পুজোর ঠিক আগেই হাওড়ার জগাছা থানা এলাকায় একটি গোল্ড লোন ফাইন্যান্স কোম্পানিতে দিনেদুপুরে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটল। পুলিশি তৎপরতায় ২ ঘন্টার মধ্যেই উদ্ধার হল ডাকাতি হওয়া কয়েক কিলোগ্রাম সোনার গয়না ও নগদ কয়েক লক্ষ টাকা। পুলিশের তাড়ায় বর্ধমানের কাছে চোরাই মাল সমেত গাড়ি ফেলে রেখেই ধানখেত ধরে ছুটে পালায় দূষ্কৃতীরা।পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ হাওড়ার রামরাজাতলা বাজারের কাছে এক বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী সংস্থায় হানা দেয় চার আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুষ্কৃতী। তারা প্রথমেই নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর করে। এরপরে চার ডাকাত অফিসের র্কমীদের মারধর করে ও গ্রাহকদের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লকার রুমে প্রথমে বন্দি করে। এরপর ভল্ট ভেঙে কয়েক কেজি সোনার গয়না ও নগদ কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ওই ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আসা এক গ্রাহক বলেন, "আমরা ভিতরে ছিলাম। চারজন সাধারণ গ্রাহকদের মতোই দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢোকে। তারা প্রথমেই ভয় দেখিয়ে সবার মোবাইল নিয়ে নেয়। ওদের সকলের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
হাওড়ার রামরাজাতলা স্টেশনের কিছুটা আগে একটি পাঁচতলা বাড়ির দোতলায় রয়েছে ওই ফিনান্স কোম্পানির অফিস। ওই সংস্থা থেকে সোনার গয়না বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া হয়। এদিন দুপুরে ওই সংস্থায় যখন এই সব কাজ চলছিল তখন সেখানে সংস্থার র্কমীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন গ্রাহক। ঘটনার প্রত্যক্ষর্দশী গ্রাহকরা জানান, দুপুরে চারজন মুখ ঢাকা যুবক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আচমকা ঢুকে পড়ে গেটে পাহারারত নিরাপত্তা র্কমী চন্দন ঘোষকে মারধর শুরু করে। এরপর অ্যসিট্যান্ট ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে ভল্টের চাবি চেয়ে তাঁকেও মারধর করে বাইরে বের করে এনে গ্রাহক ও কর্মীদের সকলকে লকার রুমে আটকে দেয়। ওই বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার ইন্টারনাল অডিট ম্যানেজার সুন্দর নায়েক বলেন, ‘‘ওরা রিভলভার ঠেকিয়ে আমাদের সবাইকে লকার রুমে বন্দি করে রেখে আধঘন্টা ধরে ডাকাতি করে। আমাদের প্রায় ২৬ কেজি সোনা ও নগদ ১৪ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছে।’’ এদিন ঘটনাস্থলে কর্মীদের সঙ্গে লকার রুমে বন্দি থাকা এক মহিলা গ্রাহক বলেন, ‘‘ওরা বন্দুক দেখালেও আমাদের কোনও ক্ষতি করেনি। সব সময়ই আশ্বাস দিয়েছে, আপনাদের কিছু হবে না।"
আরও পড়ুন ‘মমতা ম্যাডাম’কে ধন্যবাদ, কলকাতার দুর্গাপুজো দেখতে চান বলবিন্দরের স্ত্রী
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ অফিসাররা। পুলিশ জানতে পারে, ডাকাতির পর একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে স্টেশন রোড দিয়ে বেরিয়ে কোনা এক্সপ্রেসের দিকে যেতে দেখা যায়। পুলিশ সমস্ত থানাকে সর্তক করার পাশাপাশি রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে সম্ভাব্য গাড়িটির এবং তার গতিপথের হদিশ পায়। শেষ পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটিকে চিহ্নিত করে তাড়া করে পুলিশ। পুলিশের তাড়ায় র্বধমানের আগে গাড়ি ও সমস্ত ডাকাতি করা মাল ফেলে পালায় চার দুষ্কৃতী। হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘র্বধমানের আগে গাড়ি ও সমস্ত ডাকাতি করা সোনা ও টাকা উদ্ধার হয়েছে। ডাকাতরা ধানখেত দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। তবে ডাকাতদের ধরতে পুলিশি তল্লাশি চলছে। খুব শীঘ্রই সকলকে গ্রেফতার করা হবে।’’ পুজোর আগেই এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। যে সব গ্রাহকরা সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা ওই সংস্থার অফিসের সামনে এসে জড়ো হন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন