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু নন। ক্রিকেটের স্বার্থেই আমরা বন্ধু হয়েছিলাম একটা সময়ে। আমরা একসঙ্গে খেলেছি। ব্যাস এটুকুই। মাহির জীবনযাপনের ধরণ আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। দেশের জার্সিতে যখন দুজনে খেলতাম, তখন একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি যখন দলে যোগ দি-ই ধোনির থেকে চার বছরের জুনিয়র ছিলাম। ও ক্যাপ্টেন, আমি ভাইস ক্যাপ্টেন ছিলাম। আর অধিনায়ক, সহ-অধিনায়কের মধ্যে সিদ্ধান্তে ফারাক থাকেই।"
"কখনও ওঁর সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হত না। কখনও আবার আমার সিদ্ধান্ত ওঁর মনঃপুত হত না। এটা যে কোনও দলেই হতে পারে। কেরিয়ারের যখন শেষ লগ্নে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেই সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিষ্কার চিত্র ছিল না আমার কাছে। ওঁর কাছে পরামর্শ চেয়েছিলাম। ও আমাকে সরাসরি জানায়, নির্বাচকরা আমাকে আর দলে চাইছে না। অন্তত আমি তখন নিজের ভবিষ্যৎ তো বুঝতে পারি। এটা ২০১৯ বিশ্বকাপের ঠিক আগের কথা।"
যুবরাজ জানাচ্ছেন, জাতীয় দলের সকলেই যে সকলের ভালো বন্ধু হবেন, এমনটাও নয়। "মাঠের বাইরে দলীয় সতীর্থরা বেস্ট ফ্রেন্ড না-ও হতে পারেন। প্রত্যেকের।নিজস্ব জীবনযাত্রার ধরণ রয়েছে। মাঠের বাইরে অনেকেই নির্দিষ্ট বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে ভালোবাসে। যে কোনও দলেই এগারোজন সকলে সকলের বন্ধু হয়না। তবে মাঠে নামলে নিজেদের ইগো সরিয়ে পারফর্ম করতে হয়।"
"মাঠে এমন-ও নজির রয়েছে যখন ধোনি চোট পাওয়ার পর আমি রানার হিসাবে নেমেছি। এখনও মনে রয়েছে, ধোনি যখন কোনও এক ম্যাচে নব্বইয়ের কোটায় ব্যাটিং করছিল, ওঁকে শতরান পূর্ণ করার জন্য স্ট্রাইক দিয়েছি। সেবার একশো রানে পৌঁছতে সাহায্য করার জন্য ধোনির জন্য দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ডাইভ-ও দিয়েছি। ওয়ার্ল্ড কাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪৮ রানে ব্যাটিং করছিলাম। জয়ের জন্য দলের মাত্র ২ রান প্রয়োজন ছিল। মাহি দুটো বল ব্লক করে। যাতে আমি হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করতে পারি।"
২০১১ ওয়ার্ল্ড কাপের কথাও উঠে এসেছে যুবরাজের জবানিতে। জানিয়েছেন, "ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে ঠিক করা ছিল, গম্ভীর যদি আউট হয়ে যায় আমি নামব। বিরাট আউট হলে ধোনি নামবে। এটা বন্ধুত্বের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একদম পুরোদস্তুর পেশাদার ছিলাম। ওঁর প্রতি আমার শুভেচ্ছা রয়েছে। জানি আমার জন্যও ও শুভকামনা জানায়। আমরা দুজনেই এখন অবসরে। যখন আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা বন্ধুদের মতই মিশি। দুজনে কয়েকদিন আগেই এক বিজ্ঞাপনের শুটিং করলাম। অতীতের কথা শেয়ার করে বেশ মজা করলাম দুজনে।"