স্ত্রী সুচিত্রা মিস্ত্রির এমআরআই করাবেন বলে হাসপাতালে প্রায় ২৬ দিন ধরে ঘুরছেন জয়নগরের সুভাস মিস্ত্রী। তিনি জানান, ‘ হাসপাতালের এক মানবিক চিকিৎসক আমার আর্থিক সমস্যার কথা শুনে বিনামূল্যে এমআরআইয়ের জন্য লিখেও দিয়েছেন। তাতে জরুরি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। জয়নগর থেকে প্রতি সপ্তাহেই হাসপাতালে আসতে হয় এমআরআইয়ের জন্য কিন্তু তারিখ মেলেনা। আজও আসতে বলা হয়েছে। দেখি তারিখ পাই কিনা”।
হাসপাতালের রোগীদের জন্য গত সেপ্টেম্বরেই পরিকাঠামোর বেশ কিছু বদল আনে এনআরএস কর্তৃপক্ষ। কোভিড পর্ব মিটতেই ওপিডি’র রোগীর চাপ সামাল দিতে নয়া দু'টি আউটডোর টিকিট কাউন্টার করা হয় হাসপাতালের তরফে। কিন্তু তাতেও যে সমস্যা আখেরে মেটেনি, ওপিডি’র সামনে লম্বা লাইন তার প্রমাণ।
হাসপাতালের মূল গেটের বাঁদিকে ওপিডি টিকিট কাউন্টারে তখন উপচে পড়ছে রোগীর চাপ। তার মাঝেই ওপিডি লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ সকাল থেকে খালি পেটে লাইনে দাঁড়িয়ে, অনেকে লাইন না দিয়েই টিকিট পেয়ে যান। এমন অভিযোগের সত্যতা খোঁজে এদিক ওদিক খানিক ঘোরাঘুরি করতেই দেখা মিলল জনৈক স্বপন দা’র । তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে শ্যামনগর থেকে আগত এক রোগী।
লাইনে না দাঁড়িয়ে এখানে টিকিটের জন্য কেন দাঁড়িয়ে, প্রশ্ন করতেই সটান উত্তর,“লাইন না দিয়ে হাতে গুঁজে দিলেই ৫০ টাকার বিনিময়েই মিলবে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ। যতবার আসি ততবারই স্বপন দা’কে ফোন করি। হাতে ৫০ টাকা দিলেই একেবারে ঝক্কি ফ্রি”! নেফ্রোলজি ওপিডি’র লাইনে দাঁড়িয়ে শ্যামবাজার থেকে আগত প্রবীর বিশ্বাস। পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন করতেই প্রবীর বাবুর অভিযোগ, “সরকারি হাসপাতালে ফ্রি পরিষেবা পেতেই আসা। করোনার পর রোজগার কমেছে। ওপিডি দেখানো টা তো হয়েই যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয় তাহলে কিসের ফ্রি পরিষেবা বলুন তো…”!
এদিকে হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিভাগে দেখাবেন বলে নিউ ব্যারাকপুর থেকে এসেছেন শিবানি দেবী। হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রে জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারবেন “বুধবার ছাড়া আর কোন দিন ওই বিভাগে চিকিৎসক মেলেনা। কী করবেন জানতে চাইলে সাফ পরামর্শ, “মেডিসিনেই দেখিয়ে নিন”। পেটের গুরুতর সমস্যা, মেডিসিনে কী দেখাবেন, খানিক চিন্তা করে বাড়ির পথেই রওনা হলেন শিবানি দেবী। রোগী ও পরিজনদের অভিযোগ একদিনে রোগীর চাপ অনেকটাই বেশি থাকে। খানিক এগোতেই চোখে পড়ল ডানদিকে বাথরুম। থিক থিক করছে রোগী ও পরিজনরা। তাদের অভিযোগ, বাথরুমের পরিবেশ এতটাই নোংরা যে তা ব্যবহারের অযোগ্য।
রাতের বেলায় জিনিসপত্র উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীর পরিজনরা। তাঁরা জানান, “রাত্রে মোবাইল, মানি ব্যাগ একটু অসাবধান হলেই গায়েব”। কিন্তু পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে তো! উত্তরে তারা জানান, “একবার চুরি হলে আর কিছুই করার নেই। ওই মাল আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়”। যদিও হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা এই ধরণের অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় বলেই জানিয়েছেন।
রোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালের অধ্যক্ষ চিকিৎসক পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন , “স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কোন গাফিলতি বরদাস্ত করা হয় না। হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পরিষেবার বিনিময়ে টাকা চাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নম্বরে অভিযোগের কথাও বলা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। রোগীদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বদা সচেতন”। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজির ওপিডির সমস্যাও সত্ত্বর মিটবে বলে হাসপাতালের তরফে জানান হয়েছে।