বীরভূম থেকে বাংলাদেশ। সুকৌশলে রমরমিয়ে চলত গরু পাচার। অনুব্রত মণ্ডল থেকে এনামূল হক ও তার সহযোগীরা সকলেই এই পাচারে জড়িত। আদালতে জমা করা ইডির দেওয়া চার্জশিটে দাবি এমনই। রাতের অন্ধকারে গরু সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে পাঠানো হবে সেই নকশা এনামূল হক তৈরি করতেন বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে। প্রশানের একাংশও এতে সহায়তা করেছে বলে দাবি এনফোর্সেমেন্ট ডিরেক্টরেট।
ইডি-র জমা করা চার্জশিট অনুসারে, ইলামবাজার, হুগলি সহ একাধিক পশু হাট থেকে গরু সংগ্রহ করা হত। পাচারের জন্য ব্যাক ডেটেড স্লিপ বানিয়ে গরু বোঝাই লরি মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিত। রাস্তায় যাতে পুলিশ না ধরে তার জন্য রাখা টোকেন থাকত। এরপর সেই গরু মুর্শিদাবাদ জেলায় পৌঁছত। এই মুর্শিদাবাদ ছিল এনামূল হকের ডেরা।
মুর্শিদাবাদ জেলার বাংলাদেশ সীমান্তের ৭-৮ কিলো মিটার দূরে এনামূলের সুরক্ষিত জায়গা ওমরপুরে পাচারের গরু রাখা হত। এখানেই একদিকে পশু হাট থেকে গরু পৌঁছত, অন্যদিকে শুল্ক দফতরের ধরা দামে গরু অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে নেওয়া হত পাচারের জন্য। এতে জড়িত ছিল বিএসএফের কমান্ডান্ট সতীশ কুমারও।
চার্জশিটে লেখা রয়েছে যে, এনামূলের সুরক্ষিত স্থানে গরু পৌঁছে গেলে পরে নিমতিতা, খাণ্ডুয়া, গিরিয়া বিওপি দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে স্থানীয় রাখালের সহযোগিতায় পাচার চলত। এইসহ কাজ হত গভীর রাতে। এই চার্জশিটে নাম রয়েছে, সয়গল হোসেন ও আবদুল লতিফেরও। সয়গল হোসেন বর্তমানে জেলবন্দি। তবে লতিফ আপাতত কোর্টের রক্ষাকবচে জামিনে মুক্ত।
আরও পড়ুন- দিন পাকা, অবশেষে তিহাড়েই মুখোমুখি অনুব্রত-সুকন্যা, কবে?
এছাড়া, চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে, জেরায় অনুব্রত জানিয়েছেন, স্ত্রী প্রয়াত ছবি মণ্ডল তাঁর কোনও ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন না। তিনি এবং কন্যা সুকন্যা মিলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ কোঠারির দেখানো পথে সমস্ত ব্যবসা সামলাতেন। আর এখানেই বাবা-মেয়ের বয়ানে অসঙ্গতি উঠে এসেছে। ইডির চার্জশিট অনুসারে সুকন্যা নিজের বয়ানে বলেছেন, তিনি ব্যবসার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাঁর বাবা তাঁকে যেখানে সই করতে বলতেন, তিনি সেটাই করতেন।
চার্জশিটে ইডি আরও জানিয়েছে যে, অনুব্রত তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উৎসের কথা জানাতে গিয়ে দাবি করেছেন যে- চালের কারবার এবং জমির দালালি থেকে উপার্জিত অর্থের কথা। কিন্তু তার কোনও নথি দেখাতে পারেননি। অনুব্রত দাবি করেছেন, তাঁর লেনদেন-সহ আয়কর রিটার্ন জমার যাবতীয় বিষয়ে মণীশ সব জানেন। কিন্তু মণীশকে জেরা করে তদন্তকারীরা ওই টাকার উৎসের কোনও ব্যাখ্যা পাননি। যদিও মণীশ তাঁর বয়ানে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, সুকন্যাই ব্যবসার বিষয়ে নির্দেশ দিতেন। অনুব্রত এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে সত্যি কে বলছেন?