Sandeshkhali-NHRC: সন্দেশখালির (Sandeshkhali) ঘটনা নিয়ে এবার রিপোর্ট পেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। NHRC-এর তদন্ত রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে মহিলাদের গণধর্ষণ (Gangrape) করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ। এমনকী পুলিশ উল্টে অভিযুক্তদের সঙ্গেই নির্যাতিতাদের আপোসের পরামর্শ দিত বলে রিপোর্টে উল্লেখ জাতীয় সংস্থাটির।
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ওই এলাকার গ্রামে-গ্রামে ঘুরেছেন NHRC-এর প্রতিনিধিরা। নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। তারপরেই তৈরি হয়েছে ওই রিপোর্ট। এনিয়ে কয়েক দফা সুপারিশও করা হয়েছে NHRC-এর তরফে। সেই রিপোর্টটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব এবং ডিজিপিকে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্য প্রশাসন কী কী ব্যবস্থা নিল সেব্যাপারে আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছে কমিশন। এদিকে, তৃণমূলের তরফে এই রিপোর্টকে 'পক্ষপাতদুষ্ট' বলে অভিহিত করা হয়েছে। এমনকী NHRC-কে BJP-র একটি শাখা বলেও তোপ দেগেছে রাজ্যের শাসকদল।
NHRC-র ওই রিপোর্টে শিবু প্রসাদ হাজরা, উত্তম সরদার এবং আমির আলি গাজী, শেখ শাহজাহানের (Sheikh Shahjahan) ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যদিও শাহজাহান-সহ তিনজনই পরে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের দফায়-দফায় জেরা করছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকরা।
সন্দেশখালিতে শাহজাহান-পর্বের সূচনা হয়েছিল জানুয়ারির শুরুতে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ED-র দল তার বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। সেই সময়ে শাহজাহান অনুগামীরা চড়াও হয়েছিল ED-র অফিসারদের উপরে। কোনওমতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন ইডির প্রতিনিধিরা। সেই ঘটনার প্রায় এক মাস পর সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এলাকার মহিলারা গর্জে ওঠেন 'শাহজাহান-শাসনের' বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, শাহজাহান ও তাঁর সহযোগিরা বছরের পর বছর ধরে তাঁদের যৌন হয়রানি করে আসছে। উপর্যুপরি বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শাহজাহানের গদি টলতেই এলাকার মহিলারা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে সাহস সঞ্চয় করেছিলেন।
৫৫ দিন পলাতক থাকার পর শাহজাহানকে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযোগের তদন্ত CBI-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। NHRC-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, “একজন মহিলা NHRC-র প্রতিনিধিদের সামনে বলেছেন, প্রায় এক বছর আগে তাকে শিবু হাজরা এবং উত্তম সরদার দুই-তিনবার ধর্ষণ করেছিল। এমনকী এখন তিনি এই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ভয়ে এবং সামাজিক কলঙ্কের কারণে পুলিশে ধর্ষণের অভিযোগ জানাতেও রাজি নন। তিনি পার্টি অফিসে গিয়ে তার স্বামীর কাছে ঘটনাটি প্রকাশ করেন। কিন্তু অভিযুক্তরা তাঁকে মারধর করে। ভয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য বেঙ্গালুরুতে চলে যান।”
NHRC-র রিপোর্টে আরও উল্লেখ, “অন্য একজন মহিলা NHRC-র দলের সামনে বলেছেন, ২০২২-২৩ সালের শীতের রাতে তার স্বামীকে অভিযুক্তদের সহযোগীরা জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। রাত ২ টো পর্যন্ত ঠাণ্ডায় কাজ করতে বাধ্য করেছিল। পার্টি অফিসে তাকে খুঁজতে গেলে তাকে অনুচিতভাবে স্পর্শ করা হয়… ৩-৪ দিন পর তাকে পার্টি অফিসে ডেকে নিয়ে হাজরা ও গাজী গণধর্ষণ করে। পরের দিন, তিনি থানায় যান। যেখানে তাকে অভিযুক্তদের কাছে গিয়ে আপোশের পরামর্শ দেওয়া হয়। ন্যাশনাল কমিশন অফ উইমেন আসার পর, তিনি এক বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তার মামলা নথিভুক্ত করতে সক্ষম হন।”
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন NHRC-র প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, এলাকার যুবতী ও অল্পবয়সী মেয়েদের নিরাপদে রাখতে অন্য জায়গায় আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হতো।
প্রায় প্রতিটি ভুক্তভোগী NHRC-র দলকে জানিয়েছেন, পুলিশ শিবু হাজরা, উত্তম সরদার এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের জবাব দেয়নি। আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের অভিযুক্ত বা তাদের পৃষ্ঠপোষক শাহজাহানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে আপোশের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়েছে যে অভিযুক্তরা "পার্টি মিটিং এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মিটিংয়ের অজুহাতে" মহিলাদের তৃণমূল কার্যালয়ে ডেকে পাঠাতো।
“অল্পবয়সী এবং সুদর্শন মহিলাদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছিল। তাদের সন্দেশখালিতে তৃণমূল কার্যালয়ের কক্ষের ভিতরে নিয়ে গিয়ে যৌন শোষণ/গণধর্ষণ করা হয়। অন্যান্য মহিলারা খাবার তৈরি করা, অফিস পরিষ্কার করা এবং পুকুর পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজে নিযুক্ত ছিল।” রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহিলারা তৃণমূল নেতাদের ভয়ে এবং সামাজিক কলঙ্কের কারণে ঘটনাগুলি এর আগে প্রকাশ্যে আনেননি।
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই রিপোর্টকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “রিপোর্টটি মূলত বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বসে লেখা হয়েছে। এই ধরনের সংগঠনগুলি এখন বিজেপির সামনের দিকের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমরা এই ধরনের প্রতিবেদনে বিশ্বাস করি না।” রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, "আমি প্রতিবেদনটি না দেখা পর্যন্ত মন্তব্য করব না।"