''পর্বতকে জয় করা যায় না। শুধুমাত্র তার শিখরে উঠে স্পর্শ করা যায়। এটাই আমি মেয়েকে শিখিয়েছি। তাই এভারেষ্ট জয় করা নয়, আমার মেয়ে এভারেষ্টের চূড়া স্পর্শ করেছে আর আমি এই জন্য মা হিসেবে গর্বিত।'' প্রথম বাঙালি কন্যার এভারেস্ট জয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন গর্বিত মা।
চন্দননগরের পিয়ালী বসাক ইতিহাস গড়ে প্ৰথম বাঙালি কন্যা হিসাবে জয় করে ফেলেছেন বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট তিনি। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। আইস স্কেটিংয়েও রয়েছে নজরকাড়া সাফল্য। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গত মার্চের ২৮ তারিখ চন্দননগর থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা দেন।
বঙ্গ তনয়া এই পর্বতারোহীর স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হল রবিবার, ২২ মে। এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন পিয়ালি। তা-ও আবার অক্সিজেন ছাড়াই এল বেনজির এই সাফল্য। প্ৰথম বাঙালি হিসাবে রেকর্ড বইয়ে ঢুকে পড়লেন সেই সঙ্গে। মেয়ের দারুণ এই কৃতিত্বের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তঁর মা স্বপ্না বসাক আনন্দে আত্মহারা। চন্দননগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁটাপুকুরে পিয়ালিদের বাড়িতে গতকাল থেকেই বিড় লেগে রয়েছে।
আত্মীয়, প্রতিবেশীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন থেকে লোকজন আসছেন পিয়ালদের বাডিতে। চন্দননগরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বছর একত্রিশের পিয়ালীর ছোট থেকেই উৎসাহ পাহাড় নিয়ে। বাবা তপন বসাক বর্তমানে অসুস্থ। কোনও কিছুই মনে করতে পারেন না। তবে একসময় দুই মেয়েকে প্রচুর উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের ছোটবেলায় পাহাড়ে পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে গেছেন। সেখান থেকেই শুরু।
আরও পড়ুন- ইতিহাসে প্ৰথম বাঙালি কন্যা পিয়ালী! এভারেস্ট চূড়ায় পা পড়ল চন্দননগরের গর্বিত তনয়ার
তাঁর মা বললেন, ''খুবই উৎকণ্ঠায় ছিলাম। অনেক ঝড়-জল সহ্য করে গত ৩ এপ্রিল ও নেপালে যায়। ওর মাথার ওপর ৩৫ লাখ টাকার দেনা। গোয়া থেকে ছোট মেয়ে তমালি ফোন করে জানায় খবরটা। বললো মা মাম (পিয়ালীর ডাকনাম) এভারেস্ট সামিট করেছে। শুনে আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে। পিয়ালির নেপাল যাত্রা প্রায় আটকে গেছিলো টাকার অভাবে। একসময় বসতবাড়ি বন্ধক দেওয়ার কথাও ভেবেছিল। কিছু এনজিও-র সাহায্য নিয়ে অবশেষে নেপাল পৌঁছে গেলেও এখনও ১১ লাখ টাকা বাকি এজেন্সির কাছে।''
মেয়ের অসাধারণ এই কৃতিত্বের পর এবার পিয়ালির মা চাইছেন পিয়ালির ধার করা টাকা মেটাতে এবার রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার এগিয়ে আসুক। তাঁর কথায়, ''শুধু ফুটবল, ক্রিকেট কেন পর্বতারোহনও তো একটা ইভেন্ট। এখানেও সরকারের সাহায্য করা উচিত। আমার দুই মেয়েই ট্রেন্ড। ছোট মেয়ে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারের ইভেন্টের সঙ্গে যুক্ত। সেই জন্যই ও গোয়ায় গেছে।''
স্বপ্নাদেবী আরও জানিয়েছেন, ২০১৯-এ এভারেষ্টে উঠতে চেয়েছিল পিয়ালী। কিন্তু অর্ধেক গিয়ে শেরপাদের সঙ্গে গন্ডগোলের ফলে তার স্বপ্ন পূর্ণতা পায়নি। তবে সেই সময় তার অক্সিজেন স্যাচুয়েশন দেখে শেরপা রাই অবাক হয়ে গেছিলেন। হাই অলটিচুডেই পিয়ালির ৯৬ ছিল। আর সেখান থেকেই অক্সিজেন ছাড়া শিখরে ওঠার ইচ্ছেটা হয়েছিল। অবশেষে তার সাধনা পূর্ণতা পেয়েছে। এবার মেয়ের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন রত্নগর্ভা এই মা।