১৫ ডিসেম্বর থেকে দেশের জাতীয় সড়কের টোল প্লাজাগুলিতে টোল গৃহীত হবে কেবলমাত্র ফাস্ট্যাগের মাধ্যমে। টোল প্লাজার বেড়া পার করার সময়ে গাড়িতে লাগানো ফাস্ট্যাগ থেকেই প্রয়োজনী ট্যাক্স কেটে নেওয়া হবে। একটি লেন অবশ্য রাখা হবে, যেখানে সবরকমের গাড়ি নগদ অর্থে টোল দিতে পারবে। গত কয়েক বছরে যেসব নতুন গাড়ি বিক্রি হয়েছে তাতে অবশ্য আগে থেকেই ফাস্ট্যাগ লাগান রয়েছে।
অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ৫৬০টির মত টোল প্লাজায় ট্যাক্স সংগ্রহের জন্য আর কোনও মানুষের প্রয়োজন হবে না, এবং গাড়িকে টোল দেবার জন্য দাঁড়াতেও হবে না। জ্যাম দূর করা এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে টোল সংগ্রহ করা এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন, ভারত-বিরোধী অ্যাপ কেন প্লে স্টোর থেকে তুলে নিল গুগল?
ফাস্ট্যাগ কীভাবে কাজ করে?
এই ডিভাইসে রেডিও ফ্রিকোয়ন্সি আইডেন্টিফিকেশন প্রযুক্তি থাকে যার মাধ্যমে সরাসরি সেভিংস অ্যাকউন্ট বা প্রিপেড পদ্ধতি থেকে টাকা কেটে নেওয়া যায়। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে ফাস্ট্যাগ লাগানো থাকে, ফলে গাড়িকে টোল প্লাজায় দাঁড়াতে হয় না। আরএফআইডি প্রযুক্তি অনেকটা মেট্রো স্মার্ট কার্ডের মত।
ফাস্ট্যাগ যদি ওয়ালেটের মত প্রিপেড অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা থাকে বা ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা থাকে, তাহলে গাড়ির মালিককে ট্যাগ রিচার্জ করতে হবে। যদি ফাস্ট্যাগ সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে ব্যালান্স কমে যাবার পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে। একবার টোল পার হলে, গাড়ির মালিক টাকা কেটে নেবার এসএমএস পাবেন। সেরকম ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটবে প্রি পেড ওয়ালেটের মতই।
একটি ফাস্ট্যাগের মেয়াদ পাঁচ বছর এবং প্রয়োজন মত এটি রিচার্জ করা যাবে।
কীভাবে কেনা যাবে ফাস্ট্যাগ?
আমাজন এবং পেটিএমের মত ই কমার্স পোর্টালগুলি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ফাস্ট্যাগ বিক্রি করছে। ২২টি ব্যাঙ্কের ২৭০০ জায়গা থেকে ফাস্ট্যাগ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। কিনতে পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাউন্টারগুলি প্রায় সবই বিভিন্ন টোল প্লাজা। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফাস্ট্যাগ পাওয়া যাচ্ছে বিনামূল্যে। লড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের দফতর, ট্রান্সপোর্ট হাব, ব্যাঙ্কের শাখা এবং বাছাই করা পেট্রোল পাম্পে কাউন্টার তৈরি করা হয়েছে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফাস্ট্যাগ কিনতে গেলে ১০০ টাকা ওয়ান টাইম ফি দিতে হচ্ছে। সঙ্গে লাগছে ফেরতযোগ্য ১৫০ টাকার সিকিউরিটি ডিপোজিট।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বুথগুলিতে বিনামূল্যে ফাস্ট্যাগ তো দেওয়া হ্চ্ছেই, সঙ্গে অফার হিসেবে ফাস্ট্যাগ লেনদেনের ২.৫ শতাংশ অফার হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। সরকার প্রোমোশনের জন্য এই ক্যাশব্যাক দিচ্ছে। মোবাইলে মাই ফাস্ট্যাগ অ্যাপের NHAI ওয়ালেটের সঙ্গে ফাস্ট্যাগ লিংক করা থাকলে ওই ২.৫ শতাংশ ক্যাশব্যাক ওয়ালেটে ফেরত চলে আসবে। ফলে এই প্রকল্পে কোনও খরচ না করেই ১৫০ টাকা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ব্যাঙ্ক ফেল পড়লে কী হবে?
ফাস্ট্যাগ কিনতে গেলে কী লাগবে, না কিনলে কী হবে?
গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং গাড়ির একটি ছবি থাকলেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফাস্ট্যাগ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। ব্যাঙ্ক অবশ্য অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্র চাইতে পারে।
ফাস্ট্যাগ ছাড়া গাড়ি একবার ফাস্ট্যাগ লেন ঢুকে পড়লেই দ্বিগুণ টোল লাগবে।
টোল রাস্তার কাছে যাঁরা থাকেন, তাঁদের শেষ পর্যন্ত বেশি টোল দিতে হবে?
সরকারের নোটিফিকেশন অনুসারে, টোল প্লাজার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যাঁদের বাস, তাঁরা ফাস্ট্যাগ ব্যবহার করে টোল দিলে ছাড় পাবেন। তাঁদের বাসস্থানের ঠিকানার প্রমাণপত্র দিতে হবে এবং নিকটতম পয়েন্ট অফ সেলের লোকেশন জানাতে হবে। একবার ঠিকানা ভেরিফাই করা হয়ে গেলে গাড়িতে লাগানো ফাস্ট্যাগে কনসেশন পাওয়া শুরু হয়ে যাবে।
বিষয়টি মসৃণভাবে কাজ করবে তো?
ব্যাঙ্ক যে ট্যাগ বিক্রি করছে তা ব্যাঙ্ক নিরপেক্ষ নয়। একটি ব্যাঙ্ক থেকে কেনা ফাস্ট্যাগ কেবলমাত্র ওই নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকেই রিচার্জ করা যাবে। তবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যে ফাস্ট্যাগ বিক্রি করছে সেগুলি ব্যাঙ্ক নিরপেক্ষ। যে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থেকেই এই ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করা যাবে।
আধিকারিকরা অবশ্য আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তি নিয়ে। ব্যবহারকারীদের অভিযোগ অনেক সময়েই মেশিন ফাস্ট্যাগ রিড করতে পারছে না। এসএমএস-ও অনেক দেরিতে আসছে বলে অভিযোগ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং তাদের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান হাইওয়ে ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (IHMCL) জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের নির্দেশ মোতাবেক টোল প্লাজার এই সমস্যা দূর করতে নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে। মন্ত্রকের আধিকারিকরা বলেছেন বিষয়টির দেখভালের দিকেও নজর দিয়েছেন।
ফাস্ট্যাগ সম্পর্কিত অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি টোল ফ্রি হেল্পলাইন নাম্বারও (১০৩৩) চালু হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে হেল্পলাইন হল ihmcl.com। এ ছাড়া My FASTag অ্যাপেও কাস্টমার কেয়ারের লিংক দেওয়া থাকছে।
ফাস্ট্যাগের আইডিয়া এল কোথা থেকে?
জাতীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়করি এ আইডিয়া পেয়েছিলেন নোটবন্দির পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার ধারণা থেকে। সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে ফাস্ট্যাগ জনপ্রিয় করবার চেষ্টা করে চলেছে। টোল পেমেন্টের আওতায় এনে ফেললে সকলকে ফাস্ট্যাগ ব্যবহারে বাধ্য করা যাবে বলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত কয়েকদিনে ফাস্ট্যাগের বিক্রি বহুল পরিমাণে বেড়েছে।
জুলাইয়ে দৈনিক বিক্রি ছিল ৮০০০-এর মত। নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার।
রাজ্য সড়কের ক্ষেত্রে কী হবে?
এক দেশ এক ফাস্ট্যাগ প্রকল্পের আওতায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ চাইছে রাজ্যগুলিকেও এর আওতায় নিয়ে আসতে। সম্প্রতি কর্নাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, হরিয়ানা কেন্দ্রের সঙ্গে একটি মউ স্বাক্ষর করেছে। ওই মউয়ে বলা হয়েছে রাজ্য সড়কগুলিতেও ফাস্ট্যাগ অনুমোদন করা হবে।
বিক্রয় কেন্দ্র
২২টি ব্যাঙ্ক
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই, আইডিএফসি, স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি, কারুর বৈশ্য ব্যাঙ্ক, ইকুইটাস স্মল ফিনান্স ব্যাঙ্ক, পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্ক, কোটাক মহীন্দ্রা, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক, ফেডারেল ব্যাঙ্ক, সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙক, সারস্বত ব্যাঙ্ক, ফিনো পেমেন্টস, সিটি ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, ইন্ডাসইন্ড, ইয়েস ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, নাগপুর নাগরিক সহকারী ব্যাঙ্ক, এয়ারটেল পেমেন্টস ব্যাঙ্ক।