বাংলার প্রসিদ্ধ রথযাত্রা গুলোর মধ্যে অন্যতম হুগলির গুপ্তিপাড়া রথযাত্রা। যতদূর জানা যায় ১৭৪০ সালে এই রথ উৎসব শুরু করেন মধুসুদানন্দ। সাধারণ রথের সঙ্গে বা পুরীর রথের সঙ্গে গুপ্তিপাড়ার রথের পার্থক্য হল পুরীর রথকে জগন্নাথ দেবের রথ বলে। আর গুপ্তিপাড়ার রথকে বলে বৃন্দাবন জিউর রথ।
এ বছর রথ যাত্রা ২৮৩ বছরে পা দিল। করোনার প্রভাবে ২ বছর রথ টান বন্ধ ছিল। বছরের অন্যসময়ে ঐতিহ্যপূর্ণ বৃন্দাবনচন্দ্র মঠের পাশে বছরভর এই রথ পেল্লাই টিনের খাঁচায় ভরা থাকে। এই রথ চারতলা, উচ্চতা প্রায় ৩৬ ফুট, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩৪ ফুট করে। বৃন্দাবন মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রা রথে চড়ে যান প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোঁসাইগঞ্জ-বড়বাজারে মাসির বাড়ি, মানে যা ‘গুণ্ডিচা’ বাড়ি নামেই বেশি পরিচিত
গুপ্তিপাড়া রথযাত্রার একটি একান্ত নিজস্ব বিশেষত্ব আছে। এখানে ভাণ্ডার লুঠ হয়। ভারতবর্ষের কোথাও এই ভাণ্ডার লুঠ হয় না। ভাণ্ডার লুঠের পেছনে একটা গল্প আছে। একবার মা লক্ষ্মীর সঙ্গে মন কষাকষি হওয়ায় প্রভু জগন্নাথ লুকিয়ে মাসির বাড়িতে আশ্রয় নেন। মা লক্ষ্মী ভাবলেন, স্বামী বোধহয় পরকীয়ায় জড়িয়েছেন। শ্রী বৃন্দাবনের কাছে জানতে পারলেন প্রভু জগন্নাথ রয়েছেন মাসির বাড়িতে। স্বামীর মতিস্থির করাতে লক্ষ্মী লুকিয়ে ওই বাড়িতে ‘সর্ষে পড়া’ ছিটিয়ে আসেন, পরে জানতে পারেন মাসির বাড়ির উপাদেয় খাদ্য সমুহের জন্যেই প্রভু জগন্নাথ নাকি আসতে পারছেন না।
আরও পড়ুন জগন্নাথ-বলরাম-শুভদ্রা নন, তারাপীঠে রথে পরিক্রমা তারা মায়ের
তখন মা লক্ষ্মীর অনুরোধে শ্রী বৃন্দাবন লোকলস্কর নিয়ে যান মাসির বাড়ি, গিয়ে দেখেন, তিনটি দরজাই বন্ধ। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাঁরা সারি সারি মালসার খাবার লুঠ করে নেন, শেষে প্রভু জগন্নাথ মনের দুঃখে মা লক্ষ্মীর কাছে ফিরে আসেন। এই সম্পর্কে প্রফুল্লকুমার পান মহাশয় তাঁর ‘গুপ্তিপাড়ায় শ্রী শ্রী বৃন্দাবন জিউর আবির্ভাব ও রথযাত্রা’ বইতে এর পরিচয় দিয়েছেন এ ভাবে — “লন্ডভন্ড হয়ে যায় ভোগ উপাচার।/ তাতে জগন্নাথে হয় চেতনা সঞ্চার।” উল্টোরথের দিন এই ভাণ্ডার লুঠ হয়। মাটির এক-একটা মালসায় প্রায় পাঁচ কিলো করে প্রসাদ। এরকম মালসার সংখ্যা চারশোরও বেশি। এগুলো লুঠ করাই হল ভাণ্ডার লুঠ।