Advertisment

তিমির বমি ভীষণ দামি, কেন এত দাম? জানলে অবাক হবেন

Whale Vomit Explained: কোন কাজে লাগে তিমির বমি?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sperm Whale, Ambergris

গত ১৫ দিনে দুটি পৃথক ঘটনায় পাঁচজনকে ৯ কেজি অ্যাম্বারগ্রিস বা তিমির বমি সহ পাকড়াও করেছে মুম্বই পুলিশ।

অ্যাম্বারগ্রিস। নাম শুনেছেন? না না নার্গিসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। গ্রিসের সঙ্গেও না। হোয়েল মানে তিমির সঙ্গে সরাসরি যোগ। মনে আছে তো, ব্লু হোয়েল নিয়ে কত কাণ্ডই না হয়েছিল ক'বছর আগে। এই তিমি নীল নয়, স্পার্ম-- স্পার্ম তিমি। এর সঙ্গে অ্যাম্বারগ্রিসের গলায় গলায় সম্পর্ক। গলায় গলায় কেন? তিমির গলা দিয়েই তো উঠে আসে এই পদার্থ। অ্যাম্বারগ্রিস সম্পর্কে যাঁরা জানেন, তাঁরা অবশ্য গলার বদলে নাকে হাত দিচ্ছেন।

Advertisment

কী, সব জট পাকিয়ে গেল তো? অ্যাম্বারগ্রিস হল তিমির বমি-- নাকে হাত দিচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা জানেন অ্যাম্বারগ্রিস ব্যবহার করা হয় সুগন্ধী নির্মাণে। তিমির বমি থেকে সুগন্ধী! এও সম্ভব! আবার কোন তিমি, না স্পার্ম তিমি--। স্পার্ম শুনেও অনেকের খটকা লাগছে। অ্যাম্বারগ্রিসে ঢোকার আগে তাই একটু স্পার্ম তিমির জন্য সমুদ্রে নামতে হচ্ছে।

স্পার্ম তিমি

এখানে স্পার্মকে বীর্য ভাবলে পরীক্ষায় শূন্য। স্পার্মের জন্মদাত্রী স্পার্মাসেটি (Spermaceti) শব্দ। স্পার্মাসেটি এসেছে গ্রিক স্পার্মা থেকে, অর্থ বীজ। অর্ধতরল, মোমের মতো পদার্থ। স্পার্ম অয়েলও বলা হয় একে। তিমির মাথায় মেলে বস্তুটি। আরও ভাল করে বললে, তিমির উপরের ঠোঁট থেকে মাথা পর্যন্ত জায়গায় স্পার্ম অয়েল জন্মায়। তিমি মরে গেলে বা মেরে ফেলে বার করে নেওয়া হয় স্পার্ম অয়েল। আলো জ্বালানো ও লুব্রিকেন্টের কাজে লাগে। স্পার্ম তিমি বিরল প্রজাতির, সংরক্ষিত। শিকারিদের টার্গেটও। কারণটা স্পষ্ট: ওই অ্যাম্বারগ্রিস এবং এই স্পার্ম অয়েল।

আরও কয়েকটি কথা বলার লোভ: স্পার্ম তিমির যৌন ক্ষমতা আসে বেশ তাড়াতাড়ি। ৭ থেকে ১৩ বছরের মধ্যেই যৌন ভাবে সক্ষম হয়ে ওঠে। তখনও ব্রেনের পুরো পরিপক্কতা অনেক দূর, তা আসতে আসতে ২৫ থেকে ৪৫ বছর। এরা বাঁচে মোটামুটি ৬২ বছর। পুরুষ স্পার্ম তিমি আকারে মেয়েদের তুলনায় অনেকটাই বড় হয়। এই তিমির দাঁতের মাধুর্য রয়েছে। দন্তরুচি কৌমুদীর দুনিয়ায় খুব নাম এই প্রাণীর। দাঁতালো তিমিদের মধ্যে স্পার্ম তিমিই সবচাইতে বড়, সেই কারণে এর আরেক নাম কেশালো (Cachalot), ফরাসি শব্দ, অর্থ দাঁত বা বড় দাঁত।

এবার অ্যাম্বারগ্রিস

আচ্ছা, অ্যাম্বারগ্রিসের কথাটা উঠল কেন? গত ১৫ দিনে দুটি পৃথক ঘটনায় পাঁচজনকে ৯ কেজি অ্যাম্বারগ্রিস বা তিমির বমি সহ পাকড়াও করেছে মুম্বই পুলিশ। তিমির বমি সমুদ্রের নীচ থেকে তাই ভেসে উঠেছে।

অ্যাম্বারগ্রিসের অন্দরে

ফরাসিতে গ্রে অ্যাম্বার। ফ্লোটিং গোল্ড: এ ন্যাচারাল অ্যান্ড (আনন্যাচারাল) হিস্ট্রি অফ অ্যাম্বারগ্রিস বইয়ের লেখক ক্রিস্টোফার কেম্প অবশ্য এটিকে তিমির বমি বলতে রাজি নন। কারণ: স্পার্ম তিমি হাজার হাজার স্কুইড বিক (অক্টোপাস জাতীয়) খেয়ে থাকে সারা দিনে। মাঝে মাঝে সেই সবই পাকস্থলি ও অন্ত্রের মাঝের জায়গায় গিয়ে জমে। এবং সেই থেকে অ্যাম্বারগ্রিসের জন্ম হয়। অনেক জটিল প্রক্রিয়ায় এই ফসল ফলে। তার পর তিমি তা বার করে দেয় মুখ দিয়ে। অ্যাম্বারগ্রিস কঠিন এবং মোমেলা। তিমির মুখ থেকে বেরিয়ে ভাসতে ভাসতে এসে হাজির হয় সাগর তিরে।

অ্যাম্বারগ্রিসের দাম

সমুদ্রের জলে ভেসে আসে এই দুর্মূল্য বস্তু। তাই ফ্লোটিং গোল্ড বলে একে। দুরন্ত দাম। মুম্বই পুলিশ বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি অ্যাম্বারগ্রিসের দাম এক কোটি টাকা। সুগন্ধীর বাজারে এর গগনচুম্বী চাহিদার জন্যই এমন দাম। দুবাইয়ের মতো কয়েকটি দেশে সুগন্ধীর বিশাল বাজার। অ্যাম্বারগ্রিস সেখানে চাই-ই চাই। কস্তুরী সদৃশ সুগন্ধ তৈরি করে তিমির এই বমি। আপনাকে এর সুঘ্রাস তাজা করে রাখবে দীর্ঘ সময়। হালকা হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে যেন। গায়ে দিয়ে হয়তো আপনার প্রেমে টপাটপ করে পড়তে থাকবে লোকজন। মিশরীয়রা ঘর সুগন্ধিত করার জন্য এটির ব্যবহার করত এক সময়। বেশ কিছু পুরনো ওষুধ তৈরিতেও অ্যাম্বারগ্রিস কাজে লাগে বলে জানা যাচ্ছে।

অ্যাম্বারগ্রিস নিয়ে কোনও আইন রয়েছে?

দামি বস্তু, সহজে মেলেও না (এক শতাংশ স্পার্ম হোয়েল থেকে পাওয়া যায় অ্যাম্বারগ্রিস)। তাই এটি নিয়ে জোরদার কালোবাজারি চলে। বিশেষ করে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ওঁত থাকে চোরাকারবারিরা। স্পার্ম তিমি শিকারীদের হাতে প্রাণও দেয়। স্পার্ম হোয়েল বিরল প্রজাতির, হত্যা নিষিদ্ধ। তিমি মেরে পেট থেকে অ্যাম্বারগ্রিস বার করে নেওয়ার চক্র তবুও কালোবাজারির জন্য বাড়ছে। পুলিশের জালে পড়ছে দুষ্কৃতীরা অনেক সময়, যেমন মুম্বইয়ের ঘটনা।

কালোবাজারি নিয়ে দু'এক কথা

গত ১৫ দিনে দুটি ঘটনায় যে ন'কেজি-র বেশি অ্যাম্বারগ্রিস আটক হল, তার প্রথমটিতে মহামূল্যবান এই বস্তুটি মিলেছিল মুলুন্দ এলাকা থেকে । অ্যাম্বারগ্রিসের পরিমাণ ছিল ২.২ কেজি । আটক হয় এক জন। দ্বিতীয় ঘটনায় লোয়ার প্যারেল এলাকা থেকে ৭.৭ কেজি অ্যাম্বারগ্রিস সহ পাকড়াও দু'জন। অনেকেই বলছেন, গুজরাতের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে এর আবির্ভাব। অনেকে আবার অন্য কিছু বলছে। উৎস খুঁজছে পুলিশ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Explained Whale Vomit
Advertisment