এর আগে কলকাতা এসেছেন বটে, তবে শুটিং উপলক্ষে তাঁর এই প্রথমবার কলকাতায় আসা। তিনি পুজোর আগেই শহর জুড়ে অপূর্ব মরশুমের সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষটাই যখন অপূর্ব, তখন এ আর নতুন কি? তিনি বাংলাদেশের সুপারস্টার, কথায় ঠিক যতটা নম্রতা তেমনই শহরের মানুষের প্রেম ভালবাসায় তিনি আপ্লুত।
চা, খাওয়াদাওয়ার মাঝে সকাল থেকে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত। আর স্বাভাবিক, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব যখন কলকাতায় তখন প্রশ্নের শেষ থাকে কী? সাক্ষাৎকার শুরুর আগেই শুরু করলেন আলাপ আলোচনা। বলছিলেন, "এত বৃষ্টি, শহরটা পুজোর আগে কীভাবে আনন্দে মেতে উঠেছে দেখতেই পেলাম না। ছেলের স্কুল না থাকলে ওকে নিয়ে আসতাম।" বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি পরম আদরের আবার কারওর কাছে স্নেহেরও। কিন্তু কলকাতার মানুষের কাছে তিনি এতটা ভালবাসা পাবেন, ভাবেন নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে খোশমেজাজে আড্ডা দিলেন টলিপাড়ার 'চালচিত্রের' নায়ক।
কলকাতায় রাস্তায় বেরোতে পারছেন? ঘিরে ধরছে না মানুষজন?
আসলে, আমার কাছে কিন্তু এই জিনিসটা খুব অভ্যাসের মত। বাংলাদেশে তো মানুষ দেখলেই ঘিরে ধরেন। কিন্তু, এখানে কী বলো তো? মানুষ আমায় দেখছেন, কিন্তু ধরতে পারছে না। কেউ কেউ ভাবছে, উনি তো বাংলাদেশের মানুষ। এখানে এখন কী করে আসবে?
বাংলাদেশের এত তারকারা এসেছেন, অপূর্বর কেন দেরি হল? নাকি চালচিত্রের পরিচালক প্রতীমদার ডাকের অপেক্ষা করছিলেন?
আমার আসলেই মনে হয় তাই! আমি খুব লাকে বিশ্বাস করি। আমার কাছে মনে হয় আমার এই সময়টায় আসার কথা ছিল তাই আমি এসেছি। আগে চাইলে হয়তো হত না। পরে হয়তো অন্য কিছু আছে কপালে।
এই বাংলায় যে কাজ করছেন, মানুষদের কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন? লাগছে কেমন?
ভীষণ ভাল লাগছে। আমি সকলের আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ। আনন্দে আটখানা। এত সম্মান পাব, আশা করিনি।
এই ছবিতে তো নাকি খলনায়কের ভূমিকায়...
না! একেবারেই না, এটা একদম ভুল। খলনায়কের ভূমিকায় একেবারেই না। আমরা কিছু রিভিল করছি না। কেন যে মানুষের মুখে এসব রটছে...
টলিউডে যখন পা রেখেই ফেলেছেন, কী মনে হচ্ছে এখানের হিরোদের টেক্কা দিতে পারবেন?
টেক্কা দেওয়া অনেক পরের প্রশ্ন। আমি এখানে এসে একটা দারুণ কাজ করলাম। ভাল কিছু উপহার, ভালবাসা নিয়ে যাচ্ছি। আমি খুব সাধারণ মানুষ, নিজেকে সুপারস্টার একদম মনে করি না। কম্পিটিশন করতে আসিনি।
বিরাট স্টার-কাস্ট 'চালচিত্রর'! কতটা কাজ হল, কতটা খুনসুটি, নাকি অপূর্ব একটু দুরুত্ব রেখেছিল?
এই যে তারকাদের সঙ্গে কাজ করলাম, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবাই খুব আপন হয়ে গেল। পাহেলে আপ একটা শব্দ হয় না, ঠিক সেটা চলছিল। আলাদা একটা সম্মান-ভালবাসা ছিল। সেটের মধ্যে কাজ হয়েছে আর বাইরে ভ্যানিটি ভ্যানে অনেক গল্প। ভীষণ ভাল একটা অভিজ্ঞতা। দূরত্ব রাখার তো প্রয়োজনই হয়নি।
বাংলা ছবি নিশ্চই দেখা হয়, এমন একটা বিষয় যেটা আপনাকে আকর্ষণ করে?
অবশ্যই দেখা হয়। সে আর বলতে...? আর নির্দিষ্ট একটা বিষয় যদি জিজ্ঞেস করো, তাহলে বলব আমাদের যে আবেগ - অনুভূতি... সেটা আমায় খুব টানে। এটা বাংলা ছবিতে খুব বেশি পাওয়া যায়। আমি আমার ইমোশন গুলোর সঙ্গে বাংলা ছবির হুবহু মিল পাই।
আপনি তো ভীষণ ভাল গান, অনেক নাটকে আপনাকে দেখাও যায় গাইতে, পেশা হিসেবে ফুল ফর্মে নিচ্ছেন না কেন?
আমি গানের কিছু জানি না, বিশ্বাস করো। সারেগামা আমার কিছু জানা নেই। আমি যেটা জানি না, সেটা কী করে পেশা হিসেবে নেব? গেয়ে দিয়েছি, মানুষের ভাল লেগে গিয়েছে, এটা গল্প। কিন্তু প্রফেশনাল ভাবে একদম না। আমার কোনও ট্রেনিংই নেই।
সবসময় মুখ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছে, কোনওদিন যদি সিনেমা কিংবা নাটকের প্রয়োজনেই পার্শ্ব চরিত্র বা গেস্ট অ্যাপ এর সুযোগ হয়, করবেন?
হ্যাঁ! অবশ্যই... কেন করব না? নিশ্চই করব। আমার কো স্টার এর ওপর গল্প, আমি সেখানে পার্শ্ব চরিত্র। এরম অনেক নাটক করেছি। অনেক উদাহরণ আছে।
যদি এমন একজন পরিচালকের থেকে ডাক পান যাঁকে ব্যাক্তিগত স্তরে আপনার খুব পছন্দ, কিন্তু স্টোরিলাইনটা ঠিক আপনার মনের মত না, কী করবেন?
ডিপেন্ড করে, অ্যাপ্রোচ এর ওপরে। বেশিরভাগ সময় সত্যিটা বলে দি। অনেকসময় এমন হয় যে চরিত্রটা একধাচের মনে হয়। তখন বলে দি, যে না এটা হবে না। এমন চরিত্রে আগে অভিনয় করেছি। আবার কখনও মনে হয়, যে না! ঠিক আছে, করব। কিন্তু তাতে বেশ কিছু টুইস্ট রাখতে হবে। কিছু পরিবর্তন রাখতে হবে। আসলে আমাদের গল্পের লিমিটেশন খুব বেশি। সহজে এক্সপ্লোর করা যায় না। যেহেতু পরিবারের সকলে মিলে নাটক দেখেন।
বাংলাদেশে পরিচালকের নজরে নেপটিজমের প্রাধান্য আছে?
না! এই বিষয়টা আমাদের ঢাকায় নেই। যখন যেই চরিত্রের জন্য যাকে প্রয়োজন... আমার দেখো, শিহাব শাহীনের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু, সে তাঁর যে চরিত্রের জন্য যখন যাকে প্রয়োজন হয়েছে সে করেছে। কোনও বাধ্য বাধকতা নেই কিন্তু। তাহলে তো আরও লিমিটেশন হয়ে যাবে। এক্সপ্লোর করার ট্রাই করতে হবেই। আমিও নতুন পুরাতন সকলের সঙ্গেই কাজ করেছি।