নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অমিত শাহের একান্ত বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে অকপটে তা জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অমিত শাহ নিজেই তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত আলোচনার বিষয়বস্তু জানিয়েছেন বলে দাবি রাজ্যের বিরোধী দলনেতার।
সম্ভাবনা একটা ছিলই। অবশেষে সেই সম্ভাবনাতেই পড়ে সিলমোহর। নবান্নে একান্ত বৈঠক সেরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব ও ওড়িশার দুই মন্ত্রী। মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির নিরাপত্তা নিয়েই অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক হয় কলকাতায়। বৈঠক শেষে হয় মধ্যাহ্নভোজ। সেখানেই নিজের ঘরে অমিত শাহকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে নবান্নের ১৪ তলায় যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। মিনিট ২০ কথা হয় শাহ-মমতার। তবে এই বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে অমিত শাহ বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু'জনের কেউই মুখ খোলেননি।
তবে অমিত শাহের সঙ্গে নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘরে কী আলোচনা করেছেন সেব্যাপারে তিনি সব জানেন বলে দাবি বিরোধী দলনেতার। অমিত শাহকে বিমানববন্দরে বিদায় জানাতেই গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবাং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিমানবন্দরেই মাত্র দেড়-দু'মিনিট শাহ-শুভেন্দু কথা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেব্যাপারেই এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। অমিত শাহও মমতার সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকের বিষয়বস্তু খোলসা করেছেন শুভেন্দুির কাছে, এমনই দাবি বিরোধী দলনেতার।
শুভেন্দু অধিকারী এধিন বলেন, ''অমিত শাহকে বিদায় জানাতে এসেছিলাম। আমার দেড়-দু'মিনিট ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। মু্খ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হল তা জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, বিএসএফ-এর ৭২টা চৌকির জন্য রাজ্য জমি দিচ্ছে না। বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের সমন্বয় আরও ভালো হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর চেম্বারে কথা হয়েছে। উনি অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে বিএসএফ-কে রাজ্য সহযোগিতা করে।''
আরও পড়ুন- যে মন্দিরে বাস করেন স্বয়ং শনিদেব, প্রার্থনা জানালেই পূরণ হয় মনস্কামনা
এখানেই থামেননি শুভেন্দু। শুক্রবার রাতে কলকাতায় নেমে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন অমিত শাহ। সেই বৈঠক প্রসঙ্গেও এদিন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর মুখে। বিরোধী দলনেতা এপ্রসঙ্গে বলেন, ''গতকালের মিটিংয়ের একটা কথা বলতে পারি। 'টাইম হো গেয়া'। কে বলেছে বলছি না। অর্থাৎ, পশ্চিমবাংলায় বড় বড় ডাকাত, চোর তোষণবাদের আমদানি করার লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে আইন মেনে সংবিধান মেনে যা করা উচিত সেটা করা হবে। আমরা খুব উৎসাহিত।''
পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতেই রাজ্য়ে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতবার ওড়িশায় এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। এবার বৈঠক হল কলকাতায়। দেশের সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ-এর কাজের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে একাধিক রাজ্য। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগেই মুখ খুলেছে পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি। মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় প্রকাশ্যে একাধিকবার এব্যাপারে সরব হয়েছেন। রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করতেই কেন্দ্রীয় সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিনও অমিত শাহের সামনে নবান্নের বৈঠকে একই অভিযোগে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে নবান্নেই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা হয়েছিল। সূত্রের খবর, মধ্যাহ্নভোজ পর্বেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় নিজে অমিত শাহকে তাঁর ঘরে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। এরপরেই নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে পৌঁছে যান অমিত শাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক সারেন অমিত শাহ। মিনিট কুড়ির এই বৈঠকে দু'জনের কী কথা হয়েছে সেব্যাপারে দু'জনের কেউই মুখ খোলেননি।