রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত কি শেষ পর্যন্ত এড়ালেন রাজ্যপাল? শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনের ঘটনাক্রম দেখে এই প্রশ্নটিই উঠছে। মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে যাই বলে থাকুন এদিন বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্য সরকারের লেখা ভাষণই হুবুহু পড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। উল্লেখ্য, রাজ্য মন্ত্রিসভার তৈরি করা বাজেট বক্তৃতার খসড়ায় নিজের বক্তব্য সংযোজন করার এবং প্রয়োজন মনে করলে অংশ বিশেষ বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন জগদীপ ধনকড়। রাজ্যপালের এহেন প্রস্তাব মমতা সরকার পত্রপাঠ খারিজ করে দেয়। এর জেরে বাজেট বক্তৃতা ঘিরে রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকার সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত মমতা সরকারের তৈরি করা বক্তব্যের খসড়াই পাঠ করলেন ধনকড় এবং প্রথা ভেঙে অধিবেশন শেষে বিধানসভায় অধ্যক্ষের ঘরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চা সহযোগে বৈঠকও করেন রাজ্যপাল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৈঠক শেষে মমতা ও ধনখড়কে হাসিমুখেই একসঙ্গে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
শুক্রবারই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হল। রীতি মেনে রাজ্যপালের ভাষণের মাধ্যমেই রাজ্য বাজেট অধিবেশনের সূচনা হয়। আর রাজ্যপালের এই বক্তব্যের খসড়া তৈরি করে রাজ্য সরকার। সেই খসড়াই পাঠ করেন রাজ্যপাল। তবে এবার রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, সরকারের প্রস্তাবিত খসড়ার সঙ্গে নিজের বক্তব্যও তিনি তুলে ধরবেন। আর এ নিয়েই আপত্তি জানিয়েছে মমতা সরকার।
আরও পড়ুন: মমতাকে লেখা হাজার খানেক চিঠি নবান্নে!
বাজেট বক্তৃতায় তাঁর পরামর্শ দেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে কিছুটা জোর দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “রাজ্য সরকার নিয়মমাফিক তাঁদের নীতি, ভাবনা লেখেন রাজ্যপালের ভাষণে এবং তা যথাযথভাবেই আমার কাছে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যপাল এবং সাংবিধানিক প্রধান হিসাবেও আমার পরামর্শ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমার কাছে যা পাঠানো হয়েছে তা আমি খতিয়ে দেখছি।” রাজ্যপালের এহেন বক্তব্যর সমালোচনা করে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বলছে, কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্য বাজেটে হস্তক্ষেপ করেন না। হতে পারে তিনি আমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং সে কারণেই এ জাতীয় মন্তব্য করেছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে তাঁকে এখানে নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার সংবিধান এবং সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করছে।” বিজেরি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সঙ্গে যথাযথ ব্যবহার করছে না রাজ্য সরকার’’।
আরও পড়ুন: মুকুলেই ভরসা রাখছেন মমতা
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে কেরালা বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাঠ করার সময় সে রাজ্যের রাজ্যপাল বলেছিলেন, এই বক্তব্যের সঙ্গে তিনি সহমত নন, এটা সরকারের মত। এই প্রেক্ষিতে বাংলার রাজ্যপালের এহেন মন্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করেছিল ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তবে শেষ পর্যন্ত ধনখড় তা করেননি। দীর্ঘদিন ধরেই আইনশৃঙ্খলা-সহ একাধিক ইস্যুতে মমতা সরকারের সমালোচনায় মুখর হতে দেখা গিয়েছে ধনকড়কে। যার জেরে প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সেই প্রেক্ষাপটে রাজ্যপালের এহেন পদক্ষেপ নয়া মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করা হচ্ছে।